×

জাতীয়

মুজিব-ইয়াহিয়া দেড়শ মিনিট বৈঠক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৩, ০৮:১৫ এএম

মুজিব-ইয়াহিয়া দেড়শ মিনিট বৈঠক

ফাইল ছবি

ডেটলাইন ১৬ মার্চ, সকাল। ধানমন্ডির বাড়ি থেকে বের হলো বঙ্গবন্ধুর মাজদা গাড়ি। শোক আর প্রতিবাদের প্রতীক কালো পতাকা উড়ছে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ডে, আর উইন্ডস্ক্রিনে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পতাকা। এভাবেই লাখো বাঙালি হত্যার প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বঙ্গবন্ধু। মূলত পাক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে গত কয়েক দিনে এ দেশে পাক সেনারা যা ঘটিয়েছে তার প্রতিবাদ। এবং আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধান না এলে চূড়ান্তভাবে গাঢ় সবুজের পটভূমিতে লাল সূর্যের বুকে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা পতাকা উড়বে।

এদিকে সকাল থেকেই উৎসুক জনতা অপেক্ষা করছিল বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া খানের বৈঠকের ফল কী হয় তা জানতে। এক হাতে কালো পাইপ, অন্য হাতটি তিনি নাড়ছেন জনতার উদ্দেশে। সংকট নিরসনের আন্তরিক আশা নিয়ে তিনি বসেছেন প্রেসিডেন্ট হাউসে ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক করতে। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া বৈঠকটি শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের জানান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরো আলোচনা হবে। তবে ইয়াহিয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

পাক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক সম্পর্কে সংবাদপত্রে প্রধান শিরোনামে লেখা হয়- ‘সাড়ে সাত কোটি মুক্তিকামী বাঙালির অপ্রতিদ্ব›দ্বী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় নীতি ও শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে দেড়শ মিনিট কাল স্থায়ী এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন।’ একজন চাইছেন আলোচনার মাধ্যমে সমাধান, অন্যজনের মনে গণহত্যার ছক আঁকা ছিল। একজনের মনে স্বাধীনতার মন্ত্র, অন্যজনের মনে সব নির্মূল করার বাসনা।

১৬ মার্চ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আলোচনার পাশাপাশি সারাদেশে আন্দোলন বাঁধভাঙা রূপ নেয়। রাজপথ মিছিলে মিছিলে উত্তপ্ত করে রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও। দেশের অসহযোগ আন্দোলনের ১৬তম দিনে বঙ্গবন্ধুর নতুন নির্দেশ এলো- এখন থেকে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক কেন্দ্রের শুল্ক, কর, আবগারি কর ও বিক্রয় কর গ্রহণ করবে। কিন্তু এসব কর স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে জমা দেয়া হবে না। এভাবেই অসহযোগ আন্দোলন তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়। এ সময় মওলানা ভাসানী ময়মনসিংহের জনসভায় দাবি করেন- ‘বাংলাদেশের পাওনা বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিন।’ চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বুদ্ধিজীবীদের সভায় আবুল ফজল, সৈয়দ আলী আহসান, ড. আনিসুজ্জামান প্রমুখ অসহযোগ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

পাক হানাদাররাও এগোচ্ছিল। সাতক্ষীরার মিছিলে গুলি চালিয়ে মানুষ মারা, দেশের মানুষকে অনাহারে মারার চক্রান্ত করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা চার জাহাজবোঝাই গম চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না করে করাচি পাঠিয়ে দেয়া তারই উদাহরণ। দেশের সর্বত্র উড়ছিল কালো পতাকা। গড়ে উঠতে থাকে সংগ্রাম কমিটি। সব বয়স, সব পেশা ও শ্রেণির মানুষ বেরিয়ে আসতে থাকে রাজপথে। স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত বঙ্গবন্ধুকে আরো উজ্জীবিত করতে রাস্তায়, মাঠে-ময়দানে তখন গণসংগীত, নাটক, পথনাটক ও পথসভা করে চলছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বেতার-টেলিভিশন শিল্পী সংসদ, মহিলা পরিষদ প্রভৃতি সংগঠন। হাইকোর্টের আইনজীবী, বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করতে থাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App