×

সারাদেশ

নছিরা খাতুনের বসতভিটায় ভূমিদস্যুদের থাবা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৯ পিএম

নছিরা খাতুনের বসতভিটায় ভূমিদস্যুদের থাবা

ছবি: ভোরের কাগজ

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি গ্রামে এক জীর্ণ কুঠিরে বসবাস করেন নছিরা খাতুন নামে এক বয়োবৃদ্ধ ও বিধবা নারী। অনেক আগেই স্বামী হারিয়েছেন। সন্তানরাও খবর নেয় না। সরকারি ভাতা আর বসতভিটার আশপাশ ও দশ শতক ফসলি জমিতে রবিশস্য চাষাবাদ করেই তার আহার জুটে। বার্ধক্যজনিত অনেক রোগে ভুগলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এমন অসহায় নারীর সম্পদেও কু-দৃষ্টি পড়েছে ভুমিদস্যুচক্রের।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, স্বামী আসলাম মিয়া ও সন্তানদের উপার্জনে ভালোই দিন কাটছিল নছিরা খাতুনের। দু’বছর আগে করোনাকালে স্বামীর মৃত্যু ও সন্তানদের পৃথক হওয়ার পর থেকে নছিরা খাতুনের জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। তবুও পরিশ্রমী নছিরা কোনভাবে দিনাতিপাত করছেন। তার তিন শতক জমি খতিয়ান সৃজন করে দখলের পাঁয়তারা করছেন প্রতিবেশী মোহাম্মদ এছাকের ছেলে মোহাম্মদ আলী। এছাড়া তার ফসলি জমির উপর দিয়ে রাস্তা করে দখলে নেয় অপর প্রতিবেশী মিঝি বাড়ির নজির আহম্মদের ছেলে মোমিনুল হক। ২০২২সালের জুন মাসে চিকিৎসার জন্য এক শতক জমি বিক্রি করেন নছিরা খাতুন। খবর পেয়ে তার ঘরের বেড়া কেটে জমি বিক্রির দুই লক্ষ টাকা ও মুল্যবান মালামাল, দলিলপত্র ও অসবাপত্র লুট করে দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় সে তার ছেলে নুর ইসলাম জসিম ও প্রতিবেশী মিঝি বাড়ির নজির আহম্মদের ছেলে মোমিনুল হককে দায়ী করে থানায় অভিযোগ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মোমিনুল ও তার ছেলে মারুপ বারবার নছিরা খাতুনের উপর হামলা করেন। লুট ও হামলার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে আদালতে অভিযোগ দেন তিনি। এসব মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না হওয়ায় তারা আরো চড়াও হয় নছিরা খাতুনের উপর। সবশেষ তাকে ঘরছাড়া করে তার বসতভিটা ও জমি দখলের পাঁয়তারা করছে ওইসব ভুমিদস্যু চক্র। ভুক্তভোগী নছিরা খাতুন বলেন, আমার ক্রয়কৃত জমিতে রাস্তা বানিয়ে দখলের চেষ্টা করছে মোমিনুল হক ও তার ছেলে মারুপ। বাধা দেয়ায় আমার ঘরে লুট করিয়েছে আমার ওপর বারবার হামলা করেছে। তারা আমাকে হাড়-ভাঙা জখম করেছে। প্রাণনাশের হুমকি ও গ্রামছাড়া করার হুমকি দিয়েছে। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু টাকার কারণে মামলা রেকর্ড হয়নি। তাই ফেনী আদালতে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে মামলা দিয়েছি। আসামিরা জামিনে গিয়ে আবারো আমাকে হত্যা করে বাড়িঘর দখলের হুমকি দিচ্ছে। আমার ছেলের সাথে আতাত করে আমাকে গ্রামছাড়া করার পাঁয়তারা করছে। এছাড়া আমার তিন শতক জমি খতিয়ান সৃজন করে দখলের চেষ্টা করছে প্রতিবেশী এছাকের ছেলে মোহাম্মদ আলী। আমি সমাজ কমিটি, বোর্ড অফিস ও থানায় জানিয়েছি কিন্তু কোথাও বিচার পাইনি।

তিনি আরো বলেন, এই ভুমিদস্যুদের অত্যাচারে এর আগে আমার প্রতিবেশী আবুল কাশেমের মেয়ে গ্রামছাড়া হয়েছে। তাকে গ্রামছাড়া করার পর তার জায়গা-জমি ওরা দখল করেছে। এছাড়া তাবিজ আর বান-টোনা দিয়ে মানুষকে হয়রানি আর প্রতারণা করে জবরদখলবাজ মোমিনুল হক।

জরবদখলের বিষয়টি অস্বীকার করে মোমিনুল হক বলেন, নছিরা খাতুন পাশের বাড়ির আবদুল মান্নান মিকারের কাছ জমি কিনেছেন। আমিও একই মালিকের কাছ থেকে জমি কিনেছি। তার জমি কম হলে সে মালিকের সাথে কথা বলবে আমার সাথে বিরোধ করার কিছুই নেই। সে বারবার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে তাই কোন মামলায় সে জিতবে না।

টাকা ও দলিল লুটের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলের নামে মামলা দিয়েছে তাই এ ব্যাপারে আমার কিছুই বলার নেই।

মঙ্গলকান্দি সমাজ কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, বিরোধের বিষয়ে নছিরা খাতুন অবহিত করেছেন। তবে সালিসী বৈঠকে কোন পক্ষ বসতে রাজি না হওয়ায় আমরা কর্ণপাত করিনি।

ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, উভয়পক্ষ সমাজ ও পঞ্চায়েত মানে না। তাই আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তবে নছিরা বেগমের সাথে যে অন্যায় করা হচ্ছে তার শাস্তির ব্যবস্থা করবেন আদালত।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ হোসেন বলেন, গত ২৯ নভেম্বর নছিরা খাতুনের ওপর হামলা হয়েছে, সে ঘটনায় তিনি পরদিন একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেটা তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট নাছির উদ্দিন বাহার বলেন, নছিরা খাতুন সর্বহারা এক অসহায় নারী। তার মুল্যবান তের শতক বসতভিটা ও জমিতে একটি সংঘবদ্ধ ভুমিদস্যু চক্রের কু-দৃষ্টি পড়েছে। যেভাবে হোক তাকে সরাতে পারলে ওই চক্রটি এই সম্পদের মালিক হবেন। এ জন্য নছিরা খাতুনকে সব ধরনের পীড়া, নির্যাতন ও হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় সমাজপতি ও প্রশাসন তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে যেকোন ধরনের অঘটন ঘটতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App