×

আন্তর্জাতিক

পশ্চিমবঙ্গে বঙ্গ রঙ্গমঞ্চের সার্ধশতবার্ষিকীতে আন্তর্জাতিক আলোচনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৩, ১০:৫৩ পিএম

পশ্চিমবঙ্গে বঙ্গ রঙ্গমঞ্চের সার্ধশতবার্ষিকীতে আন্তর্জাতিক আলোচনা

ছবি: ভোরের কাগজ

পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট কলেজে সত্যজিৎ সভাকক্ষে কলেজের বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগ এবং পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে গত ১৪ মার্চ মঙ্গলবার বেলা ১২টায় আয়োজন করে ‘বঙ্গ রঙ্গমঞ্চের সার্ধশতবর্ষ’ শীর্ষক এক দিবসীয় আন্তর্জাতিক আলোচনা সভা। বাংলা বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক কবি ড. অদীপ ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত কবি ও নাট্যকার ফরিদ আহমদ দুলাল। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ও উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন কলেজের অধ্যক্ষ ড. অশোক কুমার মণ্ডল। নান্দীমুখ বক্তৃতায় অংশগ্রহণ করেন বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. রাজ কুমার দাস। বিষয় নিয়ে সূচনা বক্তৃতা করেন পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সোমা ভদ্র রায়। বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. রাজ কুমার দাস ও পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সোমা ভদ্র রায় সামাজিক জাগরণে নাটকের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুজয় কৃষ্ণ চক্রবর্তী। ড. সোমা পাল চাকীর সঞ্চালনায় প্রধান আলোচকের বক্তৃতায় কবি-নাট্যকার ফরিদ আহমদ দুলাল বাংলাদেশের নাট্যচর্চার আদ্যপান্ত তুলে ধরেন।

নাট্যচর্চায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতা উত্তর সময়ে বঙ্গবন্ধু নাটক প্রদর্শনীর ওপর প্রমোদকর তুলে দিয়ে নাট্যকর্মীদের প্রাণিত করেন; পরবর্তী সময়ে তিনি নাটকে সেন্সরশিপ প্রথা বাতিল করে নাট্যচর্চার পথ সুগম করেন।

তিনি আরো বলেন, ঐতিহাসিক বাস্তবতায় ১৯৭১-এ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে ত্রিশ লক্ষ মানুষের বুকের রক্ত দিয়ে ভাষাভিত্তিক যে জাতিরাষ্ট্র গঠন করেছিলাম, সেই রাষ্ট্র গঠনে বাঙালির স্বপ্ন জড়িয়ে ছিলো; বাঙালির চোখে চোখে সে স্বপ্ন জুড়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু; বাঙালিকে স্বশাসিত হবার স্বপ্নে যুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু তাঁর লড়াই-সংগ্রাম এবং দেশপ্রেমের পরীক্ষায় নিজের নিরঙ্কুশ সামর্থকে প্রমাণ করেছিলেন। তিনি আমাদের বোঝাতে পেরেছিলেন, স্বাধীনতা মানে কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়; রাজনৈতিক শৃঙ্খল মুক্তির পাশাপাশি তিনি চেয়েছিলেন সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্তি; তিনি চেয়েছিলেন বাঙালির সাংস্কৃতিক মুক্তি; ধর্মান্ধতা-কূপমণ্ডূকতা থেকে মুক্তি; তিনি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন বাঙালির আবহমান কালের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমাজের সর্বস্তরে নিশ্চিত করতে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলেই বাঙালি শত বর্ষের বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবে; কিন্তু ধর্মান্ধ গোষ্ঠী দেখেছে, বাঙালির যদি সাংস্কৃতিক মুক্তি ঘটে, তাহলে বাঙালিকে আর ধর্ম ও কূপমণ্ডূকতার অন্ধকারে রাখা যাবে না। সে কারণেই ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয় নৃশংসভাবে; আর বাঙালির মুক্তির পথ অবরুদ্ধ করে দিতে চায়! প্রশ্ন হচ্ছে, ধর্মান্ধ গোষ্ঠী কি ব্যর্থ হয়েছে?- না, তারা একেবারেই ব্যর্থ হয়নি, তারা বরং অনেকাংশেই সফল হয়েছে! তাদের ষড়যন্ত্রের কারণেই আজ আমাদের সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ আর ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দ দুটি অপসারিত হয়ে গেছে! বাঙালির জীবন থেকে সদাচার সরিয়ে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ আর ‘সমাজতন্ত্র’ নামের আধুনিক চিন্তাকে সরিয়ে যেভাবে আজ বাঙালিকে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে আচ্ছন্ন করা হয়েছে, তা থেকে মুক্তি পেতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণ সময়ের দাবি হিসেবেই জরুরি হয়ে পড়েছে! সাংস্কৃতিক জাগরণের পূর্বশর্ত হিসেবে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, শৌর্য-বীর্য ও গৌরবের দিকে ফিরে তাকানো প্রয়োজন। বাংলা রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠার সার্ধশত বর্ষ উদযাপনের স্মৃতিতর্পণের মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের পুনর্জাগরণের সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে পারি। বাংলাদেশে নাট্যচর্চার ইতিহাস আলোচনার মাধ্যমে সামাজিক জাগরণে নাটকের ভূমিকার কথা স্মরণ করতে পারি।

‘বঙ্গ রঙ্গমঞ্চের সার্ধশতবর্ষ’ উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বসিরহাট কলেজের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ সে সত্যকেই আমাদের সামনে তুলে এনেছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ১৯৭১-এ ভারতীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো, আমি বিশ্বাস করতে চাই আজও আপনারা সেভাবেই আমাদের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণে পাশে দাঁড়াবেন!

সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের নতুন যুদ্ধে যুক্ত হবার জন্য ফরিদ আহমদ দুলাল নতুন প্রজন্মের যোগ্য-সাহসী তরুণ-তরুণীদের নাট্যচর্চায় সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App