×

মুক্তচিন্তা

ড. ইউনূস সম্পর্কে চিঠি এবং লাভ ও লোভের ‘দৃশ্যমান হাত’

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৩, ০১:২৭ এএম

প্রফেসর ড. ইউনূস সম্পর্কে নেপালের অর্থ সারোকার এবং বাংলাদেশের দ্য বিজনেস পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনাম- ‘প্রফেসর ড. ইউনূস : দ্য মেটেওরিক ফল অব অ্যা নোবেল লরিয়েট’ অর্থাৎ ‘অধ্যাপক ড. ইউনূস : নোবেল বিজয়ীর উল্কা পতন’। এই সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ২০২২ সালের শেষের দিকে। এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ২০২৩ সালের প্রথম দিকে ওয়াশিংটন পোস্টে ড. ইউনূস সম্পর্কে ৪০ জন বিশ্ব নেতা কর্তৃক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। যা বাংলাদেশের একটি ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। নিজ স্বার্থ, সমাজের উপকার এবং ব্যক্তির লাভের অদৃশ্য হাত সম্পর্কে স্কটিশ আলোকিত চিন্তাবিদ অ্যাডাম স্মিথ অনেক আগেই জুতসই ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছিলেন। প্রথমে ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে ‘দ্য থিওরি অব মরাল সেন্টিমেন্টস’-এ এবং পরে ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘অ্যান ইনকোয়ারি ইন টু দ্য নেচার এন্ড কজেজ অব দ্য ওয়েলথ অব ন্যাশনস’ শীর্ষক আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ দুটিতে এ সম্পর্কে বক্তব্য ও ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। মুনাফার অদৃশ্য হাত কীভাবে ব্যক্তির স্ব-স্বার্থ সমাজের বাকি অংশকে প্রভাবিত/উপকৃত করে এর ব্যাখ্যাই স্মিথ তখন দাঁড় করিয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে এটি পুঁজিবাদী ব্যাখ্যা। পরবর্তীকালে এই তত্ত্বের অনেক সমালোচনা বা পর্যালোচনা হয়েছে। কিন্তু মুনাফার অদৃশ্য হাতের ধারণা এই একবিংশ শতাব্দীতেও বিভিন্ন প্রসঙ্গে ব্যাখ্যার সময় ঘুরেফিরে আসে। ড. ইউনূস সম্পর্কে অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৪০ জন বিশ্ব নেতার খোলা চিঠি পড়েও ‘মুনাফার অদৃশ্য হাত’ শব্দবন্ধের কথা যুক্তিসঙ্গত কারণেই এসে যায়। যদিও এর বিনিময়ে যে উপকারের কথা স্মিথ বলেছিলেন তার অস্তিত্ব দৃশ্যমান নয়। দৃশ্যমান শুধু ব্যক্তির লাভ এবং লোভ। এই চিঠিতে ড. ইউনূসকে ‘বিশেষ করে অতি দরিদ্র ও সবচেয়ে বিপদাপন্ন মানুষদের জন্য তার অবদানে’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই চিঠিতেই গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ৯০ লাখের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু চিঠি প্রেরকরা এটি বিবেচনা করেননি যে প্রফেসর ইউনূস নিজের স্বার্থে বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় অবৈধভাবে তহবিল স্থানান্তর করেছেন বলেও ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সালে টম হেইনম্যানের একটি ড্যানিশ ডকুমেন্টারি ‘ক্ষুদ্র ঋণে ধরা’ (কট ইন মাইক্রো ডেব্ট)-তে ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে নরওয়েজিয়ান এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (নোরাড) বাংলাদেশে দরিদ্রদের আবাসন সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে ব্যাংককে দেয়া ঋণের জন্য প্রদান করা প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ আদায়ের ভয়াবহ কৌশল এই সংস্থাটির ‘লাভ’ এবং লোভের অদৃশ্য হাতের কথাই মনে করিয়ে দেয়। তবে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে প্রফেসর ড. ইউনূসের লাভ ও লোভের বিষয়টি ‘দৃশ্যমান’। এটি আর অদৃশ্য নেই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারের গৃহীত কর্মসূচি কল্যাণমুখী এবং এর পেছনে মুনাফার কোনো অদৃশ্য হাত থাকে না, যা গ্রামীণ ব্যাংকসহ এ ধরনের ঋণদান সংস্থাগুলোর থাকে। সরকারের গৃহীত কর্মসূচির কারণেই এখন বাংলাদেশের দারিদ্র্য মিউজিয়ামে যাওয়ার পথে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার হচ্ছে দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করা। সরকার তাই করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি একসময় দারিদ্র্য দূর করার প্রচেষ্টার জন্য দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছিলেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করার জন্য বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করা থেকে শুরু করে কর ফাঁকি, দাতা তহবিলের অবৈধ স্থানান্তর, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিদেশ ভ্রমণ বিধি লঙ্ঘন প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশে তার বিতর্কিত ভূমিকার ফলে তার খ্যাতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে প্রফেসর ইউনূসকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশে সম্মান করা হয়েছিল, যদিও তার সংগঠনটি রহস্যজনক সাংগঠনিক কাঠামোর কারণে অসংখ্য অনুসন্ধান ও অভিযোগের বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। প্রফেসর ইউনূস গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় এই মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে (গ্রামীণ টেলিকম) উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেন। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে লাখ লাখ গ্রামীণ মহিলাকে ক্ষুদ্র-অর্থায়ন ঋণ প্রদানের ধারণার জন্য তিনি ২০০৬ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গ্রামীণ টেলিকম (জিটি) এবং এর পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ৩ হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মামলায় তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অপব্যবহার; আইনজীবীদের ফি এবং শ্রমিকদের বেতন থেকে অন্যান্য চার্জ হিসাবে ৬ শতাংশ অবৈধভাবে কাটা; কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল থেকে ৪৫.৫২ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ এবং কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচার করা। নোবেল বিজয়ী এবং তার সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ ও তদন্ত নতুন নয়। ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য ড. ইউনূস এবং অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ কর্তৃক শ্রম আইনের ধারা ৪, ৭, ৮, ১১৭ এবং ২৩৪-এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন যে তার প্রতিষ্ঠিত একটি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শ্রম আইন ভঙ্গ করেছে। এছাড়া সম্প্রতি ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে একটি চমকপ্রদ অভিযোগ উঠেছে যে তিনি তার বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকম ইউনিয়ন শ্রমিক ও কর্মচারীদের দায়ের করা ১১০টি মামলা ২৫০ মিলিয়ন টাকায় বেআইনিভাবে নিষ্পত্তি করেছেন। ২০১৫ সালেও তিনি বিতর্কিত হয়েছিলেন যখন বাংলাদেশের রাজস্ব কর্তৃপক্ষ ১.৫১ মিলিয়নেরও বেশি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ কর পরিশোধ না করার জন্য তাকে তলব করেছিল। প্রফেসর ইউনূসের খারাপ বৈশিষ্ট্যের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর না দেয়ার কারণে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত। মার্চ ২০১১ সালে ইউনূসকে দেশের অবসর আইনের লঙ্ঘন করে ব্যাংকের সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করার অনুরোধ করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছে যে অবসরের বয়স ৬০। ইউনূসের বয়স তখন ৭০ বছর। সরকার তাকে ‘উপদেষ্টা ইমেরিটাস’ হিসেবে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়, কিন্তু তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আইনি লড়াইয়ে হেরে যান তিনি। দুর্ভাগ্যক্রমে তারপর তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে তার অবস্থান পুনরুদ্ধার করার জন্য বিদেশি শক্তি, বিশেষ করে আমেরিকা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের আইনপ্রণেতা, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী চেরি ব্লেয়ারকে লবিং করে তার পক্ষে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য সরকারকে চাপ দেন। খুব বাস্তব অর্থে, একজন নোবেল বিজয়ী তার ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্য একাধিক বিদেশি দেশ এবং সংস্থার সাহায্যের জন্য আবেদন তার দেশপ্রেমকে ঠিক প্রতিফলিত করে না। দেশের সর্ববৃহৎ কাঠামো পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কুৎসিতভাবে অস্বীকৃতি জানানোর পেছনে ড. ইউনূসের হাত ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যাহার করার সময় বিশ্বব্যাংক সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি নিয়ে অনেক শোরগোল করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১৭ সালে কানাডার একটি আদালত কর্তৃক কথিত দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করার সময় বাংলাদেশ এটিকে একটি ষড়যন্ত্র বলে মনে করে। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট ব্রুস জোয়েলিকস দাবি করেন যে ঋণ বাতিল করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বাংলাদেশ এর অংশীদার দেশগুলোর এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কখনো ঋণ খেলাপি হয়নি। এটি স্পষ্ট যে একটি চক্রান্ত চলেছিল এবং এখনো চলছে। অবশেষে জানা গেল যে জোয়েলিককে বিশ্বব্যাংকের সভাপতি হিসাবে তার শেষ কার্যদিবসের শেষ মুহূর্তে অর্থায়ন বাতিল করার সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূস আরো বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন যখন কিছু অর্থনীতিবিদ তাকে উচ্চ সুদের হারে দরিদ্রদের ‘রক্ত চোষা’ করার অভিযোগ তোলেন। ক্ষুদ্রঋণ নিরীক্ষণকারী সংস্থা পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ডক্টর কাজী খলিকুজ্জমান আহমেদ ক্ষুদ্রঋণকে বাংলাদেশের দরিদ্রদের জন্য ‘মৃত্যুর ফাঁদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ২০০৭ সালে যখন একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন বাংলাদেশি সেনাবাহিনী দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল, তখন ড. ইউনূস একটি বিপজ্জনক রাজনৈতিক ঘোড়ায় আরোহণ করেছিলেন। যখন দেশে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ছিল, তখন তাকে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে তার কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূস দেশের রাজনীতির ‘সংস্কার’ করার জন্য একটি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য দেশবাসীর সমর্থন চেয়েছিলেন। যাই হোক, জনগণ তার দলকে প্রতিহত করেছিল এবং পর্দার অন্তরালে কৌশল এবং জঘন্য চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের তার পরিকল্পনাকে প্রতিহত করেছিল। নোবেল বিজয়ী এখন স্পষ্টতই সংবিধানকে অবমূল্যায়ন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে অর্থহীন হবে বলে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। আরো দুঃখের বিষয় হচ্ছে বর্তমান সরকারের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণকারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বেগম-শিক্ষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে করা পিএইচডি অভিসন্দর্ভে স্পষ্টভাবে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়’ উল্লেখ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করেছেন। যা হোক, এটা দুঃখজনক যে ড. ইউনূসের মতো বৈশ্বিক খ্যাতির একজন ব্যক্তি নিজেকে একটি ব্যাংকের মালিকানার বিষয়ে একটি রাজনৈতিক জোটের সমর্থক হিসেবে প্রকাশ করেছেন। এটা দুর্ভাগ্য, নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে কখনোই কোনো বিজয়ী ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার জন্য পুরস্কারের মর্যাদা নষ্ট করেননি। অপর পক্ষে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত মানুষ’ রোহিঙ্গাদের রক্ষায় ড. ইউনূস সামান্যই আগ্রহ দেখিয়েছেন। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে ড. ইউনূসকে অবশ্যই পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে এবং বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থি কোনো বিতর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে। ড. অরুণ কুমার গোস্বামী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App