×

সারাদেশ

এনজিও সাসের নেই স্কুল ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থী, হরিলুট অব্যাহত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৩, ০৬:২০ পিএম

এনজিও সাসের নেই স্কুল ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থী, হরিলুট অব্যাহত

ছবি: ভোরের কাগজ

এনজিও সাসের নেই স্কুল ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থী, হরিলুট অব্যাহত

ছবি: ভোরের কাগজ

এনজিও সাসের নেই স্কুল ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থী, হরিলুট অব্যাহত

ছবি: ভোরের কাগজ

এনজিও সাসের নেই স্কুল ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থী, হরিলুট অব্যাহত

ছবি: ভোরের কাগজ

এনজিও সাসের নেই স্কুল ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থী, হরিলুট অব্যাহত

ছবি: ভোরের কাগজ

নেই স্কুল, নেই কোন ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। নেই আসবাবপত্র, উপকরণ সরবরাহের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান। নেই কোন ঠিকাদার। আছে মাত্র কয়েকটি নিম্নমানের নোংরা পরিবেশে ভাড়া ঘর। অফিস রেজুলেশনের মাধ্যমে ঘর ও উপকরণ সামগ্রীতে লুটতরাজ চালিয়ে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থার (সাস) কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা হজমসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জেলার ৬টি উপজেলায় ৪২০টি কেন্দ্রে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এনজিও’র কর্মকর্তারা। কাগজে কলমে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও বাস্তবে দৃশ্যপট একেবারে উল্টো।

করোনাকালীন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদানের লক্ষ্যে ২০২০ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের শিক্ষা প্রকল্প-৪ ‘ড্রপ আউট অফ স্কুল স্টুডেন্ট এডুকেশন’ শিক্ষা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দয়িত্ব পায় অনিয়ম ও দূর্নীতির শিরোমনি সাস এনজিও। চলমান ২২ কোটি টাকার প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্যে মগ্ন জেলার উপ-পরিচালক সরোজ কুমার দাস (ভারপ্রাপ্ত) ও সুকৌশলী ইমান আলী।

[caption id="attachment_414626" align="alignnone" width="1593"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

সরেজমিনে ২০ মাস দেরিতে জগাখিচুড়ির মধ্যদিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন। কেন্দ্র, আসবাবপত্র ও উপকরণ সরবরাহের জন্য গোপনে নাম সর্বস্ব একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ না করে নিম্নমানের নোংরা পরিবেশে ঘর ভাড়া করা হয়েছে। যে কারণে কেন্দ্রগুলো অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। ঘর নির্মাণ ও উপকরণ সামগ্রীতে লুটতরাজ চালিয়ে সাসেরর কর্মকর্তারা অফিস রেজুলেশনের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে।

আরো জানা যায়, ছয়টি উপজেলায় তিন ভাগের একভাগও কেন্দ্র নেই। যেগুলো আছে বেশিরভাগ কেন্দ্রের শিক্ষক/সহায়ক শিক্ষার্থী পাঠদান না থাকায় গরু, ছাগল, হাঁস মুরগির খামারে রুপ নিয়েছে। যেসব ছাত্রছাত্রী এখানে ভর্তি করা হয়েছে প্রায় সব পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। ৮ থেকে ১৪ বছরের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদানের নির্দেশনার পরোয়া না করে ৫/৬ বছরের শিক্ষার্থীও ভর্তি করা হয়েছে। যার কারণে কেন্দ্রগুলোতে ৩/৪ জনের বেশি শিক্ষার্থী আসে না। আর যারা আসে তারা পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে চলে যায়। সাতক্ষীরা সদরসহ তালা, কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলায় একই অবস্থা। অথচ প্রতি তিন মাস পরপর সাস, কেন্দ্র প্রতি সমুদয় টাকা উত্তোলন করছে। সরোজ কুমার দাসের সহযোগিতায় সরকারের টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে এই এনজিও। এভাবে এগিয়ে চলেছে সাতক্ষীরায় ড্রপ আউট অফ স্কুল স্টুডেন্ট এডুকেশন শিক্ষা প্রকল্প।

এদিকে, জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কার্যালয় সূত্র বলছে, সরকার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অর্থায়ণে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া সকল শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ৮ থেকে ১৪ বছরের ছেলেমেয়েদের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রকল্প-৪ কার্যক্রম’ বাস্তবায়নে ২০২০ সালে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) অনুমতি পায়। নির্ধারিত সময়ের ২০ মাস পরে ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ সালে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের জগাখিচুড়ি কার্যক্রম শুরু করেন।

[caption id="attachment_414627" align="alignnone" width="1200"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

আরো জানা যায়, জেলা সদরসহ ছয়টি উপজেলায় ৪২০টি কেন্দ্রে ১২ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থীর তালিকা তৈরি করে করে এনজিও সাস প্রকল্পটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের মেয়াদ ৪২ মাস হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে প্রকল্পটি স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।

ওদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এই তথ্য অস্বীকার করে বলেছে করোনা কালীন সময়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী দেড় হাজারের মধ্যে। অথচ এনজিও সাস এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জরিপ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিয়েছে জেলার ছয়টি উপজেলায় সাড়ে ১২ হাজারের বেশি ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সের ঝরে পড়া শিক্ষার্থী রয়েছে। যে কারণে এই প্রকল্প নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল।

উপজেলার বিভিন্ন থেকে এলাকা থেকে রুবেল, হাফিজুল, রহিমা, বিপুল, গোপালসহ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, খাতায় ছাত্রছাত্রী দেখালেও প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের এখানে ভর্তি করা হয়েছে। ৫/৬ বছরের বাচ্চাদেরও দেখা যায়। যার কারণে কেন্দ্রে ৩/৪ জনের বেশি শিক্ষার্থী আসে না। কেন্দ্রগুলোতে ক্লাস হয় না, শিক্ষার্থীও আসে না। যে কয়জন আসে তারা পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী।

অভিভাবক সালাহ, আক্তার, সেলিম, মিঠু, জাহানারা, কর্ত্তিকসহ অনেকে জানান, ভর্তির সময় তাদের বাচ্চাদের অনেক কিছু দেয়ার আশ্বাস দেয় সাস কর্মকর্তারা। কিন্তু শুধু বই আর খাতা দিয়েছে। কোন কাপড়-চোপড় কিংবা ব্যাগ এখনও তারা দেয়নি।

[caption id="attachment_414628" align="alignnone" width="1600"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

বাচ্চাদের বয়স জানতে চাইলে বলেন, ৫/৬ বা ৭ হতে পারে। এনজিও ভাই/আপারা কেউ আসে না, স্কুলও হয় না বলেও জানান তারা।

বিভিন্ন উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা বলেন, আমাদের অনেক ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের স্কুলে ভর্তি করেছে। এখন তারা ৫/৬ বছরের বাচ্চাদেরও তাদের স্কুলে ভর্তি করছে। শুনেছি ঝরে পড়া বাচ্চারা লেখাপড়া করবে। আগেও কোন ঝরে পড়া বাচ্চা তাদের স্কুলে পড়ে কিনা সন্দেহ আছে।

সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থার (সাস) নির্বাহী পরিচালক শেখ ইমান আলীর সাথে প্রকল্পের বিস্তারিত জানতে চাইলে রেগে গিয়ে বলেন, আমার টাকা আমি যা পারি করব তাতে জনগণের কি। আমি সাতক্ষীরার ছেলে, উড়ে আসিনি। আমি গভঃ কলেজে পড়াশুনা করেছি।আমি তখন সাইফুল্লা লস্কারের বাড়ি, আমার কাছে পিস্তল ছিল। ভাই সব বাদ দেন। আমার লোক আপনার সাথে দেখা করবে।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক সরোজ কুমার দাস বলেন, প্রকল্পটি দেরিতে শুরু হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

নোংরা পরিবেশে স্কুল ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থী বাদে ভর্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছি নোংরা পরিবেশের স্কুল স্থানান্তর ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে স্কুলে ভর্তি করার।

[caption id="attachment_414629" align="alignnone" width="1200"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

অন্য বিষয়ে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আমি সাতক্ষীরার দায়িত্বে নেই।

জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। দুদক কার্যালয়ে জানানো হবে।

জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করে তিনি আরো বলেন, দুদক এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিলে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করবো।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশ সরকার শিক্ষায় গৌরাবান্বিত সাফল্য অর্জন করেছেন।

তিনি আরো বলেন, করোনাকালীন সময়ে ৮ থেকে ১৪ বছরের ঝরে পড়া শিক্ষর্থীদের শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে সরকার নানামুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। এর ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরায় ‘ড্রপ আউট অফ স্কুল স্টুডেন্ট এডুকেশন’ শিক্ষা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন এনজিও সাস।

স্কুল নেই শিক্ষার্থী নেই, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তপূর্বক উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App