×

আন্তর্জাতিক

ইরাকের গোপন অস্ত্র খুঁজে বের করার ব্যর্থ অভিযান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৪ পিএম

ইরাকের গোপন অস্ত্র খুঁজে বের করার ব্যর্থ অভিযান

ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

ইরাকের গোপন অস্ত্র খুঁজে বের করার ব্যর্থ অভিযান

স্যার রিচার্ড ডিয়ারলাভ

ইরাকের গোপন অস্ত্র খুঁজে বের করার ব্যর্থ অভিযান

লন্ডনে এমআই সিক্সের সদরদপ্তর। ছবি: সংগৃহীত

ইরাক যুদ্ধের ২০ বছর পর এখনো যে বিতর্কটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সেটি হচ্ছে “গণবিধ্বংসী অস্ত্রের” অস্তিত্ব নিয়ে যা যুক্তরাজ্যকে এই যুদ্ধে অংশ নেয়ার বৈধতা দিয়েছিল। গণবিধ্বংসী অস্ত্রের সন্ধান নিয়ে নতুন তথ্য সামনে এসেছে ‘শক এন্ড ওয়ার: ইরাক টুয়েন্টি ইয়ারস অন’ নামে বিবিসির নতুন একটি সিরিজের অংশ হিসেবে। এই অনুসন্ধানের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন এমন বেশ কয়েক জন ব্যক্তির সাথে কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে এই সিরিজটি বানানো হয়েছে।

“ক্রাইকি” এই একটি মাত্র বিস্ময়সূচক শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন এমআই৬-এর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা যখন ২০০১ সালের শেষের দিকে তার এক সহকর্মী তাকে বলেছিলেন যে, আমেরিকানরা ইরাক যুদ্ধের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে।

সিআইএর কর্মকর্তারা ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের এই বিস্মিত প্রতিক্রিয়ার কথাও স্মরণ করেন। সিআইএর ইরাক অপারেশন গ্রুপের প্রধান লুইস রুয়েডা বলেন, “আমি ভেবেছিলাম যে আলোচনার টেবিলেই তাদের হার্ট অ্যাটাক হবে। তারা যদি ভদ্রলোক না হতো, তাহলে টেবিলের এপাশে এসে আমাকে চড় মারতো।”

এই বার্তা বেশ দ্রুতই ডাউনিং স্ট্রিটে চলে যায়। কোন কুটনীতিক নয় বরং গোয়েন্দারাই এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল।

এমআই সিক্স-এর তৎকালীন প্রধান স্যার রিচার্ড ডিয়ারলাভ, যিনি প্রায়ই ওয়াশিংটন সফর করেন, তিনি বিবিসি এক বিরল সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমিই হয়তো প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বলেছিলাম, ‘আপনি পছন্দ করেন আর নাই করেন, প্রস্তুত হয়ে নিন, কারণ মনে হচ্ছে যে তারা একটি আক্রমণ করতে চাইছে।’”

যুক্তরাজ্যের বিদেশি গোয়েন্দা সার্ভিস এমআই সিক্স দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত এবং গুরুত্বপূর্ণ পর্বে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছিল।

ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ইস্যুটি মুখ্য কারণ ছিল না। “সাদ্দাম হোসেনের কাছে যদি একটি রাবার ব্যান্ড ও একটি পেপারক্লিপও থাকতো তাহলেও আমরা ইরাকে আক্রমণ করতাম,” বলেন মি. রুয়েডা। “আমরা হয়তো বলতাম, ‘ওহ, উনি তোমাদের চোখ উপড়ে ফেলতে চান।’”

যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে, যখন এবিষয়ে অনিশ্চিত একদল জনতার কাছে ইরাককে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে হবে, তখন ইরাকের গণবিধ্বংসী- রাসায়নিক, জৈব এবং পারমানবিক অস্ত্রের হুমকিই ছিল মূল বিষয়।

অনেক সময় এমন অভিযোগ আসে যে, গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিষয়টি ছিল যুক্তরাজ্যের বানোয়াট বিষয়। কিন্তু সেসময়ের ব্রিটিশ মন্ত্রীরা বলেছিলেন যে, তাদের নিজস্ব গুপ্তচরেরাই তাদেরকে অস্ত্রের অস্তিত্ব থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

“এটা বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ -আমি যে গোয়েন্দা তথ্য পাচ্ছি সেটার উপরই আমি নির্ভর করছি। আর আমার মনে হয় আমার দায়িত্বই ছিল নির্ভর করা,” সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্যার টনি ব্লেয়ার আমাকে একা বলেছিলেন। আক্রমণ চালানোর আগে তিনি এবিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন এবং তাকে আশ্বস্ত করেছিল যৌথ গোয়েন্দা কমিটি। তবে ভুল তথ্য দেয়ার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার সমালোচনা করতে অস্বীকার করেন তিনি।

অন্য মন্ত্রীরা বলেছেন যে, সেসময় তাদের মধ্যে একটা সন্দেহ কাজ করেছিল।

“অন্তত তিনটি ক্ষেত্রে আমি রিচার্ড ডিয়ারলাভকে গোয়েন্দা তথ্যের পক্ষে প্রমাণের বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম,” বলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র। “এটা নিয়ে আমার একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি ছিল। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডিয়ারলাভ আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে তার এজেন্টরা নির্ভরযোগ্য ছিল।” যাইহোক, মি. স্ট্র বলেন, দায়িত্ব সবসময় রাজনীতিবিদদেরই নিতে হয়, কারণ তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।

তাকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ইরাকের সিদ্ধান্তের দিকে ফিরে তাকালে তিনি এটিকে গোয়েন্দা ব্যর্থতা হিসেবে দেখেন কি না- স্যার রিচার্ডের উত্তর ছিল সাদামাটা: “না।” তিনি এখনো বিশ্বাস করেন যে, ইরাকের অস্ত্র কর্মসূচী ছিল এবং সেসব সরঞ্জাম হয়তো সিরিয়ার সীমান্তে স্থানান্তর করা হয়েছে।

অন্যরা দ্বিমত করেছেন। “এটা ছিল একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা,” বলেন স্যার ডেভিড ওমান্ড যিনি সেসময় যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা বিষয়ক সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি বলেন, আংশিক তথ্যের ভিত্তিতে সরকারের বিশেষজ্ঞদের একটা ধারণা হয়েছিল যে, সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। এর বিপরীত ধারণাকে খারিজ করে দেয়া হয়েছিল।

এমআই সিক্স-এর অভ্যন্তরীণ কিছু কর্মকর্তাও এটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। “সেসময় আমার মনে হয়েছিল যে, আমরা যা করছি তা ভুল,”এক কর্মকর্তা এমন মন্তব্য করেছিলেন যিনি ইরাক নিয়ে কাজ করতেন এবং এর আগে কখনো এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। তিনি নিজের পরিচয়ও প্রকাশ করতে চাননি।

সাবেক এই কর্মকর্তা ২০০২ সালের শুরুর দিককার কথা উল্লেখ করে বলেন, “নতুন বা বিশ্বাসযোগ্য কোন তথ্য বা মূল্যায়নও ছিল না যা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ইরাক গণবিধ্বংসী অস্ত্র কর্মসূচী শুরু করেছে যা আসন্ন একটি হুমকি।” “আমার মনে হয় যে, সরকারের দিক থেকে এটা ছিল একমাত্র বিষয় যা তারা পেয়েছিল...গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছিল একমাত্র ছুতা যার মাধ্যমে (ইরাক আক্রমণের) বৈধতা আদায় করা যেতো।”

২০০২ সালের বসন্তে ইরাকে থাকা গোয়েন্দা তথ্য ছিল সামঞ্জস্যহীন। এমআই সিক্সের যে এজেন্ট দীর্ঘ সময় ধরে ইরাকে ছিল, তার কাছে এই গণবিধ্বংসী অস্ত্র সম্পর্কে তেমন কোন তথ্যই ছিল না। কিন্তু এই ঘটনাকে জোরদার করতে নতুন উৎস থেকে নতুন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে মরিয়া প্রচেষ্টা ছিল, বিশেষ করে যখন সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে একটি তথ্যপঞ্জি তৈরি করার পরিকল্পনা চলছিল।

অভ্যন্তরীন আরেক কর্মকর্তা একটি বার্তা ডিকোড করার কথা মনে করে বলেন, ওই বার্তায় লেখা ছিল যে গোয়েন্দা সংস্থার জন্য এই ঘটনায় পদক্ষেপ নিতে ব্রিটিশ জনগণকে প্ররোচিত করা ছাড়া “আর কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই”। তারা বলেন যে, প্রশ্ন উঠেছিল এটা আসলেই সঠিক ছিল কি না এবং সেই বার্তাটি মুছে ফেলা হয়েছিল।

[caption id="attachment_414667" align="aligncenter" width="858"] স্যার রিচার্ড ডিয়ারলাভ[/caption]

১২ই সেপ্টেম্বর স্যার রিচার্ড নতুন একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্রের খবর নিয়ে ডাউনিং স্ট্রিটে গিয়েছিলেন। ওই ব্যক্তি দাবি করেছিলেন যে, সাদ্দামের কর্মসূচী আবার চালু করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে তিনি শিগগিরই নতুন বিস্তারিত তথ্য দেয়ার ওয়াদা করেন। যদিও এই সূত্রটি সম্পর্কে পূর্ণ তদন্ত তখনও শেষ হয়নি এবং এই তথ্য বিশেষজ্ঞদের জানানো হয়নি, তারপরও বিস্তারিত তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছিল।

স্যার রিচার্ডের বিরুদ্ধে ডাউনিং স্ট্রিটের সাথে অত্যধিত ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর অভিযোগকে “হাস্যকর” বলে উড়িয়ে দেন তিনি। তবে তার সূত্রের বিষয়ে বা ওই ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত কোন তথ্য দিতে বা মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। এর পরের কয়েক মাসেও নতুন ওই সূত্র কখনোই হাজির করা হয়নি এবং পুরো ঘটনাই বানোয়াট ছিল বলে ধারণা জন্মেছিল বলে জানান অন্য গোয়েন্দা সূত্রগুলো। তারা বলেন, মান নিয়ন্ত্রণটা ভেঙ্গে পড়েছিল।

মনে হচ্ছিলো হয় টাকার জন্য, নয়তো তারা সাদ্দামকে অপসারণ করতে চায় বলেই নতুন সূত্রগুলো বানিয়ে তথ্য দিচ্ছিলো। ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে আমি জর্ডানে সাদ্দামের গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মীর সাথে দেখা করেছিলাম। তিনি দাবি করেছিলেন যে, জাতিসংঘের তদন্তকারীদের নজর এড়িয়ে জৈবরাসায়নিক অস্ত্র তৈরির কাজ করতে মোবাইল ল্যাবরেটরি উন্নয়নের কাজে তিনি জড়িত ছিলেন।

তার এই দাবি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘে তার উপস্থাপনার মধ্যে তুলে ধরেছিলেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে কেউ কেউ এই দাবি নির্ভরযোগ্য নয় উল্লেখ করে বিশেষ নোটিশ জারি করেছিলেন। “কার্ভবল” কোড নামের আরেকটি গোয়েন্দা সূত্র, যার উপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ভরসা করেছিল, সেটিও ল্যাব সম্পর্কে বানোয়াট তথ্য দিয়েছিল।

এটা মনে করাটা যৌক্তিক যে, সাদ্দামের কাছে এক সময় গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছিল। ২০০৩ সালের যুদ্ধের কয়েক সপ্তাহ আগে, আমি ইরাকের উত্তরাঞ্চলে হালাবজা নামে একটি গ্রামে গিয়েছিলাম এবং সেখানে স্থানীয়রা ১৯৮৮ সালের একটি দিনের কথা বলছিলেন যখন সাদ্দামের সেনারা তাদের উপর রাসায়নিক অস্ত্র ফেলেছিল। তবে সেসব অস্ত্র কী হয়েছিল সে সম্পর্কে প্রকৃত সত্য সামনে আসে যুদ্ধের পর।

প্রথম গালফ যুদ্ধের পর ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে সাদ্দাম তার সব গণবিধ্বংসী অস্ত্র কর্মসূচীর বেশিরভাগ ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এই আশায় যে জাতিসংঘের অস্ত্র তদন্তকারী দলের কাছ থেকে হয়তো একটি ইতিবাচক ছাড়পত্র পাওয়া যাবে, একথা আমাকে ইরাকের একজন শীর্ষ বিজ্ঞানী পরে বলেছিলেন।

ইরাকি শাসক হয়তো আরো পরের দিকে এসব কর্মসূচী আবার চালুর আশা করছিলেন। কিন্ত গোপনে তিনি সবকিছু ধ্বংস করেছিলেন, যাতে করে সদ্য যুদ্ধ করে আশা প্রতিবেশি ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য একটা শঙ্কা অন্তত জিইয়ে রাখা যায় যে, তার কাছে হয়তো এখনো কিছু রয়েছে। যার কারণে জাতিসংঘের তদন্তকারী দল যখন ইরাককে সব কর্মসূচী ধ্বংসের প্রমাণ দেখাতে বলেছিলো সেটি বাগদাদ পারেনি।

[caption id="attachment_414669" align="aligncenter" width="880"] লন্ডনে এমআই সিক্সের সদরদপ্তর। ছবি: সংগৃহীত[/caption]

ইরাকি এক বিজ্ঞানী পরে উন্মোচন করেছিলেন যে, তারা একটি প্রাণঘাতী উপাদান মাটিতে ঢেলে ধ্বংস করেছিলেন যা নিখোঁজ ছিল বলে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করে আসছিল। কিন্তু তারা এটি করেছিল সাদ্দামের একটি প্রাসাদের কাছে এবং তারা ভয় পেয়েছিল যে এটা স্বীকার করলে হয়তো ইরাকি নেতা তাদের মেরে ফেলবে। এই সব কিছুর যা ফলাফল ছিল তা হলো, ইরাক কখনো প্রমাণ করতে পারেনি যে তাদের কাছে আর অস্ত্র নেই।

২০০২ সালের শেষের দিকে জাতিসংঘের তদন্তকারী দল গণবিধ্বংসী অস্ত্রের সন্ধানে আবার ইরাকে যায়। এই তদন্তকারীদের কয়েকজন, যারা বিবিসির সাথে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন, তারা জানান, তারা এমন কিছু জায়গায় পরিদর্শন করেছিলেন যেখানে পশ্চিমা গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী মোবাইল ল্যাব থাকার কথা ছিল। সেখান গিয়ে তারা তাদের ভাষায় “আইসক্রিমের ট্রাক” পেয়েছিলেন যা মাকড়শার জালে ভর্তি ছিল।

জনগণ তখন বুঝতে পারেনি যে যুদ্ধ যত ঘনিয়ে আসছিল, গোয়েন্দা সূত্রগুলো তথ্য দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলো, তদন্তকারী দলও ছিল শূণ্য, সাথে ছিল উদ্বেগ। ওই পরিস্থিতিকে “আতঙ্কিত” বলে বর্ণনা করেন এক কর্মকর্তা। ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে স্যার রিচার্ডকে মি. ব্লেয়ার বলেছিলেন, “আমার ভবিষ্যত তোমার হাতে।” কারণ তখন গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার কথা প্রমাণ করার চাপ বাড়ছিল।

স্যার রিচার্ড এখন বলেন, “ওই সময়টা ছিল হতাশাপূর্ণ।” তিনি তদন্তকারী দলের “অযোগ্যতাকে” দায়ী করেন কোন কিছু খুঁজে না পাওয়ার জন্য। হ্যান্স ব্লিক্স, যিনি জাতিসংঘের রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্র তদন্ত দলের নেতৃত্বে ছিলেন, তিনি বলেন, ২০০৩ সাল শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বিশ্বাস করতেন যে অস্ত্র আছে, কিন্তু যখন গোয়েন্দা তথ্য অনুসরণ করেও তারা কিছু খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন, তারপর থেকে তাদের এনিয়ে সন্দেহ জাগতে থাকে। তিনি আরো সময় চাইছিলেন এর উত্তর জানতে, কিন্তু পাননি।

“সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার আগ পর্যন্ত আমি এটিকে রুখতে চেষ্টা করেছি,” বিবিসিকে টনি ব্লেয়ার বলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, যিনি শঙ্কা করেছিলেন যে যুদ্ধের সময় হয়তো তার মিত্র পার্লামেন্টে ভোট হারাবেন, সে কারণে তিনি তাকে একটি ভিডিও কলে আক্রমণ না চালানোর সুযোগ দেয়ার কথা বলেছিলেন এবং শুধু যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের পরিস্থিতিতে এতে সংশ্লিষ্ট হতে বলেছিলেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

তিনি তার সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তিতে বলেছিলেন, সাদ্দাম হোসেনের সাথে দফারফা করার মূল নীতি ছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রক্ষার জন্য হলেও এই সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হয়েছিল। “এটা সম্পর্কে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারতো” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলাম, তখন এটা নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল না যে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন বা প্রেসিডেন্ট বুশ, আমেরিকার যে প্রেসিডেন্টই হোক না কেন, প্রথম যে ফোনটি করবেন সেটি হবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আজ আমরা ইউরোপের বাইরে এবং জো বাইডেনই কি ঋষি সুনাককে প্রথম ফোন করবেন- আমি নিশ্চিত নই।”

কিন্তু আজও কোন গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যাবে না। “এটা আসলে ভেস্তে গেছে,” এমআই সিক্সের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, এই ঘটনা গুপ্তচর এবং রাজনীতিবদদের জন্য গভীর ও দীর্ঘ প্রভাব রেখে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App