×

সারাদেশ

চট্টগ্রামে ছাত্রের রহস্যময় মৃত্যু, পিতার দাবি হত্যা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫৫ পিএম

চট্টগ্রামে ছাত্রের রহস্যময় মৃত্যু, পিতার দাবি হত্যা

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মহানগরীতে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মাদ্রাসাছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নগরীর মেহেদীবাগ দারুস সোফ্ফা তাহফিজুল মাদ্রাসার বাথরুম থেকে সোমবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টায় ওই ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ৯ বছর বয়সের নিহত ওই ছাত্রের নাম শাবিব শায়ান।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এটিকে আত্মহত্যা দাবি করলেও নিহতের স্বজনরা বলছেন, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর দুরন্ত শিশুটি কোনভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। শিশুটির বাবা ও তার আত্মীয় স্বজনরা এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করে এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, সিসিটিভি ফুটেজসহ আরো কিছু বিষয় বিশ্লেষণ করে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছেন বলে জানালেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।

জানা গেছে, কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম শিশু একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেয় শিশু শাবিব শায়ান। সেখানে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও জিতে নেয় শিশুটি। একাডেমির মিলনায়তন, প্রাঙ্গণ জুড়ে ছুটোছুটি করছিল সে। এমন এক প্রানবন্ত শিশু আত্মহত্যা করতে পারে না বলে জানিয়েছেন ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন।

শুধু তাই নয়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ফার্নিচার মেলায়ও এই প্রতিভাবান শিশুটি পুরস্কার পেয়েছিল। সে অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় এর কাছ থেকে সে পুরস্কারও গ্রহণ করেছিল। সে অনুষ্ঠানে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকও ছিলেন।

সকালে সুস্থ-স্বাভাবিক সন্তানকে মাদ্রাসায় রেখে গিয়েছিল বলে জানান নিহত ছাত্রের পিতা রিয়াজুদ্দিন বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মশিউর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে আমি প্রতিদিন সকালে মাদ্রাসায় দিয়ে যাই। আবার সন্ধ্যার পর মাদ্রাসা থেকে বাসায় নিয়ে আসি। প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে দিয়ে এসেছিলাম। ছেলেকে আনতে সন্ধ্যায় মাদ্রাসায় গিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ছেলে নিচে না নামলে আমি শিক্ষকদের বললে তারা বলে পাঠাচ্ছি। আরেকজন বলে বাথরুমে গেছে। চলে আসবে। এভাবে প্রায় ২০ মিনিট পর এক ছাত্র উপর থেকে আমাকে বলে আঙ্কেল তাড়াতাড়ি উপরে আসুন, সাবিবের অবস্থা ভালো না। তখন আমি দৌঁড়ে ৩য় তলা পর্যন্ত গিয়ে দেখি তারা আমার ছেলেকে ধরাধরি করে নিচে নামিয়ে হাসপাতালে নিচ্ছে।

জানতে চাইলে বলে, গলায় ফাঁস দিয়েছে। তখন দ্রুত তাকে নিকটবর্তী ম্যাক্স হাসপাতালে এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসকরা জানায় আমার ছেলে আর বেঁচে নেই।

মশিউর রহমান বলেন, আমার এই ছোট ছেলে কখনওই আত্মহত্যা করতে পারে না। আমি তার গলায় ও মুখে গালে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। তারা বলছে, আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু সে কেন আত্মহত্যা করবে? তাকে হত্যা করা হয়েছে।

চমেক হাসপাতালের মর্গের সামনে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন পিতা মশিউর রহমান চৌধুরী। তার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে শাবিব শায়ান তার বড় ছেলে। নিহত শাবিবের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় হলেও সে বাবা-মায়ের সঙ্গে নগরীর দামপাড়া এলাকায় বসবাস করত।

চকবাজার থানার ওসি মনজুর কাদের মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, ‘ওই শিশুটি মাদ্রাসার শৌচাগারে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। নিহতের গলায় একটি চিহ্ন আছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। এখনো নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারছি না। শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলে মৃত্যু কিভাবে হয়েছে জানা যাবে।

মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ শিক্ষকদের সাথে আমরা কথা বলছি। আমরা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছি। তাকে বাথরুমের দরজা ভেঙে বের করা হয়েছে নাকি দরজা খোলা ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, দরজা ভাঙার কিছু আলামত পাচ্ছি। এখানে সিসিটিভি আছে, আমরা ফুটেজ দেখে বলতে পারবো। নিহতের পিতা থানায় আপাতত একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে মাদ্রাসার পরিচালক মোজাম্মেল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App