×

সম্পাদকীয়

মশা নিধনে পরিকল্পনা ও সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৩, ১২:২২ এএম

রাজধানীতে কিউলেক্স মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। মশা নির্মূলের মূল দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের। মশা নিয়ন্ত্রণে করপোরেশনের তৎপরতা তেমন দেখা যাচ্ছে না। ওয়ার্ডভিত্তিক মশক নিধনেও তেমন কোনো তৎপরতা নেই। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, শীত-পরবর্তী সময়ে সারাদেশে মশার উপদ্রব বাড়ে। এই সময়ে দেশের যে কোনো জায়গায় বছরের অন্য সময়ের তুলনায় মশা অনেক বেশি হয়। এবারো তাই হয়েছে। যদিও এডিসবাহিত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। তবে কিউলেক্স মশা বেড়েছে। এই মশাও কম বিপজ্জনক নয়। কিউলেক্স মশার মাধ্যমে ফাইলেরিয়া ছড়ায়। এ রোগে মানুষের হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য সময়ের তুলনায় এ বছর ঢাকায় মশার লার্ভার ঘনত্ব বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ। উড়ন্ত মশার ঘনত্ব বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, মার্চে মশার ঘনত্ব চরমে পৌঁছাবে। মশা বৃদ্ধির নানা কারণ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শহর আর গ্রামের অবস্থা ভিন্নতর। প্রধানত আলোচনায় শহরের কথাই উঠে আসে, তাই শহরকেন্দ্রিক ভাবনাই প্রাধান্য পায়। আবদ্ধ পানি, উন্মুক্ত ড্রেন ও যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা রাজধানীতে মশার বংশবিস্তারের প্রধান কারণ। জানা যায়, ঢাকা শহরের সর্বত্রই এখন কিউলেক্স মশার মাত্রাতিরিক্ত উপদ্রব। প্রকৃত অর্থে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার লার্ভার বিস্তার রোধে আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এ কার্যক্রম কম দেখা যায়। এছাড়া মশা নিধনে বৈষম্যও রয়েছে। বিশেষ বিশেষ স্থান ও এলাকায় যথারীতি ও নিয়মিত মানসম্পন্ন ওষুধ ছিটানো হলেও অন্য এলাকায় তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। মশা নিধনে বছর বছর বরাদ্দ বাড়াচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তারপরও মশার উৎপাতে সারা বছরই অতিষ্ঠ থাকে নগরবাসী। এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়েও নানা অভিযোগ নগরবাসীর। দুই সিটি করপোরেশন অবশ্য বলছে, মশা নিয়ন্ত্রণে তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। করপোরেশনের উদ্যোগে এরই মধ্যে অনেক জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা থাকলে আবারো ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়বে। বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুম। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কিউলেক্স মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের, এটা নগরবাসীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কেননা কিউলেক্স মশার প্রজনন স্থান ডোবা-নালায় জমে থাকা পানিতে। আর ঢাকা শহরে এটা পরিষ্কারের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের। এসব কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হলে কিউলেক্স মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মশা নিধনের মতো জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা- এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। এখন এডিস মশার প্রাদুর্ভাব কম। সামনে বর্ষাকাল। বৃষ্টি হলেই এডিস মশা বাড়বে। এজন্য কর্তৃপক্ষকে এখন থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। কেবল এডিস নয়, সব ধরনের মশা নিধনেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। একটি আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে সার্বিক পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়া গেলে তার প্রভাব মশা নিধনেও পড়বে। মশা নিধনে শুধু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নয়, স্থায়ী পরিকল্পনা জরুরি। নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মশা নিধনে শুধু বরাদ্দ বৃদ্ধি নয়, প্রয়োজন সব পক্ষের সচেতনতা। সরকারি-বেসরকারি সব মহলের আন্তরিক ও সমন্বিত উদ্যোগে নগরবাসী মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবে- এটাই প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App