×

সারাদেশ

বহিরাগতদের হামলায় ইবির দুই শিক্ষার্থী আহত, চারঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৩, ১০:২৬ পিএম

বহিরাগতদের হামলায় ইবির দুই শিক্ষার্থী আহত, চারঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ

ছবি: ভোরের কাগজ

তিন দফা দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রধান ফটক সংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা আন্দোলন শুরু করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। প্রায় চারঘন্টা পর ‘হামলাকারীদের গ্রেফতার করা হবে’- বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের এমন আশ্বাসে তারা অবরোধ তুলে নেয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের দুইজন ছাত্র সোমবার (১৩ মার্চ) বিকেলে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজারে বাইকে তেল আনতে গেলে স্থানীয়দের দ্বারা হামলার শিকার হয়। আমরা হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা 'হৈ হৈ রৈ রৈ, হামলাকারী গেলি কই', 'আমার ক্যাম্পাস আমার থাক, বহিরাগত নিপাত যাক', 'আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই' সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ইবি শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীর যথাযথ বিচার, নিরাপদ ক্যাম্পাস ও বহিরাগত মুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা৷

হামলার শিকার দুই ছাত্র হলেন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ হাসান জিসাদ ও ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুপ্ত হাসান। তারা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দীকি আরাফাতের অনুসারী ও সাদ্দাম হোসেন হলের শিক্ষার্থী। হামলার ঘটনার পর দুই ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাদের কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভুক্তভোগী সুপ্ত বলেন, দুপুরে মফিজ লেকে আমরা বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের লেকে ছিলাম। সেখানে বহিরাগত স্থানীয় দুজন যুবক এসে বান্ধবীদেরসহ ভিডিও ধারণ করে। তাদেরকে ভিডিও ডিলেট করতে বললে আমাদের উপর তেড়ে আসে। এসময় তাদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হলে তারা আমাদের দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। পরে আজকে বিকেলে আমরা শেখপাড়ায় বাইকে তেল নিতে গেলে বহিরাগত বখাটে আকাশ হোসেনসহ ৪/৫জন আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে।

ইবি মেডিকেলের অফিস সহায়ক খন্দকার নাঈমুল রেজা জানান, সন্ধ্যায় আহত অবস্থায় দুজনকে মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। একজনের হাতের কবজি ছিলে গেছে ও আরেকজনের মাথায় দুই স্থানে ফুলে গেছে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তারা বলছিল মাথা ঘুরাচ্ছে এবং অস্বস্তি লাগছে। পরে তাদেরকে কুষ্টিয়া সদরে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে আন্দোলন চলাকালীন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদসহ প্রক্টরিয়াল বডির অন্য সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করেন। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে প্রক্টর পুলিশের প্রটোকলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

পরে রাত নয়টায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ফরহাদ হোসেন ও কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ পরিদর্শক (ডিবি) সাব্বিরুল আলম ঘটনাস্থলে আসেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাংলোতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম প্রক্টরিয়াল বডি, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে আলোচনায় বসেন। এসময় বিষয়টির সমাধানকল্পে ঘন্টাব্যাপী আলোচনা হয়।

বাংলো থেকে বের হয়ে এএসপি ফরহান হোসেন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, তোমাদের দাবি যৌক্তিক। ইতোমধ্যে আমাদের পুলিশের সব সোর্স কাজ শুরু করেছে। আজ (সোমবার) রাতের মধ্যেই তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।

প্রায় চারঘন্টা অবরোধ শেষে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন। এসময় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পরে শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে দশটায় মহাসড়ক ছেড়ে দিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এসময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের নিকট অভিযুক্তের গ্রেপ্তার, বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করাসহ নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে একদিনের মধ্যেই দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে।

উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। তারা অনিরাপদ থাকা মানে আমাদেরও অনিরাপদ থাকা। আমরা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে। পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা প্রয়োজন হলে যতদ্রুত সম্ভব মামলা করব। মঙ্গলবারের মধ্যেই আমরা আমরা দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App