পর্যাপ্ত খাদ্যপণ্য মজুদ থাকলে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে কেন?
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৩, ০৪:২৪ পিএম
‘মৃত্যুকুপে ধাবমান বাংলাদেশ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ছবি: ভোরের কাগজ
পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যপণ্য মজুদ থাকলে বাজারে মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে কেন- এ ব্যাপারে সরকারের কাছে স্পষ্ট জবাব চেয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, পত্রিকায় এসেছে- জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। রমজান মাসে মানুষ কিভাবে চলবে তা ভেবে দিশেহারা। এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে- দেশে নাকি নিত্যপণ্যের মজুদ প্রচুর আছে। জনগণকে বলেছে- আতকিঙ্ত হয়ে বেশি কেনাকাটা করবেন না।
সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে এক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের এ সম্পর্কিত এক ব্রিফিংয়ের প্রেক্ষিতে এ কথা বলেন তিনি। জিয়া পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মৃত্যুকুপে ধাবমান বাংলাদেশ’ নামে এই গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল কুদ্দুস। এতে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জিয়া পরিষদের ডা. আবদুল কুদ্দুস, মহাসচিব ড. এমতাজ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জিয়া পরিষদের আব্দুল্লাহিল মাসুদ, অধ্যাপক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, ড. আবু জাফর প্রমুখ।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক এক বৈঠক শেষে রমজানের আগে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে- এই মর্মে আশ্বস্ত করে জনসাধারণকে আতঙ্কিত হয়ে কেনাকাটা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
তিনি প্রশ্ন করেন, যদি এত মজুদ থাকে তাহলে কেনাকাটা করলে অসুবিধা কোথায়। আসলে কেনাকাটাইতো করতে পারছে না। বাজারের অবস্থা কী! চিনির দাম ১২০ টাকা, গরুর মাংস ৮শ টাকা। গরু ও মুরগির মাংস ভাগ করে কেনাকাটা করার রেওয়াজ এই দেশে ছিল না। ইলিশ মাছ কেটে দুইশ, আড়াইশ গ্রাম করে কেনার রেওয়াজ ছিল না। আজকে কিন্তু বাজারে তা দেখা যাচ্ছে। তাতে যদি সরকার বলে সবকিছু মজুদ আছে। কি রকম চাপাবাজি করছে সরকার! বাজারে গিযে দেখেন মানুষ কি পরিমাণ সরকারকে গালাগালি করে। আজকে গরিব মানুষ কিন্তু অর্ধাহারে আছে। এরপরও এই সরকার চাপাবাজি করছে। আমরা জানতে চাই- এই খাদ্যপণ্য যদি এতই মজুদ থাকে তাহলে মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে কেন সরকার সুষ্পষ্ট জবাব দিক।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা উল্লেখ করেন, এই দাম বৃদ্ধির সঙ্গে যোগ হয়েছে মূল্যস্ফিতি। দেখেন মূল্যস্ফীতির অবস্থা। গত জানুয়াতিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.১৭। ফেব্রুয়িারিতে তা বেড়েছে ৮.৭১। এর পর আরও বৃদ্ধি হবে। এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার।
কেন এটা হচ্ছে- এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, কারণ, সরকারের যারা ব্যবসায়ী, সিন্ডেকেট-মন্ত্রী-নেতা-ব্যবসায়ীরা জনগণের টাকা লুট করার জন্যই এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। সরকার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মেগা প্রজেক্ট করে লুটপাট করছে, ব্যাংক লুট করছে। যাদেরকে ঋণ দিয়েছে তাদের কোনো পরিচয় নাই। তাদের লোক বলে ঋণ দিয়েছে। এই লুটপাটের কারণে অর্থনীতি এখন ধ্বংস।
মোশাররফ বলেন, বিদ্যুতের দামও প্রতি মাসে বাড়ানো হচ্ছে। কিসের জন্য? ইনডেমনিটি দিয়ে সরকার বিদ্যুৎ সেক্টরের লুটারাদের রক্ষা করেছে। সরকারের লোকদের টাকা পাচার ও দুর্নীতিকে ব্যাকআপ দেয়ার জন্য বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার চাপাবাজি করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। কিন্তু এভাবে কোনো সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। জনগণ বুঝতে পেরেছে, এ সরকারকে সরানো ছাড়া দেশের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করা সম্ভব নয়।