গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সাবেক গাড়িচালক রিয়াদ বিন সেলিম প্রতারণার মাধ্যমে একসময়ে নিজেই ডিবি কর্মকর্তা বনে যান। শুধু তাই নয়, নানা সময়ে তিনি সেনাবাহিনী, র‌্যাব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্পগ্রুপের কর্মকর্তা কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেজে সমানে মানুষ ঠকিয়ে যাচ্ছিলেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সেই পুলিশ কর্মকর্তা চট্টগ্রাম থেকে প্রায় তিন বছর আগে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেলেও তার সাবেক গাড়িচালক রিয়াদ (২৫) ঠিকই নানাভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই মহাপ্রতারক ধরা পড়ল ব্যাবের হাতে।

শনিবার সকালে র‌্যাব-৭ এর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে আটক করেছে র‌্যাব।

গ্রেপ্তার হওয়া রিয়াদ বিন সেলিমের (২৪) বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভায়। বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার হাজীরপোল এলাকায়। রিয়াদের কাছ থেকে সেনাসদস্যরা ব্যবহার করেন এমন রঙ ও আকৃতির ব্যাগ, ইয়াবা এবং কমপক্ষে ৫০টি ভুয়া পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান মেজর মেহেদী হাসান। মূলত: র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সর্বশেষ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানকে র‌্যাব পরিচয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়ার পর নিজেকে আর রক্ষা করতে পারেননি।

র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, ‘একজন ডিবি অফিসারের পারসোনাল গাড়িচালক থাকা অবস্থায় প্রতারণা শুরু করে রিয়াদ। ওই অফিসার বিষয়টি জানতেন না। বছর তিনেক আগে তিনি বদলি হয়ে সিএমপি থেকে চলে যান। এরপর রিয়াদ আরো জোরেশোরে প্রতারণায় নামে।’ র‌্যাব জানায়, ডিবি অফিসারের গাড়িচালক হিসেবে রিয়াদ বিন সেলিম বিভিন্ন থানায় অবাধে যাতায়াত করতেন। ভুক্তভোগী লোকজনকে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সহযোগিতা করতেন। পুলিশের বিভিন্ন সংস্থায়ও পরিচয়ের সুযোগ ব্যবহার করে তদবির করতেন। একপর্যায়ে তদবিরই তার পেশা হয়ে যায়। নিজেকে ডিবি অফিসার পরিচয় দিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা নেয়া শুরু করেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর মেহেদী বলেন, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদবির একটি ভূয়া পরিচয়পত্র তৈরি করে সেটিকে প্রতারণার কাজে লাগান রিয়াদ। তার কাঁধে থাকত সেনাবাহিনীর নির্ধারিত রংয়ের একটি ব্যাগ। এসব পরিচয় একাধিকবার ব্যবহার করে টাকাপয়সা হাতানোর পর কৌশল পাল্টে র‌্যাবের কর্মকর্তা সেজে বসেন। র‌্যাবের নির্ধারিত সিরিয়ালের একটি মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। সেই নম্বর দিয়ে র‌্যাবের মনোগ্রাম ব্যবহার করে হোয়াটস অ্যাপে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। পরিচয় লেখা হয়- এডি অপারেশন্স, র‌্যাব হেডকোয়ার্টারস।’ এর মধ্যে ‘বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানকে র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয়ে হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে মামলা ও গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়। তিনি এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করার পর আমরা তদন্ত করে রিয়াদকে শনাক্ত করি। এছাড়া র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সে অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের অর্ডার দিয়ে বিনামূল্যে নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে তার মোবাইল ফোনে।