×

শিক্ষা

চবি’র পদত্যাগী শিক্ষক ও ভিসির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৩, ০৬:৫৮ পিএম

চবি’র পদত্যাগী শিক্ষক ও ভিসির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সহকারী প্রক্টরসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ থেকে ১৭ জন শিক্ষক একযোগে পদত্যাগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে তারা পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। অথচ তারা এতদিন বর্তমান উপাচার্যের ঘনিষ্টজন হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তবে রবিবারই (১২ মার্চ) চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতারের নির্দেশে নতুন প্রক্টর ও দুইজন সহকারী প্রক্টর নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

পদত্যাগকারী শিক্ষকরা পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করলেও বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বেশ কিছুদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালানোর ব্যাপারে উপাচার্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করছিলেন।

অপরদিকে উপাচার্য ড. শিরীন আখতার ভোরের কাগজের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, এই গ্রুপটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে আরেকটি প্রশাসন তৈরি করেছিল, আমি তাতে বাধা দেয়ায় তারা এভাবে একত্রিত হয়ে পদত্যাগ করে একটি ‘স্পর্শকাতর পরিস্থিতি’ তৈরি করতে চেয়েছে, এর বেশি কিছু না।

তবে চবি উপাচার্য যাই দাবি করুন না কেন, এর ফলে উপাচার্য বিরোধীপক্ষ বিষয়টিকে ইস্যু করে নতুন করে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে নামতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষক।

এর আগে দুপুরে ১৭ জন শিক্ষক চবির রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগকারীরা হলেন- প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভুইয়া, সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম, এসএএম জিয়াউল ইসলাম, ড. রামেন্দু পারিয়াল, মুহাম্মদ ইয়াকুব, গোলাম কুদ্দুস লাবলু, মোহাম্মদ শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময়, শহীদ আব্দুর রব হলের প্রভোস্ট ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক, শাহজালাল হলের আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ শাহরিয়ার বুলবুল তন্ময়, এএফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক আনাবিল ইহসান, প্রীতিলতা হলের আবাসিক শিক্ষক ফারজানা আফরিন রূপা, শহীদ আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক ড. এইচএম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও রমিজ আহমেদ সুলতান, শামসুন নাহার হলের আবাসিক শিক্ষক শাকিলা তাসমিন, খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষক ড. মো. শাহ আলম, নাসরিন আক্তার ও উম্মে হাবিবা, আলাওল হলের আবাসিক শিক্ষক ঝুলন ধর।

জানতে চাইলে চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, পদত্যাগপত্র পেয়েছি। উনারা ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে পদত্যাগ করেছেন। ইতিমধ্যে মেরিন সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদারকে প্রক্টর পদে এবং ওশেনোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষক মো. রুকন উদ্দিন ও মেরিন সায়েন্সের সৌরভ সাহা জয়কে সহকারী প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগকারীদের মধ্যে আছেন- প্রক্টর ড. রবিউল ইসলাম ভূঁইয়া ও ৬ জন সহকারী প্রক্টর এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক ইউনিটের ৯ জন পরিচালক। পদত্যাগী শিক্ষকদের কেউ অফিসিয়ালি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য ড. শিরিন আক্তারের সঙ্গে এই শিক্ষকদের বিরোধ চলছিল, যাদের সবাই এই উপাচার্যের সময়কালেই প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পেয়েছেন। উপাচার্যের সিদ্ধান্তে তার নিকটাত্মীয়-স্বজনের হস্তক্ষেপ, সিন্ডিকেট সদস্যের প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকদের দ্বিমত ছিল।

পদত্যাগী শিক্ষকরা মনে করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যেসব সমালোচনা ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে, এতে উপাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্টজনদের দায় আছে। কিন্তু প্রশাসনিক পদে থাকায় অযথা তাদের দুর্নামের দায় নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ১৭ শিক্ষক প্রশাসনিক পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, ভিসি শিরিন আক্তার অধিকাংশ সময়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা- কর্মচারি নিয়োগের ক্ষেত্রে তার নিজের ও তার পরিবারের সদস্যদের পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ দিতে বাধ্য করতেন। এমনকি চবির নানা টেন্ডারের ক্ষেত্রেও পছন্দের কাউকে পাইয়ে দেয়ার বিষয় ছিল।

তবে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতার ভোরের কাগজের কাছে উল্টো অভিযোগ করেন, পদত্যাগী প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূইয়াসহ আরো একজনকে তিনি নিজেই পদত্যাগ করতে বলেছিলেন আগে। তখন তারা কয়েকদিন সময় চেয়ে আগামী ১৫ মার্চ থেকে পদত্যাগের কথা বলেছিলেন। তাই তিনি সরল বিশ্বাসে তাদেরকে সেই সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু রবিবার সাবেক প্রক্টর রবিউলের নেতৃত্বে এই টিমটি একটি ‘সেন্সশন্যাল ইস্যু’ তৈরির জন্য এমনটি করেছে। তবে এটি সাময়িক একটি বিষয়, এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন সমস্যা হবে না। লোকজন সব ঠিক করা আছে আমার, সব ঠিক করে ফেলবো বলেও দাবি করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App