×

জাতীয়

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ: উৎসস্থলের সন্ধানে সিআইডি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩১ এএম

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ: উৎসস্থলের সন্ধানে সিআইডি

ছবি: ভোরের কাগজ

রাজধানী গুলিস্তানে সিদ্দিকবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির বেইজম্যান্টের কোন জায়গা থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়েছে তার সন্ধানে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। তবে উৎসস্থল এখনো খুঁজে না পেলেও গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে তারা। এদিকে বিস্ফোরণে চুড়মার হয়ে যাওয়া ভবনটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার কাজ স্থগিত রেখেছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।

শুক্রবার (১০ মার্চ) ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এখন ভবনটি প্রোপিংয়ের (সাময়িক স্থিতিশীল) কাজ করছে। তবে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে আবদুল মালেক মিয়া নামে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করছে তার স্বজনেরা। যদিও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীরা গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছিল ঘটনাস্থলে আর কেউ নেই। এছাড়াও বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলার অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে বংশাল থানায় আরো একটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে ওই ঘটনায় মোট দুটি মামলা দায়ের হলো।

এদিকে, বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটেসহ মোট ২২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঢামেক হাসপাতালে থাকা ১৪ জনের মধ্যে একজন সেখানকার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন। বাকিরা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট কাজ করছে। ভবনটিতে রাজউকের প্রোপিংয়ের কাজ গতকাল সকাল থেকেই চলছে। এ কাজ যাতে নির্বিঘ্নে হয় সেজন্য ভবনটির সামনের রাস্তা দুই দিক দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে রাজউকের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও র?্যাবের টিমও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আলামত সংগ্রহ শেষে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ভবনের কোন জায়গা থেকে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে মূলত তার সন্ধানেই আমরা আলামত সংগ্রহের কাজ করছি। বিস্ফোরণে ভবনের কোন জায়গায় সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, সেখানের ধোঁয়া বা বিভিন্ন আলামত খুঁজে বের করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ভবনের কিছু জায়গা আমরা সোয়াপিং করেছি। দেখা গেছে ভবনের গ্রিল ধরে নাড়ালে সেটি নড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেয়ালও নড়তে দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে এখনো কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য বা মিথেন গ্যাস রয়েছে কিনা তা জানতেও আলামত নেয়া হয়েছে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, সংগ্রহ করা আলামতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে। সেগুলো বিধি মোতাবেক পরীক্ষা করে দেখা হবে। পরে বিশেষজ্ঞরা বিস্তারিত জানাতে পারবেন। কিন্তু যেখান থেকে মূলত বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়েছে সেই জায়গাটাতে আমরা এখনো যেতে পারিনি।

ভবনটির সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে রাজউক গঠিত কারিগরি কমিটির সদস্য রংগন মণ্ডল এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা মূলত এখন ভবনটিতে প্রোপিং করার চেষ্টা করছি। এরপরে আমরা সার্ভে করব ভবনটি রেট্রোফিটিং করা যায় কিনা। রেট্রোফিটিং হচ্ছে নির্মিত স্ট্রাকচারের ক্যাপাসিটি বাড়ানো। সাধারণত পুরনো স্ট্রাকচার যা লোড নিতে পারছে না বা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এরকম ভবনকে রেট্রোফিটিং করা হয়। তবে এই সার্ভে করতে আমাদের দেড় মাস সময় লাগবে। ভবনের সামনের রাস্তা খুলে দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজউকের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রোপিংয়ের পর দেখব ভবনটি কতটুকু স্টেবল হয়েছে। এছাড়া আরো দেখব ভবনটি কতটুকু কম্পন সহ্য করতে পারছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

এদিকে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক দিনমনি শর্মা বলেন, আমাদের কোনো উদ্ধার কাজ এখন ঘটনাস্থলে চলছে না। তবে আমরা ঘটনাস্থলে আছি, যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে রেসপন্স করব। এছাড়া নিখোঁজ কেউ আছেন বলেও আমাদের কাছে কেউ এসে দাবি করেনি। যদিও বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে আবদুল মালেক মিয়া নামের এক কিশোরকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি স্বজনদের।

মালেকের বড় ভাই পরিচয় দেয়া আবদুল খালেক মিয়া বলেন, বিস্ফোরণের দিন গত মঙ্গলবার তার ভাই বাসে করে মুন্সীগঞ্জ থেকে গুলিস্তানে নামার কথা ছিল। সেখান থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ভাইকে না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার টঙ্গিবাড়ী থানায় খালেক জিডি করতে গিয়েছিলেন। তবে থানা থেকে বলা হয়েছে, তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভাইয়ের ছবি লাগবে। আজ শনিবার আবার থানায় যাবেন বলেও জানান তিনি। গতকাল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, দগ্ধ ও ক্ষত-বিক্ষত ৮ জন সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যার ভেতর তিনজন আইসিইউতে আছেন। তারা হলেন-খলিলুর রহমান হাসান, আজম মৃধা ও মোহাম্মদ জাহান। এর মধ্যে হাসান ও আজম লাইফ সাপোর্টে আছেন।

নিম্ন আয়ের পরিবারে অর্থসংস্থানের বড় অংশ বহন করতেন আজম। এখন আয়–ব্যয়ের হিসাবের ঊর্ধ্বে তিনি। ওষুধ-পথ্যের খরচ জোগাতেই হিমশিম খাচ্ছে যে পরিবার সেখানে প্রতিদিন কয়েক ব্যাগ প্লাটিলেট দরকার হচ্ছে তার। চার তলার আইসিইউয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় আজমের চাচাত ভাই শাকিল মৃধা ও অন্য স্বজনদের সঙ্গে। তারা বলেন, অবস্থা খুব খারাপ! শেষ চেষ্টা হিসেবে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়েছে। এখন বাকিটা আল্লাহর হাতে। দোয়া আর চেষ্টা ছাড়া তো কিছু করতে পারব না! লাইফ সাপোর্টে ও আইসিইউতে থাকা এই তিনজনের অবস্থা খুবই খারাপ বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, লাইফ সাপোর্টে আছেন দুইজন। একজন সাধারণ আইসিইউতে। তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, গত বৃহস্পতিবার এখানে মোট ১৫ জন ভর্তি ছিল। গতকাল শুক্রবার তাদের মধ্যে একজনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। রাজন নামে একজন আইসিইউতে রয়েছেন। বাকি ১৩ জন বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসাধীন। সার্বক্ষণিক তাদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App