×

সারাদেশ

শান্তিগঞ্জে গ্রিস প্রবাসীর কফিনে অন্য লাশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৩, ০২:৩২ পিএম

শান্তিগঞ্জে গ্রিস প্রবাসীর কফিনে অন্য লাশ

আফছর মিয়া। ফাইল ছবি

কবর খুঁড়েও হয়নি দাফন

এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি

লাশ বহনের জন্য প্রস্তুত খাটিয়া। পাড়ার মসজিদে মসজিদে ও সমস্ত এলাকাজুড়ে সিএনজিতে করে ঘোষণা করা হয়েছে জানাজার নামাজের সময়সূচি। বাড়ি ভর্তি শোকাহত মেহমান। দাফনের জন্য গোরস্তানে খোঁড়া হয়েছে কবর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি জানাজার নামাজ, করা হয়নি দাফনও। কারণ, যে ব্যক্তির জন্য এমন শোকাবহ আয়োজন লাশ তার নয়, অন্য জনের।

মর্মান্তিক এমন ঘটনাটি ঘটেছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের দামোধরতপী গ্রামে। এ গ্রামের মরহুম জমসিদ আলীর বড় ছেলে আফছর মিয়া (৪১) ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে লিভার ক্যান্সার জনিত কারণে গ্রিসের এথেন্সের সুতরি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুর সময় তার অপর ভাই মো. এমরান মিয়াও সেখানে (গ্রিসের এথেন্সে) ছিলেন। মৃত্যুর ৪ দিন পর লাশ দেশে আনার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনি (মো. এমরান মিয়া) দেশে চলে আসেন। ১০ মার্চ (শুক্রবার) লাশ দেশে আসার কথা ছিলো। মারা যাওয়া আফছর মিয়ার সাথে যে ঠিকানা দেয়া হয়েছিলো সে ঠিকানায় নির্ধারিত সময়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি লাশবাহী গাড়িও এসেছে। লাশ পেয়ে আপ্লুত আত্মীয়-স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ব্যবস্থা করেছিলেন জানাজার নামাজের। ঘোষণা দেয়া হয় মসজিদের মাইকে। খোঁড়া হয় কবর। কিন্তু লাশ ফ্রিজিং ভ্যান থেকে নামানোর পর বাঁধে বিপত্তি। এ লাশ যে আফছর মিয়ার নয়।

পুলিশ ও আফছর মিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, যে লাশটি মরহুম আফছর মিয়ার বাড়িতে শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা ১৮ মিনিটে এসে পৌঁছেছে এ লাশ জালাল মিয়া (৫২) নামের এক ব্যক্তির। যার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার শিলনপুর গ্রামে। তার বাবা শফিক উদ্দিন। তিনিও গ্রিস প্রবাসী ছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যু বরণ করেছিলেন। আগামী ১৩ মার্চ তার লাশ দেশে আসার কথা ছিলো। কিন্তু ভুলবশত আফছর মিয়ার নাম সম্বলিত স্টিকারটি জালাল মিয়ার কফিনে লাগিয়ে দেয়ার কারণে একজনের লাশ আরেকজনের ঠিকানায় তারিখ পরিবর্তিত হয়ে চলে আসে। আফছর মিয়ার লাশ এখনো গ্রিসের এথেন্সে আছে। আগামী ১৩ মার্চ জালাল মিয়া ফ্লাইটে তার লাশ দেশে আসার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবারের একাধিক ব্যক্তি।

আফছর মিয়ার ভাগনে তোফায়েল আহমদ কামরান বলেন, আমার বড় মামার লাশ আসার কথা শুনে লাশ রিসিভ করতে আমি ১০ মার্চ দিনের বেলা ঢাকায় এয়ারপোর্টে যাই। সেখানে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে রাত ৩টা ২০মিনিটে বাড়িতে এসে পৌঁছে। এর মধ্যেই মাইকে জানানো হয় যে জানাজার নামাজ কখন হবে। ভোর থেকে গোরস্থানে করব খুঁড়া হয়। সকাল ১০টায় যখন লাশবাহী গাড়ি থেকে লাশ নামিয়ে কফিন খোলা হয় তখন দেখা যায় লাশ আমার মামার নয়। তারপর পুলিশে খবর দেই। পুলিশ এসে খুঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, লাশটি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ির। তার নাম জালাল মিয়া।

শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, মর্মান্তিত এ ঘটনার খবর পেয়ে ফোর্সসহ তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে আসি। অনেক চেষ্টা করে মরহুম জালাল উদ্দিনের ঠিকানা বের করে তাদের সঙ্গে কথা বলি। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এ লাশ হস্তান্তর করা হবে। দামোধরতপী গ্রামের মরহুম আফছর মিয়ার লাশ এখনো আসেনি। সমস্যাটা হয়েছে গ্রিসে। আগামী ১৩ তারিখ তার লাশ দেশে আসার কথা রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App