×

আন্তর্জাতিক

১৫০ বছরেও বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেল না কলকাতার ট্রাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৮ পিএম

১৫০ বছরেও বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেল না কলকাতার ট্রাম

ছবি: সংগৃহীত

১৮৭৩ সাল। এ বছরেই কলকাতায় প্রথমবারের মতো চালু হয়েছিল ট্রাম। তারপর ১৫০ বছর পেরোনোর পর ঘোড়ায় টানা ট্রাম বিদ্যুৎচালিত যানে রূপান্তর হয়েছে। ঐতিহ্যকে সম্মান দেখিয়ে এখনো অনেকেই কলকাতার ট্রামগুলোতেই যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু এত বছর পরেও সেটি বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি না পাওয়ায় আক্ষেপের শেষ নেই কলকাতাবাসীর।

বলা হয়ে থাকে, কলকাতার মানুষের নাড়িনক্ষত্র কোনোকিছুই যেন অবিদিত নয় ঐতিহ্যবাহী এই যানবাহনের। কলকাতা শহরে মাটির নিচ দিয়ে চলা মেট্রোরেল আধুনিকতার প্রতীক হলে ট্রাম হলো সেই ঐতিহ্যের প্রতীক। ইতিহাসেও ট্রাম নেহায়েৎ কম পুরনো নয়। ১৮৭৩ সালে কলকাতায় প্রথমবারের মতো ট্রাম চালানো হয়েছিল আর্মেনীয় ঘাট (বর্তমান বাবুঘাট) থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত। তবে তখন যথেষ্ট যাত্রী পাওয়া যেত না বলে ৭ বছর পর এই সেবা বন্ধ করে দেয় তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার।

এর বেশ কয়েক বছর পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, নতুনভাবে তৈরি করা হবে ক্যালকাটা ট্রামওয়ে কোম্পানি। এরপরেই শিয়ালদহ থেকে বউবাজার, ডালহৌসি হয়ে আর্মেনিয়া ঘাট পর্যন্ত ট্রাম লাইন পাতানো হয়।

সেই সময় কলকাতার ট্রাম টানতো ঘোড়া। ট্রাম টানার জন্য প্রায় এক হাজার ঘোড়া লন্ডন থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল। ১৯ মাইল লাইন ধরে এই ঘোড়াগুলো ট্রাম টেনে নিয়ে যেতো।

১৯০০ সালে কলকাতায় প্রথম ঘোড়ার বদলে বিদুতের মাধ্যমে ট্রাম চালানোর পরিকল্পনা করে ব্রিটিশ সরকার। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় ১৯০২ সালে। ওই বছর ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চালানো হয়। এরপর ধীরে ধীরে উত্তর থেকে দক্ষিণ- গোটা কলকাতায় শুরু হয় বিদ্যুৎচালিত ট্রামের যাত্রা। কিছুদিনের মধ্যে স্থানীয়দের পাশাপাশি কলকাতায় আসা ভিনদেশি মানুষদেরও পছন্দের পরিবহন হয়ে ওঠে ট্রাম।

যাত্রা শুরুর পর থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত কলকাতার একমাত্র গণপরিবহন ছিল ট্রাম। এরপর শহরে বাস সেবা চালু হয়। ১৯৭২ সালে ট্রামওয়ে কোম্পানি অধিগ্রহণ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ওই সময় কলকাতার বিভিন্ন পথে ট্রাম চালানো ও সেগুলো রাখার জন্য তৈরি হয় ‘ট্রাম ডিপো’।

এই শহরে চলাচল করা বেশিরভাগ ট্রামই তৈরি করেছে বিখ্যাত ‘বার্ন স্ট্যান্ডার্ড’ কোম্পানি। প্রতিটি ট্রাম চালাতে ৫৫০ ভোল্ট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে ভারতে ট্রামের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রেখেছে একমাত্র কলকাতা।

একসময় বাসের ভিড় এড়িয়ে নিত্যদিনের গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেকের কাছে পছন্দের বাহন ছিল ট্রাম। তবে কলকাতায় ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে ট্রামের প্রতি মানুষের নির্ভরতা কমতে থাকে। ধীরে ধীরে বেশ কিছু রাস্তা থেকে উঠে যায় ট্রাম লাইন। একপর্যায়ে বিতর্ক শুরু হয়, এই গতির যুগে ট্রাম আদৌ রাখা উচিত কিনা।

তবে কলকাতাবাসী সবসময় ট্রামের পক্ষে থেকেছে। তাই বারবার পরীক্ষার মুখে পড়েও শহরে রয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী এই যান।

মানুষকে ফের ট্রাম অভিমুখী করতে এরই মধ্যে নতুন কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিশেষ কিছু ট্রামের ভেতর তৈরি করা হয়েছে রেস্তোরাঁ। কোথাও রাখা হয়েছে কলকাতার ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের তথ্য। যাত্রীদের সুবিধার্থে গ্রীষ্মের দাবাদহ থেকে মুক্তি পেতে এসি ট্রামের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

কয়েকদিন আগেই ১৫০ বছর পূর্ণ করেছে কলকাতার ট্রাম। কিন্তু সেটি এখনো হেরিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশ কলকাতাবাসী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App