×

সারাদেশ

ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু ১৮ মার্চ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৩, ০৭:৩৭ পিএম

ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু ১৮ মার্চ

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ

ভারতের লুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে রেলহেড অয়েল ডিপোতে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন দিয়ে প্রথম আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি তেল ডিজেল সরবরাহ শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী ১৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে ভার্চুয়ালি এই পাইপলাইন দিয়ে ডিজেল সরবরাহ উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি।

শুক্রবার (১০ মার্চ) দুপুরে পার্বতীপুরে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের রিসিপ্ট টার্মিনাল (আরটি) পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর ফলে অল্প সময়ে এবং স্বল্প ব্যয়ে নিরাপদে উত্তরাঞ্চলসহ দেশব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। উত্তরাঞ্চলের মানুষ পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল (ডিজেল) ছাড়াও আগামী এক শ’ বছর নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে।

পরে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রী।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালিদ মোহাম্মদ জাকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. খাইরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (সচিব) এবিএম আজাদ, পেট্রো বাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার, অতিরিক্ত সচিব হুমাউন কবির, পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক, পৌর মেয়র আমজাদ হোসেনসহ বিপিসির তিন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার কর্মকর্তারা।

দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি তেল সরবরাহের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিলিগুড়ি মাকেটিং রেল টার্মিনালে এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

ভারত-বাংলাদেশ ফেন্ডসশিপ পাইপলাইন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত সরকার দিবে ৩০৩ কোটি রুপি ও বাংলাদেশ দিবে ১৫০ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন সময় ধরা হয়েছিল ৩০ মাস (জানুয়ারি, ২০২০ থেকে জুন, ২০২২ পর্যন্ত)। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নুমালীগড় রিফাইনারী লিমিটেড হতে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬৫০ কিলোমিটার পাইপপাইন রয়েছে। শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্দা সীমান্ত দিয়ে নীলফামারী হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) রেলহেড অয়েল ডিপো পর্যন্ত ১৩১ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ১০ ইঞ্চি ব্যাসের এ পাইপলাইন ভারতীয় অংশে ৫ কি.মি এবং বাংলাদেশ অংশে ১২৬.৬৭ কিলোমিটার পড়েছে।

পাইপলাইন নির্মাণ শেষ হলেও রিসিপ্ট টার্মিনালে ফুয়েল ট্যাংক নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় আপাতত রেলহেড অয়েল ডিপোর ট্যাংকার ব্যবহার করা হবে। ২৯ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার ছয়টি ফুয়েল ট্যাংক, অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য তিন হাজার লিটার ধারণ মতার দুটি ওয়াটার ট্যাংক, অগ্নিনির্বাপক ফোম রাখার জন্য আড়াই হাজার লিটার ধারণ মতার দুটি ব্লাডার ট্যাংক ও অটোমোশন সিস্টেম স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ চলমান রয়েছে।

বর্তমান প্রক্রিয়ায় বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানী করে পার্বতীপুরে নিয়ে আসতে সময় লাগে প্রায় একমাস। এই পাইপলাইন নির্মিত হলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভারত থেকে পার্বতীপুর ডিপোতে জ্বালানী তেল চলে আসবে। পাইপলানের মাধ্যমে জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমান দর বিবেচনায় ব্যারেল প্রতি প্রতি প্রায় ছয় ডলার সাশ্রয় হবে। এতে একদিকে সময় লাগবে কম, অপরদিকে পরিবহন ব্যয় ও সিস্টেম লস অনেক কমে যাবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষে বিপিসির তিন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার পার্বতীপুর ডিপোতে ধারণ ক্ষমতা হবে ৪৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে প্রায় এক মিলিয়ন টন ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা যাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ আড়াই লাখ টন ডিজেল আমদানি করবে। ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ডিজেল আমদানির পরিমাণ চার-পাঁচ টন করে বাড়বে। এখানে আপৎকালীর মজুদও (বাফার স্টক) গড়ে তোলা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App