নানা ইতিহাস ঐতিহ্য আর পর্যটন সম্ভাবনায় ভরপুর সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায়। এই উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্য দেশব্যাপী সমাদৃত। উপজেলার দেখা হাওরের নয়নাভিরাম দৃশ্য মন কাড়বে যে কারো। প্রাচীন থেকে শুরু করে মোঘল আমলের অনেক স্থাপনা রয়েছে শান্তিগঞ্জে৷ যা পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয় সব সময়। তেমনি একটি প্রাচীন স্থাপনা রাধামাধবের আখড়া। দুইশত বছরের পুরনো এই উপাসনালয়টি ইসকন মন্দির নামে পরিচিত। এটি উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের তালুকগাঁও গ্রামে অবস্থিত। ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটি সংস্কারের অভাবে অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে।

একসময় যে আখড়ায় নিয়মিত ভক্তদের আরাধনা হতো, শঙ্খ আর ঢাকের তালের কীর্তন হতো আজ সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ঐতিহাসিক স্থাপনাটি রক্ষণাবেক্ষণে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের। প্রায় তিনশত বছরের পুরনো এই স্থাপত্যটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হলেও এখনও দৃষ্টিতে পড়েনি সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের। এখনই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চিরতরে ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভক্ত অনুরাগীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিনশ বছরের পুরনো এই রাধামাধবের আখড়াটি দেখভাল করছেন ইস্কন সম্প্রদায়। এক সময় মন্দিরের ভেতরে রাধামাধবের মূর্তিসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বর্তমানে বের করা হয়েছে সব। দীর্ঘদিন ধরে মন্দিরে ভেতরে পূজা অর্চনা বা কীর্তন করতে পারছেন না ভক্তবৃন্দ। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দরজা জানালা ভেঙে গেছে। অনেক স্থানেই ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের একাধিক ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করছে মেঝেতে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে সংস্কার না করলে একসময় ঐতিহাসিক স্থাপনাটি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন মন্দিরের ভক্ত অনুরাগীরা। সংস্কারের পাশাপাশি মন্দিরটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় নেয়ার দাবি জানিয়েছেন রাধামাধব আখড়ার দায়িত্বরতরা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাথারিয়া রাধামাধবের আখড়াটি অনেক পুরনো। শান্তিগঞ্জ উপজেলা তথা সুনামগঞ্জের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। যা ইস্কন সম্প্রদায় পরিচালনা করে থাকেন। মন্দিরটি বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

শুধু রাধামাধবের আখড়াই নয় শান্তিগঞ্জ উপজেলার এরকম আরো অনেক প্রাচীন স্থাপনা আছে যার কোন কদর নেই। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস ঐতিহ্যের এই স্থাপনাগুলো। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংশ্লিষ্টতায় রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি এ সকল প্রাচীন স্থাপনার।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক নূর হোসেন বলেন, পুরনো এই স্থাপনাটি পরিদর্শন করেছি। আমরা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আখড়ার উন্নয়নে যা পারি করব। পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে এ প্রাচীন স্থাপনাটি নজরে এনে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার উজ জামান বলেন, রাধামাধব আখড়া শান্তিগঞ্জ উপজেলার একটি সুপ্রাচীন স্থাপনা। এই স্থাপনাটি রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্থাপনাটি তাদের আওতায় নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।