×

আন্তর্জাতিক

বিহারের শ্রমিকরা কেন তামিলনাড়ু ছাড়ছে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৩, ০৫:৪৯ পিএম

বিহারের শ্রমিকরা কেন তামিলনাড়ু ছাড়ছে?

প্রতীকী ছবি

বিহারের শ্রমিকরা কেন তামিলনাড়ু ছাড়ছে?

প্রতীকী ছবি

বিহারের শ্রমিকরা কেন তামিলনাড়ু ছাড়ছে?

প্রতীকী ছবি

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ তামিলনাড়ুতে যে হিন্দি ভাষাভাষী অভিবাসী শ্রমিকরা কাজ করেন, একগুচ্ছ ভাইরাল ভিডিওর জেরে তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং একে কেন্দ্র করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক লড়াই পর্যন্ত শুরু হয়ে গেছে।

গত ১৫ দিনের মধ্যে এমন অনেকগুলো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মূলত বিহার থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিকরা তামিলনাড়ুতে স্থানীয়দের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন, এমনকী কাউকে কাউকে মেরে ফেলাও হয়েছে। তামিলনাড়ু পুলিশ ও রাজ্যের কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করছেন এই ভিডিওগুলো ভুয়া বা ফেইক। বেশ কিছু ফ্যাক্ট চেকিং সাইটও দাবি করেছে, এসব ঘটনা আদৌ তামিলনাড়ুতে ঘটেনি। তবে ভিডিওগুলো ভাইরাল হওয়ার পর তামিলনাড়ুতে কর্মরত বহু অভিবাসী শ্রমিক দলে দলে রাজ্য ছাড়তে শুরু করেছেন। খবর বিবিসির।

তামিলনাড়ুতে শিল্পপতিরাও অনেকেই স্বীকার করছেন শ্রমিকরা এভাবে হঠাৎ চলে যাওয়ার ফলে রাজ্যের কোনো কোনো শিল্পাঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যন্ত ব্যহত হচ্ছে। আবার দেশটির কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বলছে, বিহার সরকার যে অন্য প্রদেশের কর্মরত তাদের শ্রমিকদের রক্ষা করতে পারছে না এটা বিহারের রাজনৈতিক ব্যর্থতা। এদিকে, গত শনিবার (৪ মার্চ) তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন এসব ‘গুজব’ ছড়ানোর তীব্র নিন্দা করে বলেন, অন্য প্রদেশের শ্রমিকরা তামিলনাডুতে সম্পূর্ণ নিরাপদ।

ওই একই দিনে তামিলনাড়ু পুলিশ উত্তর প্রদেশে বিজেপির এক মুখপাত্র প্রশান্ত পাল উমরাও ও হিন্দি পত্রিকা দৈনিক ভাস্করের সম্পাদকের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগে মামলা রুজু করে।

[caption id="attachment_412551" align="aligncenter" width="700"] প্রতীকী ছবি[/caption]

সেখানে যা ঘটেছিল গত ২১ ফেব্রুয়ারি তামিলনাড়ুতে একটি ট্রেনের ভেতর একদল হিন্দিভাষী শ্রমিককে স্থানীয়রা হেনস্থা ও মারধর করছেন, এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর রাজ্যের রেলওয়ে পুলিশ অভিযুক্ত একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তবে শুধু ওই ভিডিওটিই নয়, ওই একই সময়ে হিন্দিভাষী শ্রমিকদের হেনস্থা ও নির্যাতনের ঘটনা বলে দাবি করে আরও বেশ কয়েকটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছিল।

রাজ্যের পুলিশ প্রধান সি শৈলেন্দ্র বাবু অবশ্য দাবি করেন, ওই ভিডিওগুলো তিরুপুর ও কোয়েম্বাটোর জেলার পুরনো কিছু সহিংসতার ঘটনার- যার সঙ্গে অভিবাসী শ্রমিকদের মারধর করার কোনো সম্পর্কই নেই।

ফ্যাক্ট চেকিং কিছু সাইট আবার দাবি করে এর মধ্যে অনেকগুলো ভিডিও তামিলনাড়ুই নয়, সেগুলো তেলেঙ্গানা, কর্নাটক বা রাজস্থানের বহু পুরনো কোনও ঘটনার ভিডিও। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে, রাজ্যের বহু হিন্দিভাষী শ্রমিক ভয় পেয়ে ফিরতি ট্রেনে চেপে গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছেন।

তামিলনাডুর হোটেল অ্যাসোসিয়েশন যেমন দ্য হিন্দু পত্রিকাকে জানায়, হোটেল শিল্পে কর্মরত বহু কর্মী রাজ্য ছেড়ে চলে গেছেন- কারণ তারা বলছেন দেশে তাদের পরিবার ভয় পাচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি অভিবাসী শ্রমিক কাজ করেন যে তিরুপুর ও কোয়েম্বাটোর জেলায়, সেখানে রাজ্য প্রশাসন হিন্দিতে শ্রমিকদের উদ্দেশে আতঙ্কিত না হতে আবেদন জানিয়েছেন। শ্রমিকদের জন্য আলাদা হেল্পলাইনও খোলে জেলা প্রশাসন। তবে অনেকে শিল্প মালিক আবার আশা করছেন হোলির ছুটি শেষ হলে বিহার ও উত্তর প্রদেশের শ্রমিকরা অনেকেই হয়তো আবার তামিলনাড়ুতে ফিরে আসবেন।

[caption id="attachment_412552" align="aligncenter" width="700"] প্রতীকী ছবি[/caption]

শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি কথিত শ্রমিক হেনস্থার ভিডিওগুলো ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিজেপির বিহার ও উত্তরপ্রদেশ ইউনিট (ভারতের প্রধান দুটি হিন্দিভাষী রাজ্য) এই ইস্যুটি নিয়ে অন্য দলগুলোকে আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

গত ২ মার্চ বিজেপির বিহার শাখা টুইট করে, ‘রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব যখন স্টালিনের জন্মদিনের উৎসবে যোগ দিতে যাচ্ছেন, তখন সেই তামিলনাডুতেই ১২জন বিহারি শ্রমিককে হত্যা করা হচ্ছে।’ পরে অবশ্য তারা এই বিতর্কিত ও ভিত্তিহীন টুইটটি ডিলিট করে দেয়।

বিহার বিধানসভায় এই প্রসঙ্গটি আলোচনার জন্য উঠলে তেজস্বী যাদব দাবি করেন, বিজেপি এই ইস্যুটি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে।

বিধানসভায় বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, একদিকে তারা ‘ভারতমাতা কি জয়’ স্লোগান দিচ্ছে, আরও অন্যদিকে তারা রাজ্যগুলোর মধ্যে এমনভাবে ঘৃণা ছড়াচ্ছে যেন তামিলনাডু ভারতের অংশই নয়।

তবে বিজেপির চাপের মুখে বিহার সরকার একটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করতেও বাধ্য হয়েছে, যার সদস্যরা তামিলনাডু সফর করে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখবেন ও প্রতিবেদনও জমা দেবেন।

এদিকে, তামিলনাড়ুতে বিজেপি সভাপতি কে আন্নামালাই দাবি করেন, রাজ্যে ক্ষমতাসীন ডিএমকের এমপিরা উত্তর ভারতীয়দের সম্পর্কে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছেন কিংবা রাজ্যের একজন মন্ত্রী হিন্দিভাষীদের যেভাবে পানিপুরি-বিক্রেতা বলে বর্ণনা করেছেন সে কারণেই পরিস্থিতি এরকম জটিল হয়ে উঠেছে।

চেন্নাই পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট এরপর আন্নামালাইয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করেছে। পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারকে ফোন করে আশ্বাস দিয়েছেন, তার প্রদেশ থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিকরা তামিলনাডুতে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। তবে অভিবাসী শ্রমিকদের কেন্দ্র করে ভারতের দুটি রাজ্যের মধ্যে আবার যে বিতর্ক ও আতঙ্কের রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে তাতে কোনো সংশয় নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App