×

সারাদেশ

বেড়াতে পারেন সাদা পাথরের রাজ্যে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৩, ০৫:৩৫ পিএম

বেড়াতে পারেন সাদা পাথরের রাজ্যে

ছবি: ভোরের কাগজ

সাদা পাথর আর নীল জলের দেশ ভোলাগঞ্জ। সাদা পাথর আর নীল জলের কাব্য কথায় স্বপ্নেরা ঘুরে বেড়ায় শ্বেত শুভ্র মেঘ হয়ে। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণার ছন্দে পাখনা মেলে রঙিন প্রজাপতি। এমনই স্বপ্নের আবেশে মন ডুবে যায় সিলেটের ভোলাগঞ্জে। মন চাইলেই চোখ ফেরানোর সুযোগ নেই প্রকৃতির এই স্বর্গরাজ্য থেকে। মনের ক্লান্তি নিমিষেই শুষে নেয় এখানকার বাতাস। তাই পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়ে সবসময় মুখর ভোলাগঞ্জের পরিবেশ।

ভোলাগঞ্জ, সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রাম। মেঘালয়ের কোল ঘেষে বয়ে চলা ধলাই নদীর পাড়ে বিচ্ছিন্ন জনপদ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই গ্রাম। পাহাড়ের পায়ের কাছে ঝর্ণার পানি জমে জমে সৃষ্টি হয়েছে এই ধলাই নদীর। মেঘালয়ের পাহাড়ের গা বেয়ে বেয়ে বহু জনপদ মারিয়ে বাংলার মাটিকে করেছে গর্বিত ধলাই। উজান থেকে বয়ে নিয়ে আসে প্রতি মুহূর্তেই মূল্যবান সাদা পাথর। এই সাদা পাথরের ধলাই নদীর অর্থনৈতিক গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি ঐশ্বর্যমণ্ডিত করেছে সিলেটের সীমান্ত গ্রাম ভোলাগঞ্জকেও।

এ নদীর একাধিক নাম। কেউ বলে ধলই আবার কারো কাছে ধলাই নদী। পাহাড়ী নদী বলেই সমতলের অন্য নদীর মতো ধলাই নদীর গভীরতা খুবই কম। ঋতুভেদে কখনো থাকে হাটুজল, কখনো কোমর কিংবা কখনো কখনো ৪ফুট পর্যন্ত পানি ধরে এই শ্বেত পাথরের নদী। ধলাইয়ের বুকে জমে আছে অগণতি সাদা পাথর।

সিলেট শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভোলাগঞ্জ। এসব পাথর আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলায় গঠিত। নদীর বুকে বয়ে চলায় পাহাড়ি শীতল জলের ধারা শুধু ধলাইকেই সমৃদ্ধ করেনি তৃপ্ত করে চলেছে লাখ লাখ পর্যটকের মন। তাই বছরের বেশিরভাগ সময় ভোলাগঞ্জে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। পাহাড়ি ঝর্ণা ধলাই নদীর পানি আর সাদা পাথরের একমাত্র উৎস হলেও কোথাও এসেছে মনু নদীর জল। দুয়ে মিলে বয়ে নিয়ে চলা শান্ত জলের ধারা সমর্পন করেছে কুশিয়ারা নদীতে। ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট এলাকাজুড়ে প্রকৃতি যেন বিছিয়ে রেখেছে সাদা পাথরের জমিন। সীমান্তবর্তী ধলাই নদীর ১০ নম্বর ঘাট ধরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সামনে এগিয়ে গেলেই মিলবে আরো বিস্তীর্ণ পাথরের এলাকা। কেউ কেউ এলাকাকে সাদা পাথর নামেও পরিচয় করিয়ে দেয়।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর দেখতে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। বছরের যে কোন সময়ই আপনি ভ্রমণ করতে পারেন ভোলাগঞ্জে। ঋতুভেদে ভোলাগঞ্জ আর ধলাই নদী একেক রূপে আবির্ভূত হয়। পর্যটক হিসেবে বছরের যে কোন সময় আপনার মন ভরিয়ে দিতে পারে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর আর ধলাইয়ের শান্ত, শীতল জল। তবে চঞ্চলা ধলাই নদী দেখতে অবশ্যই পূর্ণ বর্ষায় ভ্রমণ করতে হবে। তখন দুই কূল ছাপিয়ে বয়ে চলে ধলাই নদী। বুকে বয়ে নিয়ে চলে ছোট বড় সাদা পাথর ভাটির দিকে। তবু তখনও দেখা মিলবে সাদা পাথরের। অর্ধ ডুবন্ত বড় বড় পাথরগুলো দেখে মনে হবে যেন স্না করছে শীতল জলে। পাথর আর জলের এমন মিতালী আর কোথাও খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। একসাথে বয়ে চলার কল্লোলে বাজে সুরের মুর্চ্ছনা, বাজবে আপনার হৃদয়ও।

পাথরের গায়ে ধ্যানী বুদ্ধের মতো বসে তুলে নিতে পারবেন আলোকচিত্র যা আপনার স্মৃতির পাতায় ছবি হয়ে থাকবেই জনমভর। প্রকৃতির এ প্রেম মানুষ কখনো ভুলতেই পারে না। বর্ষার খানিক পরে গেলে ভোলাগঞ্জকে দেখবেন অন্যরকম মোহনীয় রূপে। তখন যে দিকেই তাকাবে দৃষ্টির সীমানায় শুধু সাদা আর সাদা পাথর।

কিভাবে যাব ভোলাগঞ্জ: দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে প্রথমেই আসতে হবে সিলেট শহরে। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক, রেল কিংবা আকাশপথে আসতে পারেন সিলেট। ঢাকার সায়েদাবাদ, কল্যাণপুর, শ্যামলী, ফকিরাপুল, আরামবাগ ও কলাবাগান থেকে সহজেই পেয়ে যাবেন সিলেটগামী অনেক বাস। গ্রীনলাইন, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ কিংবা এনা পরিবহনে চড়ে বসতে পারেন সন্ধ্যা ৬টার পর যে কোন ট্রিপে। ঢাকা থেকে সিলেট আসতে সময় লাগবে ৫-৬ ঘণ্টা ভাড়া নন এসি বাসে ৫০০-৭৫০ এবং এসি বাসে ১২০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। এছাড়া কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন নিয়মিত সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসছে ভাড়া এবং সময় প্রায় বাসের মতোই। তবে আপনি যদি আকাশপথে আসতে চান সেক্ষেত্রে সময় লাগবে ৩০-৪০ মিনিট এবং খরচ হবে ৩০০০-৫০০০ টাকা পর্যন্ত।

সিলেট শহরে নেমে গেলে ধরে নিন চলেই এসেছেন ভোলাগঞ্জ। শহর থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভোলাগঞ্জ। যাওয়ার বাহন হিসেবে থাকছে বিআরটিসির বাস কিংবা সিএনজি। এছাড়াও যে কোন শেয়ার মাইক্রোবাসেও যেতে পারেন তা সম্পূর্ণই পর্যটকের স্বচ্ছন্দের উপর নির্ভর করে। আম্বরখানা থেকে বিআরটিসির বাসে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৭০ টাকা। নামতে হবে জিরো পয়েন্টে। সিএনজিতে শেয়ার করে গেলে ভাড়া পড়বে ১০০-১২০ টাকা টাকা এবং আসা যাওয়া রিজার্ভ করে গেলে ভাড়া পড়বে ১২০০-১৫০০ টাকা।

সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলাচল করে বিআরটিসি। সিএনজিতে গেলে রিজার্ভ করে যাওয়াই ভালো কারণ ফেরার পথে অনেক ক্ষেত্রেই সিএনজি পাওয়া মুশকিল হলে পড়ে। তবে যেভাবেই যাবেন সময় লাগবে কমবেশি এক ঘন্টা। ভোলাগঞ্জ বাজারে পৌঁছে ১০ নম্বর ঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে যেতে হবে সাদা পাথরের দেশে। ১০ জনের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নৌকার ভাড়া পড়বে ৮০০ টাকা।

ভোলাগঞ্জে থাকা ও খাওয়ার কি ব্যবস্থ: ভোলাগঞ্জ বর্ডার এলাকায় খাবারের অনেক রেস্তোরাঁ আছে। সেখানে দুপুরের খাবার সেড়ে নিতে পারবেন। থাকার জন্য ভোলাগঞ্জ বাজারে রয়েছে একটি হোটেল ও একটি রিসোর্ট। হোটেল থাকতে পারবেন ৮০০-১০০০ টাকায় ও ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর রিসোর্টে থাকতে পারবেন ২৫০০-৫০০০ টাকায়।

কিছু জরুরি নির্দেশনা: স্রোতের পানিতে সাঁতার কাটতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, বর্ডার এলাকা যেন অতিক্রম না হয় খেয়াল রাখতে হবে। সন্ধ্যার আগে জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে চলে আসতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App