×

জাতীয়

নীতির প্রশ্নে সিপিবি আপসহীন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৩, ০৮:৪৪ পিএম

নীতির প্রশ্নে সিপিবি আপসহীন

সোমবার (৬ মার্চ) সিপিবির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: ভোরের কাগজ

রাজনীতি যখন কেনাবেচা, আখের গোছানো, নোংরা খেলা, সেখানে নীতির প্রশ্নে আপসহীন থেকে শ্রমিক-কৃষক, মেহনতি মানুষের পার্টি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ‘মানুষ ও প্রকৃতির মুক্তির’ লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, শ্রমিক শ্রেণিসহ মেহনতি মানুষের নেতৃত্বেই গণসংগ্রাম গড়ে তুলে সিপিবি ক্ষমতায় যাবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নেতারা।

সোমবার (৬ মার্চ) সিপিবির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা।

বিকেল চারটায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। এসময় ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, অধ্যাপক এএন রাশেদা, সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাজ্জাদ জহির চন্দন, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, আব্দুল্লাহ আল ক্বাফি রতন, আহসান হাবিব লাভলু, জলি তালুকদার, ডা. দিবালোক সিংহ, ডা. সাজেদুল হক রুবেল, লুনা নূর, অ্যাড. সোহেল আহমেদ, অ্যাড. মাকসুদা আকতার লাইলি, রাগিব আহসান মুন্না, অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজা, লাকি আকতার, আবিদ হোসেন, অ্যাড. আইনুন নাহার লিপি, কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম, সদস্য অধ্যাপক ডা. এমএ সাইদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক জাহিদ হোসেন খান, হাসিনুর রহমান রুশোসহ পার্টির শত শত প্রবীণ, নবীন, নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সিপিবি সবচেয়ে অপসহীন ও মেহনতি মানুষের স্বার্থে যোগ্য রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আর এই শক্তি ও দৃঢ়তা অর্জন করেছে তার ৭৫ বছরের লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, বেআইনি থাকার পরেও পাকিস্থানের দীর্ঘ শাসন ও শোষণবিরোধী লড়াইয়ে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা ছিল কিংবদন্তিতুল্য।

ওই সময় নানাভাবে কমিউনিস্টদের হত্যা করা হয়। ১৯৫০ সালে ২৪ এপ্রিল রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট রাজবন্দিদের নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়, যা ছিল প্রথম জেল হত্যা। পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন, দুর্নীতি-লুটপাট রুখে দাঁড়াতে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, জাতীয় সম্পদ রক্ষা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনসহ দেশের সব শ্রেণিপেশার আন্দোলনে সিপিবি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি বলেন, নানা সংকটের মধ্যেও আদর্শবাদী ও শ্রেণিভিত্তিক পার্টি হিসেবে সিপিবি তার আন্দোলন ও লড়াই সংগ্রামের ধারাকে অব্যাহত রেখেছে বিগত ৭৫ বছর ধরে। হাজার হাজার কমরেডের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকে এই স্বাধীন স্বদেশ আমরা পেয়েছি। বিশ্বব্যাপী সকল শোষণ ও বঞ্চনা ও সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজদের বিরুদ্ধেও সিপিবি বরাবরই সরব থেকেছে।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলাবাহিনীর সার্বিক কার্যক্রম মুক্তিযুদ্ধে এনেছিল নতুন এক মাত্রা, যা জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে আজও স্মরণ করে। আজকের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বি-দলীয় লুটপাট ও ক্ষমতাকেন্দ্রীয় ভাগ-বাটোয়ার ধারার বিপরীতে সিপিবি আদর্শের ঝান্ডা নিয়ে অন্যান্য বামপন্থীদের নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি যখন কেনাবেচা, আখের গোছানো, নোংরা খেলা, সেখানে নীতির প্রশ্নে আপসহীন কমিউনিস্ট পার্টি।

তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ লুটপাটের এক মহোৎসব সৃষ্টি করেছে। জনগণ দুঃশাসনে অতিষ্ট, ন্যূনতম ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষের প্রকৃত আয় কমলেও মূল্যবৃদ্ধি দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করলেও, অন্যদিকে ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা করে কিছু মানুষ বিদেশে লক্ষ কোটি টাকা পাচার করছে। কিন্তু তার কোনো বিচার নাই। তথাকথিত কাঠামোগত উন্নয়ন (যার ভেতরে ভরপুর দুর্নীতি) দিয়ে মানুষকে একটি কাল্পনিক উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখাতে তারা পটু। অন্যদিকে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি তার বিগত দিনের দেউলিয়াপনা আজও ঘুচাতে ব্যর্থ। তাছাড়া জামাতসহ সাম্প্রদায়িক দলগুলো বরাবরের মতই একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্নেই বিভোর। এই সুযোগে বিরাজনীতিকরণের শক্তি মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে।

সিপিবির এই নেতা বলেন, এই সার্বিক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সিপিবি একটি বিকল্প রাজনৈতিক বলয় গড়তে নীতিনিষ্ঠ জায়গা থেকে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই সংগ্রামে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। নীতিহীন শক্তিকে ‘না’ ও নীতিনীষ্ঠ শক্তিকে ‘হ্যাঁ’ বলতে হবে।

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন এর দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সমাবেশ শেষে একটি বর্ণাঢ্য লাল পতাকা মিছিল পুরানা পল্টন, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, দিলকুশা, গুলিস্তান হয়ে পার্টি কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।

৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজ ঢাকার বিভিন্ন থানাসহ সারাদেশের জেলা সদর ও উপজেলা, থানায় পার্টি কার্যালয়ের সামনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া, বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সমাবেশ ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App