উন্নয়নে ৫ সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৩, ০৯:২৯ পিএম
সোমবার কাতার ফাউন্ডেশন সদর দপ্তরে সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শেখ মোজা বিনতে নাসেরের সঙ্গে আলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনসহ আরো অনেকে। ছবি: পিএমও
স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে পাঁচটি সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে (এলডিসি-৫) সাইডলাইনে সোমবার (৬ মার্চ) স্থানীয় সময় দুপুরে কাতার জাতীয় কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) ‘ইনভেস্ট ইন রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইন এলডিসি ফর স্মার্ট অ্যান্ড ইনোভেটিভ সোসাইটিস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর অধিকার, যুদ্ধ-সংঘাতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সোচ্চার কণ্ঠস্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে উন্নীত হতে সাহায্য করবে।
স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে পাঁচটি ‘কী-সাপোর্ট’ (মূল সহায়তা) চান তিনি।
- প্রথম সহায়তা হিসেবে শেখ হাসিনা জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে কার্যকর প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক বেসরকারি খাতকে যথাযথ প্রণোদনা প্রদান করার কথা বলেন।
- দ্বিতীয়ত, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ব্রডব্যান্ড বিভাজন ও প্রযুক্তিগত বৈষম্য কমাতে ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ সহায়তা করার কথা বলেন তিনি।
- তৃতীয়ত, স্বল্পোন্নত দেশগুলো যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে সেগুলো মোকাবেলায় গবেষণা পেশাদার ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
- চতুর্থত, সহায়তা হিসেবে তিনি স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পরও ট্রিপস চুক্তির আওতায় ‘এলডিসি ছাড়’ অব্যাহত রাখার কথা বলেন, বিশেষ করে ওষুধ ও অ্যাগ্রো-কেমিক্যালসে।
- পঞ্চমত, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে উদ্ভাবন এবং উন্নয়ন উভয়ের জন্য উপযোগী একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করার কথা বলেন শেখ হাসিনা।
রূপকল্প-২০৪১ এর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার পরবর্তী লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়া। স্মার্ট বাংলাদেশের মূল ভিত্তি হবে চারটি- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনোমি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে তাঁর সরকার জনগণের কাছে ২০২১ সালের মধ্যে একটি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছিলেন। ওই সময়ে এটিকে ‘রূপকথা’ বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু, কোভিড-১৯ মহামারি প্রমাণ করেছে যে- আমরা আমাদের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারি।
গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মহামারি আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে যে- এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে বিনিয়োগের জন্য আর অপেক্ষা করা উচিৎ নয়। তাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ধরনের বিনিয়োগ করা অপরিহার্য।
তিনি বলেন, যে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য এলডিসিগুলোর গড় জিডিপি ব্যয় এখনও শূন্য দশমিক ছয় শতাংশের নিচে রয়েছে ও তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকটি বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে রয়েছে।
বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আবির্ভাবের সাথে স্বল্পোন্নত দেশগুলো পিছিয়ে থাকার মতো অবস্থায় নেই। আমাদের তরুণদের ভবিষ্যৎ কাজে সম্পৃক্ত করা উচিত। এর জন্য আমাদের অর্থপূর্ণ বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব দরকার।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে (এলডিসি-৫) যোগ দিতে শনিবার (৪ মার্চ) কাতার সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৮ মার্চ দেশে ফিরবেন তিনি।