×

সম্পাদকীয়

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা : ব্যাংক ও রাজস্ব খাতে সংস্কার জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৩, ০১:৩৪ এএম

বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম সামনে রেখে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণসহায়তা দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশের এই ঋণ প্রাপ্তি অবশ্যই ইতিবাচক। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং এ ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো ঠেকাতেই এ ঋণ দিয়েছে আইএমএফ। যেসব সংস্কারের ব্যাপারে আইএমএফ ও বাংলাদেশ একমত হয়েছে সেগুলো হলো- রাজস্ব সংস্কার, মুদ্রা ও বিনিময় হারের সংস্কার, আর্থিক খাতের সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত সংস্কার এবং সামষ্টিক কাঠামো সংস্কার। সরকার ইতোমধ্যে সংস্কারকাজে হাত দিয়েছে, যার প্রভাব জনজীবনে পড়তে শুরু করেছে। করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অনেক দেশই চরম অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে। আমাদের দেশেও পড়েছে এর প্রভাব। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া তার মধ্যে অন্যতম। ইতোমধ্যে সরকার জ¦ালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আইএমএফের সংস্কার শর্তের কারণে সরকার এসব বিষয়ে ভর্তুকি কমিয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংকিং খাত ও রাজস্ব খাতে সংস্কার করা হলে ভর্তুকি কমানোর প্রয়োজন হতো না। আমরা মনে করি এই জায়গাগুলো সংস্কারে সরকার নজর দিলে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই কমে আসবে। এতে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকবে। অর্থনৈতিক খাতে যে বিশৃঙ্খলা, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংকের সুদহার, এক্সচেঞ্জ রেট বাজারমুখী করা দরকার। ব্যাংকিং খাতে সংস্কার, এনবিআরের সংস্কার করে সরাসরি ট্যাক্সেশন বাড়ানো- এসব বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি। এগুলো সংস্কার করা হলে সরকারের ভর্তুকি দেয়ার সক্ষমতা বাড়বে, ব্যয় সক্ষমতাও বাড়বে। কেবল ব্যয় সংকোচন নীতি, ভর্তুকি কমানোয় সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থনীতির বর্তমান সময়ে চরমভাবে চাপে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। আয় না বাড়লেও ব্যয় বেড়েছে অনেক। দেশের অর্থনীতিতে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি কাটাতে আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ নেয়ার কোনো বিকল্প ছিল না। আমরা চাই এই ঋণের যথাযথ ব্যবহার হোক। ব্যাংক খাতে উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এ সমস্যা অনেকটাই প্রকট। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। আইএমএফের ঋণের ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কিছুটা কমেছে এবং বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তবে জ¦ালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর ফলে উৎপাদন খাতে ব্যয় বেড়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির সাম্প্রতিক মন্দার প্রভাবে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রবণতা, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা, আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যশস্যের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং সরকারের ব্যয়ের সঙ্গে রাজস্ব আয়ের ব্যবধান বাড়তে থাকা চিন্তার কারণ। জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোয় সরকারের আয়-ব্যয়ের ঘাটতি কিছুটা কমলেও সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে চাপ বাড়ছে। তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষভাবে বেড়েছে কৃষি উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয়। সেই ধারাবাহিকতায় নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে গেছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কৃষি, জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রয়োজনীয় খাতে ভর্তুকি জরুরি। আমরা মনে করি, অর্থনীতির এ সংকট কাটাতে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। জনস্বার্থে কেবল ভর্তুকি না কমিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আমলে নিয়ে ব্যাংক, রাজস্ব ও আর্থিক খাতগুলো সংস্কারের মাধ্যমে সামনে এগোতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App