×

আন্তর্জাতিক

বাখমুত দখলে নেয়ার দ্বারপ্রান্তে রুশ বাহিনী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৩, ০৮:২৫ এএম

বাখমুত দখলে নেয়ার দ্বারপ্রান্তে রুশ বাহিনী

ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রহীন নতুন ন্যাটো চায় হাঙ্গেরি হোয়াইট হাউসে আলোচনায় বাইডেন-শলৎজ ভারতকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র মতৈক্য ছাড়াই শেষ জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন

ইউক্রেনের ডনবাস প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুত নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দ্বারপ্রান্তে আছে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ। বর্তমানে শহরটির ভেতর ঢুকে পড়েছে কিছু সেনা। এছাড়া শহরটি চারদিক দিয়ে ঘিরেও ফেলা হয়েছে। দীর্ঘ ৮ মাস ধরে বাখমুত দখলে অব্যাহত চেষ্টা করে যাচ্ছিল তারা।

সিএনএন শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাখমুতে থাকা ইউক্রেনীয় ড্রোন ইউনিটকে এরই মধ্যে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাখমুতের পাশের শহর চাসিভ ইয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুও উড়িয়ে দিয়েছে রুশ বাহিনী। খ্রোমোভ গ্রামের এ সেতুটি বাখমুত-চাসিভ ইয়ারের মধ্যে রসদ সরবরাহের প্রধান পথ ছিল। শুধু তাই নয়, এ সেতু উড়িয়ে দেয়ার কারণে বাখমুতে থাকা বেসামরিক মানুষ ও যুদ্ধাস্ত্র নিয়েও সহজে বের হতে পারবে না ইউক্রেনীয় বাহিনী। এখন তাদের ব্যবহার করতে হবে কর্দমাক্ত মাঠ।

বাখমুতে মোতায়েনকৃত ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর এক সেনা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে সেতুটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে রুশ বাহিনী। এতে সেতুর বড় একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, ওয়াগনার গ্রুপ প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন শুক্রবার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সেই ভিডিওতে তিনি বলেছেন, বাখমুত এখন ‘কার্যত ঘিরে ফেলা হয়েছে।’ তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি যেন নিজ সেনাদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। কারণ বর্তমানে ইউক্রেনীয় সেনাদের বাখমুত ছাড়ার জন্য মাত্র একটি পথই খোলা আছে। এদিকে বাখমুতকে রক্ষায় সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ইউক্রেনের সেনারা। কিন্তু রুশ বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে আপাতত বাধ্য হয়ে তাদের সরে যেতে হচ্ছে। বাখমুত দখলে রুশ বাহিনী এতই হামলা চালিয়েছে যে, শহরটির বেশিরভাগ ভবন এরই মধ্যে ধসে গেছে।

রাশিয়ার গ্রামে ঢুকে গুলি চালানোর অভিযোগ : রাশিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রামে ঢুকে ইউক্রেনীয় বাহিনী বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালিয়েছে বলে দাবি করেছে মস্কো। এদিকে মস্কোর এ অভিযোগ অস্বীকার করে কিয়েভ বলছে, এটি রাশিয়ার ‘ইচ্ছাকৃত উসকানি’।

মস্কো বলছে- বৃহস্পতিবার ইউক্রেন সীমান্তঘেঁষে তাদের এলাকায় নিয়মিত গুলি ছুড়ছে ইউক্রেনীয় সেনারা। গতকাল শুক্রবারও রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে ঢুকে তারা গুলি ছুড়েছে। মস্কোর এমন দাবির পরপরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, আজ আরো হামলা চালালো সন্ত্রাসীরা। সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে তারা।

ব্রায়ানস্ক অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্ডার বোগোমাজ বলেছেন, ইউক্রেন সীমান্তঘেঁষে তাদের একটি গ্রামে ঢুকে বেসামরিক গাড়িতে গুলি চালিয়ে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১০ বছর বয়সি একটি ছেলে আহত হয়েছে।

রাশিয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলেনস্কির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক বলেন, সীমান্তে হামলা চালানোর বিষয়টি রাশিয়ার ইচ্ছাকৃত উসকানি। অন্য দেশের ওপর হামলা চালানো ন্যায়সঙ্গত বিষয়টি বোঝাতে রাশিয়া তার জনগণকে ভয় দেখাতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রহীন নতুন ন্যাটো চায় হাঙ্গেরি : নিজেদের প্রতিরক্ষায় ইউরোপের ন্যাটোর মতো নতুন আরেকটি সামরিক জোট গঠন করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান। তবে তিনি বলেছেন, ‘নতুন ন্যাটো’ গঠিত হতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া। যেখানে মার্কিনিদের কোনো প্রভাব থাকবে না। অরবানের অভিযোগ, ইউরোপকে যুদ্ধে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যে যুদ্ধে জয় পাওয়া যাবে না। উল্টো এটি বিশ্বযুদ্ধে গড়াতে পারে। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের ম্যাগাজিন ওয়েল্টওচের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ন্যাটোরই সদস্য দেশ হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী। ভিক্টর অরবান বলেন, ‘সমস্যার সমাধান হবে, একটি ইউরোপিয়ান নতুন ন্যাটো গঠনের মাধ্যমে।’ তিনি আরো বলেন, ইউরোপে ন্যাটোর পরিধি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের যে আকাক্সক্ষা আছে, সেটিই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাঁধিয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে হওয়া একটি আলাপচারিতার বিষয়টিও তুলে ধরেন ভিক্টর অরবান। তিনি জানান, ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর আগে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। সেই বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, হাঙ্গেরি ন্যাটোর সদস্য এ নিয়ে রাশিয়ার কোনো সমস্যা নেই। রাশিয়ার সমস্যা হলো জর্জিয়া এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য বানানো নিয়ে।

এ ব্যাপারে অরবান বলেন, ‘পুতিন আমাকে বলেছিলেন, পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নিয়ে তার সমস্যা আছে। এছাড়া ইউক্রেন এবং জর্জিয়ায় ন্যাটোর পরিধি বাড়ানো নিয়ে তার সমস্যা আছে। পুতিনের মূল চিন্তা ছিল এ দুটি দেশে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অস্ত্র মোতায়েন করবে।’ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) কড়া সমালোচনা করে ভিক্টর অরবান বলেন, নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ হাসিল করছেন ইইউর কূটনীতিকরা। তিনি দাবি করেন, হাঙ্গেরি এ যুদ্ধ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু অন্য দেশগুলো তাদের সর্বোচ্চ চাপ দিচ্ছে, যেন তারাও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।

হোয়াইট হাউসে আলোচনায় বাইডেন-শলৎজ : ইউক্রেনে হামলার জন্য চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে, এমন আশঙ্কার মধ্যে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠকে বসেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। জার্মানির শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার চীন। এ কারণে ইউরোপীয় দেশগুলো বেইজিংয়ের প্রতি কঠোর অবস্থান নেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি সতর্ক। যদিও বৈশ্বিক প্রতিদ্ব›িদ্বতা আরো উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে বার্লিন।

রাশিয়াকে যেন চীন অস্ত্র সরবরাহ না করে সে আহ্বান জানিয়ে জার্মান পার্লামেন্টে বৃহস্পতিবার শলৎজ বলেন, ‘সেনা প্রত্যাহারে মস্কোকে চাপ দিতে চীন তার প্রভাব খাটাতে পারে।’

ইউক্রেনে সামরিক ও মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। তবে ট্যাংক সরবরাহের মতো বিষয়গুলোতে বিভক্ত ওয়াশিংটন-বার্লিন। এ ইস্যুতে জার্মানির দ্বিধা নিয়ে প্রায়ই হতাশা প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্র।

ভারতকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে ভারতের সঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভারতের নৈতিকভাবে কথা বলার সক্ষমতা রয়েছে। জি-২০ সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে ভারত ও বন্ধুদেশগুলোকে যুদ্ধ বন্ধে অবশ্যই ভূমিকা রাখতে হবে। ভারতের সঙ্গে আমাদের কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক রয়েছে।

নেড প্রাইস বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক দিক দিয়ে রাশিয়া জড়িত। এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে রাশিয়ার হামলা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে কাজ করবে বলে তিনি আশা করেন। যুদ্ধ শেষ করতে ভারত কী ভূমিকা রাখতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে নেড প্রাইস বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, এটি যুদ্ধের যুগ নয়। মোদির এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

মতৈক্য ছাড়াই শেষ হলো জি ২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন : ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনো ধরনের মতৈক্য ছাড়াই বৃহস্পতিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে শেষ হয়েছে জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন। রাশিয়ার প্রতি ইউক্রেন থেকে নিঃশর্তভাবে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে তৈরি করা হয়েছিল যৌথ বিবৃতি। কিন্তু রাশিয়ার আপত্তিতে চীন সমর্থন জানানোয় তা আলোর মুখ দেখেনি।

সম্মেলনে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে বলেন, এ যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বন্ধ করুন। ইউক্রেনের শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমাবর্ষণ থেকে বিরত থাকুন। জবাবে ল্যাভরভ বলেন, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ভণ্ডামি করছে। কারণ তারা বছরের পর বছর ধরে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। আর রাশিয়ার বিরুদ্ধে অন্য দেশের অস্ত্র সরবরাহের মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত বিবৃতি অনুসারে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সম্মেলনে বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার বর্ণনা দিয়ে। তবে বৈঠকে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ অসম ও তা কোনোভাবেই চলতে পারে না।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, একেক দেশ একেক মত পোষণ করায় ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যে মতানৈক্য ছিল, তা দূর করা সম্ভব হয়নি। তবে অন্য বেশ কয়েকটি বিষয়ে মতৈক্য অর্জন করা গেছে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে খাদ্য-জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়ানো, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় করণীয়, লিঙ্গ বৈষম্য ও সন্ত্রাসবাদ দূরীকরণ ইত্যাদি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App