×

জাতীয়

বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার রয়েছে আত্মীয়তার সম্পর্ক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৬ এএম

বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার রয়েছে আত্মীয়তার সম্পর্ক

ডা. মানিক সাহা। ফাইল ছবি

আগরতলা রেলস্টেশন থেকে নির্মাণাধীন উড়াল রেলপথ দেখিয়ে ট্যাক্সিচালক গৌরব বসাক জানালেন, এই রেলপথটি সোজা গিয়ে বাংলাদেশের আখাউড়ায় মিলবে। এই পথটি হওয়ার পর ত্রিপুরা তথা আগরতলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। তখন এই আগরতলা, এই ত্রিপুরার মাটি স্বর্ণের মতো হয়ে যাবে। এর ঠিক পরের লাইনে নিজেই নিজের কথার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ছোট্ট ত্রিপুরায় যখন আন্তর্জাতিক রেলপথ বসবে তখন এখানকার মানুষ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মাত্র ১২ ঘণ্টায় কলকাতা যেতে পারবে। ব্যবসা থেকে শুরু করে সব সামাজিকতা হাতের মুঠোয় চলে আসবে। প্রসঙ্গত, এখন ত্রিপুরা থেকে ট্রেনে কলকাতা যেতে কমপক্ষে দেড় থেকে দুদিন লাগে।

ঠিক গৌরবের এই কথার রেশ ধরেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বললেন, ১৯৭১ এর আগে-পরে বাংলাদেশ থেকে বহু লোক এখানে এসেছেন। কিন্তু তাদের বহু আত্মীয় এখনো বাংলাদেশে রয়ে গেছেন। এরফলে ত্রিপুরায় রাজনৈতিকভাবে পরিবর্তনই হোক বা প্রত্যাবর্তন- সেটি নিয়ে বাংলাদেশের লোক ত্রিপুরার দিকে যেমন তাকিয়ে থাকে; তেমনি উন্নয়নের গল্প শুনে আনন্দিত হয়। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে ত্রিপুরা তথা আগরতলার যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন এবং পারষ্পরিক বোঝাপড়া রয়েছে সেটি যেন আগামীতে আরো শক্তিশালী হয়, এমন আশা জাগানিয়া কথা তুলেই ভোরের কাগজের কাছে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার সম্পর্কের বর্ণণা দিলেন তিনি।

গত ২ মার্চ ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটের ফল বের হয়। এই ভোটে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা নিজেও একজন প্রার্থী ছিলেন। হাজার ভোটের ব্যবধানে তিনি কংগ্রেসের

প্রার্থী আশিস সাহাকে পরাজিত করে বিধায়ক নির্বাচিত হন। এখানকার সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে গতকাল শুক্রবার তিনি ত্রিপুরার রাজ্যপাল সত্যদেব নারায়ণের কাছে গিয়ে বিদায়ী সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত পরবর্তী সরকার গঠন হচ্ছে না ততদিন পর্যন্ত তিনিই ত্রিপুরার মুথ্যমন্ত্রীর কাজ চালিয়ে যাবেন। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, আগামী ৮ মার্চ ত্রিপুরার পরবর্তী সরকার শপথ নেবে। বিজেপি থেকে ডা. মানিক সাহাই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন।

এরআগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভোরের কাগজ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার সঙ্গে তার নির্বাচনী দপ্তরে কথা বলে। কথার শুরুতেই তিনি ১৯৭১ টেনে এনে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে-পরে বেশিরভাগ লোক পূর্ব পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এসেছে। ত্রিপুরার সঙ্গে প্রকৃতিগতভাবেই বাংলাদেশের মানুষের মিল রয়েছে। এখানকার খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে ভাষার মিল পর্যন্ত রয়েছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অর্থাৎ ত্রিপুরাবাসীর সাদৃশ্যের যে বিষয়টা সেটা কিন্তু এখানে প্রায়ই দেখা যায়। তাছাড়া একাত্তরে যে যুদ্ধ হয়ে গেল, সেই যুদ্ধে বিশেষ করে ত্রিপুরা ও আগরতলার লোক যেভাবে সাহায্য করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু এখানকার মানুষ কেন, আমাদের ভারতীয় সৈন্যরা যেভাবে পূর্ব পাকিস্তানের ভেতর ঢুকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করে স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তার ইতিহাস সবার জানা।

এ কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ত্রিপুরা তথা আগরতলাবাসীর প্রতি আলাদা একটা টান রয়েছে। এটা ভালোবাসারও একটা স্থান বলা যেতে পারে। এর জন্য এখানে যারা, অর্থাৎ ভারতে আছেন বিশেষ করে ত্রিপুরাতে, তাদের আত্মীয়স্বজন কিন্তু এখনো বাংলাদেশে রয়ে গেছেন। তো সেইদিক দিয়ে চিন্তা করলে বলা যায়, আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের আত্মীয়তার একটি সূত্র আছে। সঙ্গতকারণে এখানে যাই ঘটুক, রাজনৈতিক পরিবর্তন কিংবা প্রত্যাবর্তন- সেটির দিকে বাংলাদেশের লোক তাকিয়ে থাকে এবং তাদের মধ্যেও একটা প্রভাব পড়ে। তো সেই দিক দিয়ে আমি বলব, আমাদের ভারতবর্ষকে, ত্রিপুরাকে ভালোবাসেন তারা। একইসঙ্গে ত্রিপুরার যে ইতিহাস রয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং শক্তিশালী বন্ধন রয়েছে সেই বন্ধনটি যেন আগামীতে আরো শক্তিশালী হয়- সেই আশা প্রকাশ করছি।

ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্কতো আছেই। আমদানি-রপ্তানি হয়। তাছাড়া সম্প্রতি চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও ত্রিপুরার সাব্রুমের মধ্যে মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হবে এই অঞ্চল। আগামীতে এসব অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে অনেকবেশি উন্নত হবে। এ কারণে সবার মধ্যে একটি স্বাচ্ছন্দ্য চলে এসেছে। আমি সেই স্বাচ্ছন্দ্য ধরে রাখতে চাই।

কূটনৈতিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে। পাশাপাশি আমাদের সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তবে এই সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিতে দুই দেশের সরকার যে ভূমিকা নেবে সেটিতেই আমার মতো থাকবে। তবুও ছোটখাটো যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে সেটি আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেয়া যাবে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে মানিক সাহা বলেন, তিনি অসম্ভব ভালো একজন মানুষ। তার প্রতি আমার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা রয়েছে। আপনি তথা আপনার পত্রিকার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এসময় তিনি বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, আগামীতে হয়তো বাংলাদেশ যাব আমি।

এরপর ত্রিপুরার নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখানে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আবারো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই জয় বিজেপির নেতাকর্মীদের জয় বলেও ব্যাখা দিয়েছেন তিনি। তবে গত বিধানসভা নির্বাচন থেকে এবার ত্রিপুরায় বিজেপির আসনসংখ্যা অনেকটিই কমেছে। এমনকী তিনি নিজেও অত্যন্ত কম ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। কেন এমন অবস্থা- প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, হ্যাঁ, এটা সত্যি কথা, আরো বেশি আসনে জয় আশা করেছিলাম। তবে কেন তা হয়নি তা পর্যালোচনায় বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

হিন্দু পঞ্জিকামতে, আগামী ৮ মার্চ দোল পূর্ণিমা তথা হোলি উৎসব। এদিন রংয়ের খেলা। আবীর দান। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ভোটের ফলে ত্রিপুরায় বিজেপি জেতায় এখানে আগাম হোলি উৎসব শুরু হয়েছে। প্রত্যাবর্তনের আনন্দে মেতে উঠেছেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে আবীর উড়ানো থেকে পটকা ফাটানো- থেমে থেমে সবই হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, পরবর্তী মন্ত্রিসভা গঠনের আগ পর্যন্ত এমনটি চলবে। আর এখানেই মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বলেছেন, আমরা শান্তি চাই। কোনো উচ্ছশৃঙ্খলতা পছন্দ করি না।

৬৯ বছরের মানিক সাহা পেশায় ডেন্টাল সার্জন। ২০১৬ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। গত বছরের মে মাসে ডা. মানিক সাহাকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি। যোগদানের পর থেকে গত ৬ বছরে বিজেপিতে স্বপ্নের মতো উত্থান হয়েছে মানিক সাহার। তবে ত্রিপুরার আগামী রাজনীতি খুব একটা অনুকূলে নাও থাকতে পারে। কারণ গেল ভোটে একদিকে বাম-কংগ্রেসের অস্তিত্ব যেমন সংকটে পড়েছে; তেমনি তিপরা মথা নামে পাহাড়ি রাজনৈতিক দলের উত্থান হয়েছে। সবমিলিয়ে এক জগাখিঁচুড়ির রাজনীতির জন্ম হয়েছে ত্রিপুরায়। পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ। কূটনৈতিক গণিতে সেখানেও দেদার যোগ-বিয়োগ হবে। ঘর সামলে-বাইরের দিকও সামাল দিতে পারবেন তো ত্রিপুরার রাজনীতিতে অত্যন্ত কিন্তু ইমেজধারী ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজের দন্ত বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক অধুনা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App