×

সারাদেশ

চৌমুহনী-ফেনী মহাসড়ক উন্নয়ন কাজে ধীরগতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৩, ০৪:২৩ পিএম

চৌমুহনী-ফেনী মহাসড়ক উন্নয়ন কাজে ধীরগতি

ছবি: ভোরের কাগজ

সড়ক বিভাগের আওতায় ৭৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নোয়াখালীর চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে ফেনীর মহিপাল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কের নোয়াখালী অংশে চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে সেবার হাট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন থেকে ফোর লেনে উন্নীতকরণ কাজে ধীরগতির কারণে চরম জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে সেবার হাট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে ছমুন্সি বাজারের পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত সড়কের উত্তর পাশের দুই লেনের কাজ সম্পন্ন হলেও দক্ষিণ পাশের দুই লেন অংশে কোথাও এক লেন, আবার কোথাও কোন কাজই হয়নি। পুরো সড়কের জায়গা জুড়ে রয়েছে স্থাপনা। সড়কের ওই দুই লেনের যেটুকু জায়গা খালি রয়েছে, সে জায়গায়ও ইট, বালি, গাছ ও বিভিন্ন মালামাল ফেলে দখলে রেখেছে স্থানীয়রা। এতে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

ওই সড়কে চলাচলকারী পরিবহনের চালক ও পথচারীরা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ চার বছর আগে এই সড়কের কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু এখনো সড়কের কাজ শেষ হয়নি। সড়কের বিভিন্ন অংশে ইট, বালি, গাছ ও লোকজনের বিভিন্ন জিনিসপত্র রেখে চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হয়। বিভিন্ন সময় এই সরু সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। মানুষজনের ক্ষতি হয়েছে। এভাবে আর কত দিন? দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি।

স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ২০১৯ সাল থেকে এই সড়কের কাজ করবে করবে বলে জায়গা অধিগ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। এতে আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভারি মালামাল সরিয়ে সামান্য মালামাল রেখে ব্যবসা করছি। কিন্তু সময় মতো ভূমি অধিগ্রহণ না করায় আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অন্যদিকে ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও করতে পারছি না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমাদেরকে সড়কের জায়গা খালি করে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার কথা বললেও ভূমি অধিগ্রহণের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে লোকমুখে শুনতে পারছি ভূমি অধিগ্রহণের টাকা দেয়া হবে না। তাই আমরা আতঙ্কে রয়েছি। যার কারণে টাকা বুঝে পাওয়ার আগে আমাদের জায়গার দখল ছাড়বো না।

সড়ক বিভাগ নোয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীর চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে ফেনীর মহিপাল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন থেকে ফোর লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি অনুমোদন পায়। এই প্রকল্পের চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে সেবার হাট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে ২১৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। তাহের ব্রাদার্স, হাসান টেকনো বিল্ডার্স ও রানা বিল্ডার্স নামের একটি যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের এই অংশ বাস্তবায়নে কাজ করছে।

সড়ক উপ-বিভাগ নোয়াখালীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (চাটখিল) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে সেবার হাট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের উত্তর পাশের দুই লেনের জায়গা খালি থাকায় আমরা দ্রুত ওই দুই লেনের কাজ শেষ করে ফেলেছি। সড়কের দক্ষিণ পাশে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘর-বাড়ি, বাজার অংশে দোকানপাট ও দুই-একটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই ওই অংশের ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে। কাজের মেয়াদ আর মাত্র ৪ মাস বাকি, এই সময়ের মধ্যে জায়গা খালি না হলে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে না। তাই আমরা আমাদের হেড অফিসে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চিঠি লিখেছি।

তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় প্রকল্পের চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে সেবার হাট পর্যন্ত ৪টি এলএ কেস করা হয়েছে। এর জন্য ব্যয় করা হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা। ৪টি এলএ কেস এর মধ্যে একটি কেস অধিগ্রহণের মাধ্যমে শেষ করা হয়েছে। অধিগ্রহণকৃত ওই একটি কেসের জায়গায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. রাসেল বলেন, কাজের মান বজায় রেখে প্রকল্পের ৬৫ ভাগ কাজ আমরা গত ৬ মাস আগেই শেষ করেছি। বাকি কাজ শেষ করার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত শ্রমিক ও মালামাল রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ না করায় আমরা কাজ শেষ করতে পারছি না। গত ৬মাস প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কোন কাজ না করিয়ে তাদের বেতন দিয়ে আসছি। অন্যদিকে দিন দিনই মালামালের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পে লোকসান গুণতে হবে।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি অধিগ্রহণ শাখা) শুভ দেবনাথ বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রমে একটু জটিলতা থাকে, চৌমুহনী পূর্ব বাজার থেকে সেবার হাট পর্যন্ত এটি বড় একটি অংশ। এই অংশের চারটি কেস রয়েছে। একটির অধিগ্রহণের টাকা আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া শুরু করবো। বাকি তিনটির কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে।

প্রকল্পের মেয়াদের মধ্যে অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ করতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নোয়াখালীতে এক সঙ্গে অনেকগুলো প্রজেক্ট চলছে। সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট। সব মিলিয়ে সকল কার্যক্রমকে সমান গুরুত্ব দিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রত্যাশী সংস্থার কাছ থেকে টাকা পাওয়ার সাপেক্ষে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি কেসগুলোর ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া শুরু করবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App