×

শিক্ষা

অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার চান ফুলপরী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৩, ১০:২২ এএম

অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার চান ফুলপরী

ছবি: ভোরের কাগজ

অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার চান ফুলপরী
অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার চান ফুলপরী
হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের দাবি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় প্রভোস্টের দায়িত্বে 'চরম অবহেলায়' হাইকোর্টের নির্দেশনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। হলটির সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক ড. আহসানুল হককে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বুধবার (১ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা হাইকোর্ট থেকে যে বার্তা পেয়েছি, সেই অনুসারে ওই হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করেছি এবং হলের সিনিয়র হাউজ টিউটরকে সাময়িকভাবে হল চালানোর জন্য বলা হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্ট হলের হাউজ টিউটরদেরও প্রত্যাহারের নির্দেশনা (হাইকোর্টের) থাকা স্বত্বেও কেন তাদের আবার দায়িত্ব দেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান বলেন, 'হাউজ টিউটরদের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আসেনি। যে নির্দেশনা এসেছে সেই মোতাবেক প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'

হাইকোর্টের আদেশে ফুলপরীর প্রতিক্রিয়াঃ

এদিকে বুধবার (১ মার্চ) হাইকোর্টের আদেশে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি ফুলপরী খাতুন ও তার পরিবার।

আদেশের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফুলপরী বলেন, ‘আমার ওপর তারা যে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে, তাতে অস্থায়ী বহিষ্কার নয় আমি তাদের স্থায়ী বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল চাই। তা না হলে ক্যাম্পাসে ফিরলে আমাকে মেরে ফেলার আশঙ্কা থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি হল পরিবর্তন করতে পারি। সেক্ষেত্রে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল বা খালেদা জিয়া যেকোনো একটিতে উঠতে পারি।’

ক্যাম্পাসে কবে ফিরতে চান জানতে চাইলে ফুলপরীর বলেন, ‘আমি পরিপূর্ণ নিরাপত্তা পেলে এবং স্যাররা যখন জানাবেন তখনই ক্যাম্পাসে ফিরে যাবো।’

ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করতে পারবে কি-না এ বিষয়ে আমরা সন্দিহান। এ ধরনের অপরাধীরা ক্যাম্পাসে আর না থাকুক আমরা সেটাই চাই।’

মামলার প্রস্তুতি ফুলপরীরঃ

ন্যায়বিচারের দাবিতে কুষ্টিয়া কোর্টে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফুলপরী। বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন।

এবিষয়ে ফুলপরীর আইনজীবী এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম (সিরাজ প্রামানিক) বলেন, বুধবার ফুলপরী মামলা করেন নি। অসুস্থতার জন্য আসেনি। মামলার সব কিছু রেডি আছে। ফুলপরী এলে মামলার ফাইল হবে।'

পাঁচ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারঃ

এদিকে সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলাপরিপন্থী, অপরাধমূলক ও সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

বুধবার (১ মার্চ) সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।

তিনি বলেন, 'আমাদের উৎসগুলো থেকে তথ্যের ভিত্তিতে বহিষ্কার করেছি। সকলের সংশ্লিষ্টতা আছে এটা নিশ্চিত। এখন অপরাধ কতটুকু এটাতো বিবেচ্য বিষয়। এখানে তাদের ভুল বা অন্যায় যেটাই হোক। তার গভীরতার ভিত্তিতে বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হবে। এটা স্থায়ীও হতে পারে, অস্থায়ীও হতে পারে।'

ইবি ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়াঃ

অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইকোর্টের বহিষ্কারাদেশ ও সংগঠন থেকেও বহিষ্কারের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও।

শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইবিতে যে র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে এটা খুবই নেক্কারজনক। ছাত্রলীগে কোনো অপরাধীর স্থান হবে না। সেই অপরাধ আমি বা অন্য কেউ যেই করুক না কেন। ব্যাক্তির দায় কখনও সংগঠন নেবে না। এটার মাধ্যমে ভবিষ্যতে যারা অপরাধ করবে তাদের জন্যও একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো।’

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় আমরা যে তদন্ত কমিটি করেছিলাম সেই তদন্তের রিপোর্ট কেন্দ্রে প্রেরণ করেছিলাম। এ সংগঠনের কোন দুষ্কৃতিকারী বা কেউ অন্যায় কাজের সাথে জড়িত থাকলে তাকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। তারই ফলস্বরূপ কেন্দ্র তাদের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিয়েছে আমরা তার স্বাগত জানাই।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়াঃ

সাদিয়া মাহমুদ মিম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা অপরাধীদের যে ধরনের শাস্তির আশা করেছিলাম তা দেখতে পাইনি। আমরা চাই তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক। যাতে ভবিষ্যতে কেউ যেন আর এ ধরনের কাজ করার সাহস না পায়।’

অর্প নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

পাঁচ ছাত্রীর বহিষ্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত শনিবারঃ

এদিকে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীর বহিষ্কারের বিষয়ে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম।

বুধবার (১ মার্চ) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, অভিযুক্ত ছাত্রীদের বিষয়ে হাইকোর্ট থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত এসেছে। আমরা ইতোমধ্যে তাদেরকে হল থেকে বহিষ্কার করেছি। তারা সবাই হল ছেড়ে দিয়েছেন। আগামী শনিবার শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং রয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা ও আদালতের নির্দেশনা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর নিরাপত্তা ও হলে উঠার বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি যেন নির্বিঘ্নে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তার সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চিতের বিষয়ে রেজিস্ট্রার ও ছাত্র উপদেষ্টাকে বলে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে সে যে হলে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবে সে হলেই থাকবে।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় ব্যর্থতাসহ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে হাইকোর্টের মতামত ও নির্দেশনা সম্পর্কে উপ-উপাচার্য বলেন, হাইকোর্টের পর্যালোচনার হার্ডকপি আমরা এখনও পাইনি। ওটা পেলে দেখবো আমাদের কোন কোন জায়গায় ঘাটতি,গাফিলতি রয়েছে, কোন জায়গাগুলোতে আমরা এখনও ভালোভাবে এড্রেস করতে পারিনি। সেগুলো পর্যালোচনায় নিয়ে আমাদের নিজেদের যদি দায় থাকে অবশ্যই মাথা পেতে নেব। এছাড়া মহামান্য হাইকোর্ট যদি ভবিষ্যতের জন্য কোনো নির্দেশনা দেন তাহলে সে অনুযায়ী চলার চেষ্টা করবো । এবং আমাদের কোনও সীমাবদ্ধতা থাকলে সেটাও সংশোধনের চেষ্টা করবো।

স্থায়ী বহিষ্কার করার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিধিবিধান আছে সে বিধিবিধান মেনেই কোন কোন ধারায়, কোন পর্যায়ে কার কতটুকু অপরাধ তা নির্ধারণ করেছেন তদন্ত কমিটি। এবং মহামান্য হাইকোর্ট কি নির্দেশনা দিয়েছেন সবকিছু পর্যালোচনা করে যার পক্ষে যতটুকু সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App