×

আন্তর্জাতিক

ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে ভোট গণনা আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৯ এএম

ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে ভোট গণনা আজ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ লাগোয়া উত্তরপূর্ব ভারতের ত্রিপুরায় আজ বিধানসভা ভোটের ফলাফল বোরোবে। দ্বিতীয়বারের জন্য ত্রিপুরায় ক্ষমতায় ফিরবে বিজেপি নাকি বাম-কংগ্রেস জোটের ওপরে আস্থা রাখবেন উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের মানুষ, নাকি সবাইকে চমকে দিয়ে ত্রিপুরায় সরকার গঠনে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠবে প্রদ্যোৎ মাণিক্যর তিপরামোথা- এসব বিষয় নিয়েই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে গতকাল সবকটি রাজনৈতিক দলই দাবি করেছে তারা ক্ষমতায় আসছে। ভারতের এই রাজ্যগুলোতে ভোট এবং ভোটের পরে কে ক্ষমতায় আসছে সে বিষয়টি নিয়ে গভীর নজর রাখছে বাংলাদেশ।

বুধবার (১ মার্চ) আগরতলা শহর ঘুরে ভোট পরবর্তী সমীক্ষায় বিজেপি ত্রিপুরায় দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় ফেরার আভাস পাওয়া গেছে। এদিকে, বাংলাদেশ লাগোয়া আরেক রাজ্য মেঘালয়েও আজ ভোটের ফল বেরোবে। সেখানে ফলাফল ত্রিশঙ্কু হতে পারে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে আজ নাগাল্যান্ডেরও ফল বেরোবে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি মেঘালয় ও লাগাল্যান্ডে ভোট গ্রহণ হয়েছে।

তবে এবার ত্রিপুরার নির্বাচনে অবশ্যই সবার নজর রয়েছে বাম-কংগ্রেসের অঘোষিত জোট এবং তিপরামোথার দিকে। সরাসরি জোট না বাঁধলেও বিজেপিকে রুখতে আসন সমঝোতার পথে হেঁটেছে বাম এবং কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গে ব্যর্থ হওয়ার পর ত্রিপুরায় তাদের এই কৌশল ফলপ্রসূ হয় কিনা, সেদিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল। আবার পৃথক রাজ্য গ্রেটার তিপরাল্যান্ড গঠনের দাবিতে সরব হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদিবাসীদের সমর্থনপুষ্ট তিপরামোথা শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে কতটা বেগ দেয়, সেটাও দেখার। কারণ ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সদস্য প্রদ্যোৎ মাণিক্যর দল ৪২টি আসনে লড়ছে।

ত্রিপুরার নির্বাচনে আদিবাসীরা অন্যতম বড় ফ্যাক্টর। রাজ্যের ৬০টি আসনের এক তৃতীয়াংশই আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত। গত নির্বাচনে আদিবাসী ভোট টানতে আইপিএফটির সঙ্গে জোট বেঁধেছিল বিজেপি। মাঝে সংঘাতের পর এবারেও দুই দল জোট বেঁধেই লড়ছে। তবে তিপরামোথার উত্থানে অনেকটাই কোণঠাসা আইপিএফটি। এবারের নির্বাচনে মাত্রা ৬টি আসনে লড়ছে তারা। বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে ৫৫টি আসনে। একটি আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে দুই দলের। এর পাশাপাশি ত্রিপুরার ২৮টি আসনে লড়ছে তৃণমূল কংগ্রেস। ত্রিপুরায় ভোট প্রচারে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে ক্ষমতা দখলের কথা বললেও নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বিচার করে শেষ পর্যন্ত ২৮টি আসনেই লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল। লক্ষ্য ত্রিপুরায় নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করা। গোয়ায় ব্যর্থতার পর বাঙালি ত্রিপুরায় তৃণমূল কেমন ফল করে, এই নির্বাচনে সেটিও কৌতূহলের বিষয়।

এদিকে, গোটা ত্রিপুরায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারে প্রশাসন চাইছে, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক এবং গণনার পরবর্তীতে রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা যাতে বজায় রাখতে পারে তার জন্য বিভিন্ন এলাকায় শান্তির বার্তা দিয়ে বৈঠকও করা হচ্ছে। সেই বিষয়কে সামনে রেখে বেশ কয়েক দিন ধরে ময়দানে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের সচিব কীরণ গীত্যেসহ কমিশনের অন্য কর্মকর্তারা। পাশাপাশি রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন এবং বিএসএফ কর্মীরাও ময়দানে তৎপর।

ভোট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ভোট আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় পোস্টাল ব্যালট দিয়েই গণনা পর্ব শুরু হবে। তবে পোস্টাল ব্যালটের গণনা সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ইভিএম গণনা শুরু করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা গণনার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ত্রিপুরায় ২১টি স্থানে গণনা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা কিরণ গিত্যে জানান, গণনা কেন্দ্রে মিডিয়া সেন্টার এবং প্রার্থী ও অবজারভারদের জন্য অস্থায়ী বিশ্রামাগার তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে ভোট ফেরত সমীক্ষায় বলা হয়েছে, নাগাল্যান্ড এবং মেঘালয়ের ক্ষেত্রে চারটি সংস্থাই একইরকম প্রবণতা দেখালেও ত্রিপুরার ক্ষেত্রে তা বিভাজিত হয়ে গেছে। একটি সংস্থার সমীক্ষায় ত্রিপুরায় বিজেপির নিশ্চিত গরিষ্ঠতা দেখানো হলেও বাকি তিনটির ক্ষেত্রে বিজেপি, বামফ্রন্ট-কংগ্রেস এবং তিপ্রা মথার মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্ব›িদ্বতার ইঙ্গিত রয়েছে। ওই সমীক্ষাগুলো মানলে ত্রিপুরায় ত্রিশঙ্কু বিধানসভার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভোটের পর থেকে ঝিমিয়ে থাকা বিজেপি কর্মীদের চাঙ্গা করতে নেতৃত্ব তৎপর হয়ে ওঠেন।

এদিকে, বিভিন্ন জায়গায় নতুন উদ্যমে সিপিআই (এম)সহ বিরোধী দলের কর্মীদের উপরে আক্রমণ করা হয়েছে। ইন্ডিয়া টুডের সমীক্ষাকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরে রাজ্য বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়ার অফিসিয়াল পেজগুলোতে একের পর এক পোস্ট করা হয়েছে। একটি পোস্টের শিরোনাম এইরকম- ‘একদা মানিক সরকারকে ‘সৎ’ মুখ্যমন্ত্রীর উপাধি দেয়া সেই ‘সৎ’ চ্যানেল ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপের সমীক্ষায় বলছে ২০২৩ আবার বিজেপির জয় নিশ্চিত’!

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, সমীক্ষাকে বিশ্বাসযোগ্য করাতেই কি বিজেপিকে এমন প্রচার করতে হচ্ছে? জয়ের ইঙ্গিত মিলতে ত্রিপুরার বিজেপির ফেসবুক পেজেই এক নেতার গানের ভিডিও আপলোড করা হয়েছে, যাতে বলা হচ্ছে সিপিএম হেলে দুলে যাবে শ্মশানঘাটে। বিরোধীদের অভিযোগ, এটা আসলে সরাসরি হিংসায় মদদ দেয়ার জন্য করা হয়েছে। মানুষ প্রতিরোধ করে ভোট দেয়ার পরে বিজেপি ফলাফল নিয়ে খুবই সংশয়ে আছে। এদিন বুথ ফেরত সমীক্ষাকে ব্যবহার করে কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বুথ ফেরত সমীক্ষা সামনে আসার আগে থেকেই বলা হয়েছে এগুলো বিজেপির জয় দেখাবে। জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হন। সরকার তাদেরই হবে বলে দুই দলের নেতারা বলেছেন। গত রবিবারের মতো সোমবারও সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি সাব্রুম এবং বিলোনিয়া কেন্দ্রের একাধিক জায়গায় সভা করেন। সেখানে তিনি বলেন, বিগত ৫ বছর রাজ্যের মানুষ জঙ্গলের রাজত্ব দেখেছে। এর থেকে মুক্তি পেতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। কোথাও কোথাও ভোটদানে বাধা পেলেও মানুষ সংগঠিত হয়ে ভোট দিয়েছেন। সরকার পরিবর্তন হবে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। রাজ্যের মানুষ শান্তির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সমীক্ষা প্রকাশের পরে একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, যারা পাঁচ বছরে জনগণের সুখ দুঃখ জানলেন না, তারা এক্সসিট পোল করছেন, বাস্তবের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।

বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশের আগেই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায়বর্মণ বলেন, মিডিয়াগুলো টাকার বিনিময়ে বিজেপিকে উজ্জীবিত করতে বুথফেরত সমীক্ষা করেছে। এই বানানো সমীক্ষায় বিশ্বাস না করতে রাজ্যের জনগণকে অনুরোধ করেছেন তিনি। সুদীপ রায়বর্মণ বলেন, কিছু পরে জাতীয় কিছু মিডিয়া এবং রাজ্যের মিডিয়া বুথ ফেরতের কথা বলে বিজেপির জয় দেখাবে। স্লট কিনে এসব প্রচার করাবে বিজেপি। ২ মার্চ বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত। কোনো সংশয় নেই। বর্বর যুগের অবসান হচ্ছেই।

চারটি সংস্থার সমীক্ষাতেই নাগাল্যান্ডে শাসক এনডিপিপি-বিজেপি জোটকে একতরফা সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে। মেঘালয়ের ক্ষেত্রেও চারটি সংস্থাই ত্রিশঙ্কু বিধানসভার ইঙ্গিত দিয়েছে। এনপিএফকে সর্বাধিক আসন দিয়েছে সবাই। কংগ্রেস, বিজেপিকেও চারটি সংস্থা যা আসন দিয়েছে তার মধ্যেও মিল আছে। ভোটের আগের বিজেপিবিরোধী অবস্থান বজায় রাখলে সেক্ষেত্রে এনপিএফ কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করতে পারে। মেঘালয়ে তৃণমূলকে সর্বাধিক ১১টি আসন দেয়া হয়েছে।

সব মিলিয়ে আগামী বছর ২০২৪ সালে ভারতে লোকসভা নির্বাচন। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনগুলোতে যে দল ভালো ফল করবে তারাই দেশটির সাধারণ নির্বাচনেও অনেকটাই এগিয়ে থাকবে। তবে গণনা নিয়ে সতর্ক বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তাই রীতিমতো রাত পাহারায় রয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দলের সদস্যরা। উমাকান্ত একাডেমিতে রোজ নিয়ম করে রাত পাহারায় থাকছেন বাম, কংগ্রেস কর্মীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App