×

সাহিত্য

৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৩, ০২:০০ এএম

৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি

ফাইল ছবি

বইমেলা এক হৃদয় ছোঁয়া উৎসব মুখরতা। এ মেলা মনের, আর মননের। এ মেলা মানবতা ছড়ায়, গান গায় মানবতার। তাই এখানে জঙ্গিদের উড়ো চিঠি এলেও কেউ ভয় পায় না। কারণ বইমেলায় কাগজের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে দেয়া হয় সত্য আর সৌন্দর্য। গেল ২৮দিন এক অন্যরকম মুগ্ধতায় কেটে গেছে লেখক, কবি, সাহিত্যক আর বইপ্রেমীদের। অনেকটা গাছের ছায়া থেকে ধীরে ধীরে রোদ সরে যাওয়ার মতোই ফুরিয়ে গেল মেলার দিনগুলো। নির্মল আনন্দের এ উৎসবের পর্দা নামলো অবশেষে বেদনা জাগিয়ে। ‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার শেষ দিনটি ছিল অনেকটা বিষণ্নতা ছড়ানো। প্রাণচাঞ্চল্যের মধ্যে যেন বিদায়ের করুণ সুর।

মঙ্গলবার ২৮ ফেব্রুয়ারি মেলার শেষ দিনে দেখা গেছে টিএসসি থেকে লাইন ধরে বইপ্রেমীরা মেলায় ঢুকেছেন। ছিল তুমুল বেচাবিক্রিও। দম ফেলার সময় পাননি স্টলের বিক্রেতারা। কোনো কোনো স্টলে আবার উপচে পড়া ভিড় ছিল বইপ্রেমীর পাশাপাশি কবি ও লেখকদের। শেষ বারের মতো সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় প্রিয় লেখকদের ঘিরে ধরেছিল ভক্তপাঠককূলও। তবে শেষ দিনে পছন্দের বই কেনার অবসান ঘটিয়েছেন পাঠকরা। কেউ কেউ লিস্টের কিছু বই রেখে দিয়েছেন আগামী বছরের বই মেলার জন্য।

শেষ দিনেও মেলায় এসেছে অনেক বই। অন্তত সন্তানতুল্য বইগুলো যেন মেলার মুখটা দেখতে পায়- এজন্য কি যে প্রাণপণ চেষ্টা ছিল লেখক-প্রকাশকদের। তাই তো শেষ বেলাতে এসে স্টলের শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছে সেসব বই।

বিদায়ের সুরের মধ্যে শেষ দিনেও মেলায় ঢল নামতে দেখা গেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। তবে তাদের হাতে হাতেও শোভা পেয়েছে বইও। কেউ কেউ বলছিলেন যদি, বাণিজ্য মেলার সময় বাড়ানো হয়, তাহলে বই মেলার কেন সময় বাড়ে না।

কবি, শিক্ষক ও গবেষক সৈয়দা বদরুন নেসা জানালেন, খুব দ্রুতই যেন শেষ হয়ে গেল মেলা। যেন এক ছোট গল্প। শেষ হয়েও শেষ হলো না। আরো যদি বাড়ানো যেতো। একই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখক কবি ও শিশু সাহিত্যিক মুস্তাফা মহিউদ্দীনও বললেন, যতদিন মেলা থাকে মনে হয় শত ব্যস্ততায় ডুবে থাকি এক অন্যরকম ভালোলাগার মধ্যে। আরো যদি বাড়ানো যেত।

শেষ দিনে বারিধারা থেকে মেলায় বই কিনতে আসা আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থী মুগ্ধ জানালেন, বই মেলা অন্য মেলার মতো নয়। এ মেলায় এলে শান্তি লাগে। মনটা বড় হয়ে যায়। তাই এমন মেলা যত দীর্ঘ হয় ততোই ভালো। মিস করব বইমেলার লেকটাকেও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংবাদকর্মী জানালেন, মেলার অ্যাসাইনমেন্ট মানেই অন্যরকম কিছু। পাঠক আর লেখকদের সান্নিধ্যে সময় বেশ কেটে যায়। কাজটাকে বেশ উপভোগ করি। চাপ মনে হয় না।

লেখক, পাঠক, দর্শনার্থী, বিক্রেতা, প্রকাশকের যেন মনের কথা প্রাণের এ মেলা যদি আরো কটা দিন থাকতো। তবে মেলার সময় বাড়ানোর বিষয়টি একান্তই আয়োজকদের। তারপরেও এমন প্রশ্ন মনের মধ্যে রেখেই পাঠক ও দর্শনার্থীরা মেলা চত্বর থেকে বিদায় নিয়েছেন। আগামী বছরের মেলায় আসার প্রত্যাশা নিয়ে।

মেলায় স্থাপনকৃত আর্চয়ের পরিসংখ্যান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২৭ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল৬৩,৫৩,৪৬৩ জন।

সমাপনী আয়োজন :

বিকেল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। ধন্যবাদ জানান বাংলা একাডেমির সচিব বাংলা একাডেমির এ. এইচ. এম. লোকমান।

কে এম খালিদ বলেন, আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে উদ্যাপিত এবারের বইমেলা সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে। বইমেলা কেবল বই বিক্রির জায়গা নয়। দল, মত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে।

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনে বড়ো একটি দিগন্ত। বই পাঠের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে মানবিক দর্শন জাগ্রত হবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।

কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, কোভিড মহামারি পরবর্তীকালে একমাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ আয়োজন সত্যিই আমাদের জন্য বড়ো একটি সফলতা। বিন্যাস ও আঙ্গিকগত দিক দিয়ে এবারের বইমেলা সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে।

ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এ বাংলা একাডেমি-সহ সকল প্রতিষ্ঠানের বই ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি হয়েছে। ২৭শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমির ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে। ২৬শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় যে প্রায় ৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২, কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ এবং অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে ক্যারোলিন রাইট এবং জসিম মল্লিককে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ এবং কবি মোহাম্মদ রফিক-কে কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়।

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩

অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য আগামী প্রকাশনীকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩ দেয়া হয়। ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে আহমদ রফিক রচিত ‘বিচ্ছিন্ন ভাবনা’ প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুক্স, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ রচিত ‘বাংলা একাডেমি আমার বাংলা একাডেমি’ বইয়ের জন্য ঐতিহ্য এবং হাবিবুর রহমান রচিত ‘ঠার : বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.-কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ দেয়া হয়। ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খিকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হয়।

২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুথিনিলয় (প্যাভিলিয়ন), নবান্ন প্রকাশনী (২-৪ ইউনিট), উড়কি (১ ইউনিট) -কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়।

মোড়ক উন্মোচন

অমর একুশে বইমেলার শেষ প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা মোঃ রাজ্জাকুল ইসলামের ‘গ্রন্থাগারপ্রেমী বঙ্গবন্ধু’ ও ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে শত কবিতা সংকলন’ ব্যতিক্রমধর্মী দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী মোস্তাক শরীফ, বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিক, বারিধারা রোটারী ক্লাব ঢাকার প্রেসিডেন্ট জোবায়দা নাজনীন চৌধুরীসহ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের সাবেক ও বতর্মান কয়েকজন নেতৃবৃন্দ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App