×

সারাদেশ

মোরেলগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলার অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৩ পিএম

মোরেলগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলার অভিযোগ

ছবি: ভোরের কাগজ

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের বাড়িতে গভীর রাতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী এক হিন্দু পরিবার।

উপজেলার ১২ নং জিউধরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামে গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত প্রায় ১ টার দিকে বসতবাড়ির গেটের তালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে গোয়ালঘর নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে যাওয়া এবং বসতবাড়ির মন্দিরের দেবতার বিগ্রহ ও পূজা এবং কীর্তনসামগ্রী ভাঙ্চুরের অভিযোগ করেন ওই পরিবার।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সনজিত অধিকারি, প্রসেনজিৎ অধিকারি ও তাদের পিতা জ্যোতিন অধিকারি এই বাড়িতে কয়েক বছর ধরে বসবাস করছে। শনিবার গভীর রাতে গ্রাম পুলিশ রনজিত মন্ডলকে সঙ্গে নিয়ে লক্ষ্মীখালী পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ সুফল সরকার বাড়িটির সামনে গিয়ে চিৎকার করে বাড়ির মালিকদের ডাকতে থাকেন। কেউ কোন সাড়া না দিলে ওই পুলিশ অফিসার তালা ভেঙে বাড়িটির ভিতরে প্রবেশ করে তালাবদ্ধ ঘর ও মন্দিরের তালা ভেঙে ফেলে।

অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, কোথাও কেউ না থাকায় গ্রাম পুলিশ রনজিতের মাধ্যমে তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে সনজিতের ছোটভাই প্রসেনজিৎ অধিকারিকে ফোন করে তিনি জানান, তোমাদের বিরুদ্ধে ওসি সাহেবের কাছে অভিযোগ আছে। আমি তোমাদের বাড়ি থেকে কিছু আলামত ক্যাস্পে নিয়ে যাচ্ছি, তোমরা আগামীকাল সকাল ১০ টায় লক্ষ্মীখালী পুলিশ ক্যাম্পে যোগাযোগ করবে। সনজিতের ভাই প্রসেনজিৎ বিভিন্ন ভাবে তাকে বোঝাবার চেষ্টা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা ওখানে পৌঁছে যেতেও চায় কিন্তু পুলিশ সুফল তাদের কোন কথাই শোনেননি। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা তাদের বাড়ি পৌঁছে ওখানে সত্তার খলিফা ও মজিবরসহ কয়েক জন অপরিচিত লোককে দেখতে পায়। রনজিতদের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলে তারা দাবি করেন।

পরে সনজিতেরা বাড়িতে ঢুকে দেখতে পায় ইতিমধ্যে তাদের বেশ কিছু ক্ষতি হয়ে গেছে, বিশেষ করে মন্দিরের দেব বিগ্রহগুলি এলোমেলো করে ভাঙ্গা হয়েছে ঢোল, ডংকা ও তছনছ করা হয়েছে নিত্যপূজার সামগ্রী।

সরেজমিনে দেখা যায়, সনজিতের বসত বাড়ির ভেতরে একটি মন্দির ঘরের অনেক কিছু এলোমেলো পঠে আছে, গেটের একটি ছোট তালা খোলা।

জানা যায়, সনজিত অধিকারি কয়েক বছর আগে ২০১৮ সালে এখানে জমি কিনে নতুন বাড়ি তৈরি করে। একই খতিয়ান ভুক্ত জমি ক্রয় করে একই এলাকার সত্তার খলিফার ছেলে আবুল বাশার খলিফা। ফলে দুপক্ষের সাথে এসব জমিজমা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই নিয়ে স্থানীয় সালিস, বৈঠকসহ একাধিক মামলাও চলমান আছে। এসব বিরোধের জের ধরে সনজিতের বসতবাড়ির উত্তর দিকের বিলান জমিতে উভয় পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে এ বিরোধ দেখা দেয়।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিরোধকৃত ওই জমি দখলের উদ্দেশ্য গভীর রাতে সনজিত ও তার লোকজন বাঁশ, খুঁটি নিয়ে ঘর নির্মাণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মোরেলগঞ্জ থানায় ওইদিন রাত ১০টার দিকে একটি অভিযোগ করেন সত্তার খলিফা।

অভিযোগটি আমলে নিয়ে মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান জিউধরার লক্ষ্মীখালী ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই সুফল সরকারকে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশ দেন বলে জানান ওসি।

ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই সুফল বলেন, আমি কাউকে না পেয়ে বিরোধকৃত জমিতে রাতে ঘর নির্মাণ এড়াতে এবং পরদিন উভয় পক্ষকে ডেকে মীমাংসার উদ্দেশ্যে গ্রাম পুলিশের উপস্থিতিতে কিছু বাঁশ, খুটি নিয়ে এসেছিলাম পুলিশ ক্যাম্পে ওসি সাহেবের নির্দেশে। কিন্তু দেব বিগ্রহের ক্ষতির ব্যাপারে আমি জানি না, সেসময় এমন কোন ঘটনা ঘটেনি।

অপরদিকে প্রতিপক্ষ সত্তার খলিফা জানান, আমরা থানায় অভিযোগ করে বাড়ি ফিরে আসি ওইদিন রাত ২টায়। ঘটনাস্থলে আমরা যাইনি। আমাদের ফাঁসানোর এটি একটি ষড়যন্ত্র।

থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাইদুর রহমান জানান, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App