শিশুদের বই কম
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:০২ পিএম
বিশ্বজুড়ে শিশুদের জন্য লেখা বই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবা হলেও আমাদের দেশ এর ব্যতিক্রম। প্রতিবছর অমর একুশে বইমেলায় আসে ৪-৫ হাজারের বেশি নতুন বই। এর মধ্যে হাতে গোনা কিছু সংখ্যক বই শিশুতোষ। আবার প্রকাশিত বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। শিশুদের আকৃষ্ট করতে ও বিক্রি বাড়াতে বইয়ের মলাট দৃষ্টিনন্দন করা হলেও মেধা বিকাশে মনোযোগ কম। রূপকথা, কল্পকাহিনির পাশাপাশি ইতিহাস ও মূল্যবোধ বৃদ্ধিতে সহায়ক বই কম। শিশুতোষ বই প্রকাশে বৈচিত্রও কম।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাবিদরা শিশুদের জন্য আরও বেশি মানসম্পন্ন বই লেখা ও প্রকাশের পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, প্রতিবছর মেলায় মাত্র ৪-৫ শতাংশ শিশুতোষ বই প্রকাশ করা হয়। যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। যে কারণে প্রত্যেক প্রকাশকের বইয়ের অর্ধেক না হলেও অন্তত ৩০-৩৫ ভাগ শিশুতোষ বই প্রকাশ করা উচিত। প্রত্যেক লেখকেরই শিশুদের জন্য লেখার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিগত ২০২০ সালের বইমেলায় যে ৪ হাজার ৩৯৪টি বই বের হয়েছে তার মধ্যে শিশুতোষ বই মাত্র ১৮৪টি ছিল। যা মোট বইয়ের মাত্র ৪ শতাংশের খানিকটা বেশি। বিগত এক দশক ধরেই বই মেলায় শিশুতোষ বইয়ের সংখ্যা বাড়তে দেখা যায়নি। চলতি বইমেলায় এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে মাত্র শিশুতোষ বইয়ের সংখ্যা মাত্র ৭২টি। যা ২ শতাংশের কিছুটা বেশি। অর্থাৎ বিগত বছরের তুলনায় এবার শিশুতোষ বইয়ের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কম।
শনিবার ছিল এবারের বইমেলার শেষ শিশুপ্রহর। সকাল থেকেই ছিল বেশ ভিড়, বিকালেও দেখা গেছে অনেক শিশুরা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে মেলায় এসে পছন্দের বই কিনেছে।
আরিফা মাহবুব নামের এক অভিভাবক বললেন, শিশুদের জন্য বইয়ের মান তেমন ভালো নয়। মনে হয় লেখক বা প্রকাশকরা বড়দের বই নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তারা শিশুদের কথা তেমন ভাবেন না। শিশুদের বই লেখা কিংবা প্রকাশে মনোযোগ কম।
সানজিদা আকতার তানিয়া আরেক অভিভাবক বললেন, শুধু রূপকথা, সায়েন্স ফিকশন আর সস্তা কিছু কাহিনি দিয়েই সাজানো হয় শিশুদের বই। যেখানে অনেক সময় বানানে বিভ্রান্তি থাকে। আমরা যে কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, আমাদের ঐতিহ্য মূলবোধের অবক্ষয় হচ্ছে, সেগুলোও মাথায় রেখেই তো লিখতে হবে শিশুদের জন্য। তবে সেরকম লেখা চোখেই পড়ে না। মুক্তিযুদ্ধ কিংবা আমাদের জীবন যুদ্ধের গল্প তো বাস্তবতার আলোকেই জানাতে হবে শিশুদের। তেমন বই তো বেশি হওয়ার কথা।
তিনি বলেন, পৃথিবী বদলাচ্ছে। কিন্তু পরিবর্তিত পৃথিবীতে শিশুদের জন্য ভালো লেখকের বই প্রকাশ করতে হবে। নইলে শিশুরা পিছিয়ে পড়বে।
শিশুদের জন্য বই প্রকাশে তৎপর প্রকাশক মোশতাক রায়হান বললেন, আসলে শিশুতোষ বই লেখার জন্য যে মেধা আর মনস্তত্ত্ব জানা দরকার তেমন লেখকের সংখ্যা খুবই কম। আমরা ভালো পাণ্ডুলিপিও পাই না। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী ভালো মানের শিশুতোষ বই পাঠকের হাতে তুলে দেয়াটা কঠিন হয়ে পড়ছে। স্বীকার করতেই হয়, শিশুদের ভালোমানের বইয়ে চাহিদা রয়ে গেছে।