×

মুক্তচিন্তা

গুলশানের অগ্নিকাণ্ড ও কিছু কথা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:২১ এএম

গুলশানে একটি ১২ তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের সময় লাফ দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে একজন মারা গেছেন এবং তিনজন আশঙ্কাজনকভাবে দগ্ধ হয়েছেন। ভবন থেকে ২২ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে আগুন আতঙ্কে নিচে ঝাঁপ দিয়ে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এদের কেউ কেউ অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে ভবন থেকে নিচে ঝাঁপ দেন। কী কারণে গুলশান ২-এর ওই ভবনটিতে আগুন লেগেছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে ভবনের ৭ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন লাগার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। এরপর আরো দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নেভানোর জন্য আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় আরো ১৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মইয়ের মাধ্যমে ১২ জন নারী, নয়জন পুরুষ ও একজন শিশুকে জীবিত উদ্ধার করে। রাত পৌনে ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ভবনের ভেতরে তল্লাশি চালান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধারকাজে ঘটনাস্থলে নিয়োজিত হয় বিমানবাহিনীর পাঁচটি ইউনিট। আগুন নেভানোর কাজে তারা ফায়ার সার্ভিসকে সাহায্য করে। এছাড়া ভেতরে আটকে পড়াদের উদ্ধারের জন্য একটি হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ-র‌্যাবও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। তারা উৎসুক জনতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। সপ্তম তলায় লাগা আগুন ক্রমেই ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ধোঁয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের কাজ করতে বেগ পেতে হয়। ঢাকা মহানগরীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় আগুনে ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের চার বছর পূর্ণ হওয়ার আগের রাতে গুলশানে এই আগুনের ঘটনা ঘটল। পুরান ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল ২০১০ সালের ৩ জুন। রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১২৪ জন। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগেনি সেদিন। ভয়াবহ এসব দুর্ঘটনা থেকে যথেষ্ট শিক্ষা নেয়ার ছিল। আমরা কি তা নিতে পেরেছি বা নিয়েছি? আমাদের স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদরা যেভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন, আমরা কি তা মেনে চলছি? গুলশানের মতো রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। এটা প্রমাণ করছে শুধু রাসায়নিক কারখানায় ভরা পুরান ঢাকা নয়, অভিজাত এলাকাও আগুনের ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। কাজেই অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সব ভবনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকতে হবে। গুলশানের অগ্নিকাণ্ড ঢাকার বহুতল ভবনগুলোর নির্মাণত্রæটি নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। প্রতিটি বহুতল ভবনে আগুন লাগার জন্য সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, আগুন নেভানোর যান্ত্রিক সুবিধা এবং বিকল্প সিঁড়ি থাকার কথা থাকলেও ভবনটিতে ছিল না। আগুন লাগার পর লোকজন দ্রুত সরে না যাওয়ায় কয়েকজন আটকা পড়েন। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে অসতর্কতার কারণে। যা সবার জন্য শিক্ষণীয়। কেবল সচেতন হলেই অনেক অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ করা সম্ভব। ফায়ার সার্ভিসের কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় বলেছেন, সচেতনতার অভাব এবং অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ফায়ার সার্ভিস বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিলেও তা যথেষ্ট প্রমাণিত হয়নি। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, বিড়ি-সিগারেট বা মশার কয়েলের আগুন সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করতে হবে। বিশেষ করে ঘনবসতি এলাকা, বস্তি, শিল্প-কলকারখানায় নিয়মিত মহড়া ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App