×

সারাদেশ

দণ্ড দিয়েও থামানো যাচ্ছে না ফসলি জমির মাটি কাটা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:২১ পিএম

দণ্ড দিয়েও থামানো যাচ্ছে না ফসলি জমির মাটি কাটা

ছবি: ভোরের কাগজ

সাতকানিয়ায় নির্বিচারে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি (টপসয়েল)। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না ফসলি জমির মাটি কাটা। রাতের অন্ধকারে যে যেভাবেই পারছে স্কেভেটর (মাটি খননযন্ত্র) দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ডাম্পারযোগে (মিনি ট্রাক) ইটভাটায় সরাবরাহ করা হচ্ছে।

উপজেলার প্রতিটি এলাকায় সিন্ডিকেট করে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একাধিক চক্র দেদারছে রাতে মাটি কেটে বিক্রি করলেও কোনো আইনি পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে দু’য়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করলেও তা আমলে নিচ্ছেন না মাটি ব্যবসায়ীরা। এসব অভিযান আর জরিমানা তার গায়ে মাখছেনা।

এতে চুনোপুঁটিরা আইনের আওতায় আসলেও অধিকাংশ মাটিখেকো রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে প্রতিবছর উপজেলায় আবাদি জমি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কেরানিহাট থেকে মৌলভীর দোকান ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত আইন অমান্য করে এস্কেভেটর (মাটি খননযন্ত্র) দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল কাটা হচ্ছে। আন্দার মার দরগাহের পশ্চিমে দক্ষিণে, নয়াখালের পশ্চিমে শত শত ডাম্পার (মিনি ট্রাক) ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট করে একাধিক গ্রুপ জমির মালিককে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করছে। উপজেলার সবচেয়ে বেশি ইটভাটা গড়ে উঠেছে উত্তর ঢেমশা, দক্ষিণ ঢেমশা, তেমুহনী, রসুলাবাদ ও দক্ষিণ ছদাহা এলাকায়।

সাতকানিয়ার পশ্চিমে বাঁশখালী সীমান্ত এলাকায় পাহাড় ঘেঁষে এওচিয়া ছুড়ামনি ও ছনখোলা এলাকায় পাহাড়ের পাশে রয়েছে ১০-১২টি ইটভাটা। সেখানে ভাটার মালিকরা পাহাড় কেটে মাটি ভাটায় মজুদ করছে। প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে উপজেলার নলুয়ার বিল ও নয়াখালের পশ্চিম বিল থেকে ফসলি জমির টপসয়েল কাটছে দেদারছে। মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণীর দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে ফসলি জমির মাটি বিক্রিতে উৎসাহিত করছেন।

আর কৃষকরা লোভে পড়ে নগদ টাকার আশায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দেন। ২০-৩০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে ধীরে ধীরে ফসলি জমি ডোবায় পরিণত হচ্ছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নির্মাধীন রেললাইন ঘেঁষে উত্তর ঢেমশা ও তেমুহনী মৌজায় একাধিক চক্র গত কয়েক বছর ধরে শত শত হেক্টর ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার ফলে এক সময়ের ফসলি বিশাল লেকে পরিনত হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ প্রতিবছর শত একর ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। যার কারণে দিন দিন আবাদী জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকি শিকার হচ্ছে। উপজেলার বাজালিয়াা, চরতী, পুরানগড় ও ছদাহা ইউনিয়নে স্থানীয় প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে পাহাড় কেটে ডোবা কিংবা ভিটে ভরাট করে বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। অনেকে আবার পুকুর খনন ও মৎস্য খামার স্থাপনের কথা বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করছে। প্রশাসনের নজরদারি এড়াতে মাটি ব্যবসায়ীরা রাতের সময়কে উত্তম সময় হিসাবে বেছে নিয়েছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বা আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা বিলুপ্ত করা নিষিদ্ধ থাকলেও মাটিখোকে সিন্ডিকেটরা তা মানছে না।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি বারদোনা এলাকায় রাতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটার অপরাধে চারজনকে কারাদণ্ড দেন। পরবর্তীতে ১২ ফেব্রুয়ারি উপজেলার মাহালিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে কৃষি জমির টপসয়েল ও পাহাড়ের মাটি কাটার অপরাধে ফরহাদুল ইসলামকে (৪২) বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর আওতায় ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু এলাকায় রাতে অভিযান চালানো হয়। সদর ইউনিয়ন ও বাজালিয়াসহ দু’য়েকটি স্থানে জেল জরিমানা করলেও অধিকাংশ এলাকায় প্রকাশ্যে রাতে ও দিনে দেদারছে মাটি মাটলেও রহস্যজনক কারনে ওইসব স্থানে কোন অভিযান পরিচালনা করা হয় না। এভাবে প্রতিদিন গ্রামীণ পাকা সড়ক দিয়ে শত শত মাটির ট্রাক চলাচলের কারণে সড়ক ভেঙ্গে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে যোগযোগ করা হলে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, উপজেলার প্রশাসন থেকে এসব অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে স্থানীয় জমির মালিকদেরও সচেতন হতে হবে। তারপর ও প্রশাসন খবর পাওয়ার সাথে সাথে অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অবৈধ কাজে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App