×

সারাদেশ

টেকনাফে ব্রুসেলোসিস রোগ শনাক্ত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:৪৭ পিএম

টেকনাফে ব্রুসেলোসিস রোগ শনাক্ত

ছবি: ভোরের কাগজ

কক্সবাজারের টেকনাফে ব্রুসেলোসিস রোগ শনাক্ত হয়েছে। সম্প্রতি আইসিডিডিআরবি বিজ্ঞানীরা নতুন গবেষণায় টেকনাফে অবস্থিত তাদের রেসপিরেটরি ডিজিস হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ব্রুসেলোসিস রোগ শনাক্ত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায় টেকনাফের প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে এই গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলের ওপর একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে জানানো হয়, সমীক্ষা অনুসারে প্রাথমিক তদন্তে এই এলাকায় ব্রুসেলোসিসের আটজন রোগী শনাক্ত করা গেছে (১৫৩ জন ভর্তিকৃত রোগীর মধ্যে, যা কিনা পাঁচ দশমিক দুেই শতাংশ)। ব্রুসেলা নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ ব্রুসেলোসিস, যা সাধারণত গৃহপালিত গবাদি পশু যেমন গরু, ছাগল এবং মহিষের দুধে পরজীবী হিসেবে উপস্থিত থাকে।

গরু, ছাগল বা মহিষের দুধ অপরিশুদ্ধ বা না ফুটিয়ে বা কাঁচা অবস্থায় পান করলে এর জীবাণু মানব দেহে প্রবেশ করতে পারে। রোগটির প্রধান উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, ক্ষুধাহীনতা, দুর্বলতা ইত্যাদি।

আইসিডিডিআরবি ও ইউনিসেফের যৌথ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফ পৌরসভা এলাকায় ২০২০ সালের আগস্ট থেকে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় ৬৫ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। গত ২০২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে ১২০ জন রোগী ভর্তি হন হাসপাতালটিতে। প্রথমে, কোভিড-১৯ সন্দেহ হলেও, তাদের কেউই এ রোগে আক্রান্ত ছিলেন না।

পরবর্তীতে অন্যান্য রুটিন পরীক্ষার পাশাপাশি সংক্রমণের কারণ নির্ণয়ে রক্তের ট্রিপল এন্টিজেন্ট পরীক্ষার করা হয়। ১২০ জন রোগীর মধ্যে সাত জনের (পাঁচ দশমিক আট শতাংশ) নমুনায় প্রাথমিকভাবে ব্রুসেলা জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তাদের সবাইকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয় এবং তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ব্রুসেলা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরটি-পিসিআর টেস্ট করা হলে ওই পাঁচজনের মধ্যে একজনের দেহে ব্রুসেলার উপস্থিতি পাওয়া যায়।

পরে আইসিডিডিআরবির ইনফেকসাস ডিজিসেস ডিভিশনের সহকারী বিজ্ঞানী ড. আইরিন সুলতানা শান্তার নেতৃত্বে ঢাকা থেকে একটি তদন্তকারী দল টেকনাফে আসেন ও ইতোমধ্যে অ্যান্টিজেন টেস্টে পজেটিভ পাওয়া সাত জনের মধ্যে পাঁচজনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। এই পাঁচজনের সবার ক্ষেত্রেই কাঁচা গরুর দুধ পানের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর আরো ৩৩ জন নতুন রোগীর রক্তের নমুনা নিয়ে আরটি পিসিআর পরীক্ষা করা হলে সেখান থেকেও একজনের দেহে ব্রুসেলার উপস্থিতি দেখা যায়। এই রোগী ছিল তিন বছর বয়সী এক মেয়ে শিশু।

বিজ্ঞানীরা টেকনাফের মানুষের মধ্যে কাঁচা দুধ খাওয়ার প্রবণতা ও অভ্যাস দেখতে পান। গবেষণায় রোগের বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও, গরু, ছাগল বা মহিষের কাঁচা দুধ পান না করার পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি, অন্তত ১৫ মিনিট দুধ ধরে চুলায় রেখে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে পান করার সুপারিশ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টেকনাফ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী। এতে আইসিডিডিআরবির টেকনাফে অবস্থিত রেস্পিরেটরি ডিজিজেস হাসপাতালের সিনিয়র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর ডা. জিয়াউল ইসলাম, সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ও ক্লিনিক্যাল লিড ডা. তারেক মাহমুদ রাকিব ও ইনফেকসাস ডিজিসেস ডিভিশনের সহকারী বিজ্ঞানী ড. আইরিন সুলতানা শান্তা অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও রোগটির প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তারা।

ডা. জিয়াউল ইসলাম বলেন, ব্রুসেলোসিসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গৃহস্থলি পর্যায়ে দুধ ভালোভাবে ফুটিয়ে খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। তাই আমরা মানুষকে সচেতন করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে লিফলেট (প্রচারপত্র) বিলি ও উঠান বৈঠকের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।

এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। ড. আইরিন সুলতানা শান্তা বলেন, দেশের অন্যান্য প্রান্তেও জনসাধারনের মধ্যে এই রোগের প্রার্দুভাব নির্ণয় করা প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। গবেষণা কর্ম বৃহত্তর আকারে পরিচালনা করে এ রোগ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ আকর্ষণ করার পাশাপাশি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App