যশোরের চৌগাছায় শর্টগান হাতে, কোমরে পিস্তল আর বাম হাতে টর্চলাইট নিয়ে এক সন্ত্রাসীর ছবি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ছবিটি দুদিন আগে এ প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছায়। ছবির লোকটি উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের ৪টি মামলার আসামি মনি ওরফে মনি হাসানের বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। মনি জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের সলেমানের ছেলে।

এ ঘটনায় ওই সময়কার ক্যামেরাম্যান হিসেবে (যশোর-ঝিকরগাছা) যশোর-২ এর এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক ডা. মো. নাসির উদ্দিনের একজন সমর্থকের নাম উঠে। তখন এমপি নিজেই খোঁজ খবর নিয়ে সেটি সাবেক চেয়ারম্যান বাদলের ভাইপো মনি এবং ক্যামেরাম্যান মঙ্গলের ছেলে টুটুল বলে নিশ্চিত করেন।

এছাড়াও চৌগাছা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজা, স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ আরো অনেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক “শামীম রেজা”র আইডিতে ছবিটি দেখে এই মনির (মনি হাসান আইডি) কাকুতিময় মন্তব্য ছবিটি তার নিজের বলেই ইঙ্গিত করে।

এদিকে, স্থানীয়রা জানিয়েছেন কিলার শামীম খুব গর্বের সাথে বলে থাকে যে,“ওই শর্টগান দিয়েই মিন্টুকে খুন করেছি”।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং এই সিংহঝুলি ইউয়িনের সাবেক চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান মিন্টুকে শর্টগান দিয়ে গুলি করে হত্যা করে কিলার শামীম । ২০১৬ সাল থেকে অস্ত্রগুলো নিজ গ্রামের এই মনি, বাঙ্গাল বিল্লাল, ইয়াসিন, ফেন্সি বাবুল, সাগরসহ বেশ কয়েকজনের কাছে পালাক্রমে রেখে আসছে।

জানা যায়, ২০১৭ সালে জামালতার ফরিদুলের সাথে ঝামেলায় মনি ওই শর্টগান নিয়ে শোডাউন দিয়েছিল। ২০২০ সালে ২০ অক্টোবর এক কলেজ ছাত্রকে এই শর্টগান ঠেকিয়ে উঠিয়ে নিয়ে মারপিট করেছিল কিলার শামীম।

এদিকে কিলার শামীমের বিশস্ত সঙ্গী ও আশ্রয়দাতা কাঠমিস্ত্রি আকতারুল বললেন, একটা নয় ২টি শর্টগানসহ একাধিক পিস্তল আছে শামীমের কাছে। যেগুলো সে আমার বাড়িতেও নিয়ে আসতো।

আকতারুল জানান, ২০২০ সালের আমার বাড়িতে গিয়ে আমার স্ত্রী ও মেয়েকে কুপ্রস্তাব দেয় শামীম। প্রতিবাদ করলে বাঙ্গাল বিল্লালের সামনে সে আমাকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে। আমি দৌড় দিয়ে পাশের এক হিন্দু বাড়ির বাগানে গিয়ে লুকাই। কিছুক্ষণ পরে সেই বাড়ির গৃহবধূকে ডেকে পাঠায় শামীম। সে না আসায় ওই বাড়িতেও ফাঁকা গুলি করে শামীম।

সর্বশেষ চলতি বছর ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে জগন্নাথপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা শামীম রেজাকে আক্রমণ করে কিলার শামীম, শান্ত এবং বাবুল। সে সময় কিলার শামীম এবং শান্তর হাতে দুটি পিস্তল ছিল। শামীম রেজাকে বাঁচাতে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে যাওয়ার সময় ৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে শামীম রেজাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় কিলার শামীম।

কিলার শামীমের অস্ত্রের বিষয়ে চৌগাছা থানার ডিউটি অফিসার এএসআই খোরশেদ বলেন, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান। এবং সুনির্দিষ্টভাবে অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান পেলে আমরা উদ্ধারের চেষ্টা করবো।

এতো ভয়ঙ্কর সব অপরাধের করেও পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার শামীম ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে নিজ গ্রামে বসেই সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করছে। এবং এখনো পর্যন্ত তার অবৈধ অস্ত্র ভান্ডার আজও পুলিশের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে।