×

সাহিত্য

অমর একুশে: বিজ্ঞানের বইয়ে আগ্রহ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৪৪ পিএম

অমর একুশে: বিজ্ঞানের বইয়ে আগ্রহ

ফাইল ছবি

দেশে একদিকে প্রবলরকম বিজ্ঞান বিদ্বেষ, অন্যদিকে বিজ্ঞানবিষয়ক বই লেখার কারণে লেখককে মেরেও ফেলার ঘটনা ঘটেছে। কখনো কখনো আবার বিজ্ঞান শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষেই লাঞ্ছিত করা, গ্রেপ্তার করা, এমনকি কারাগারে নিক্ষেপ করার ঘটনাও ঘটছে। বিজ্ঞান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনাও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কয়েকদিন আগে জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক ড. জাফর ইকবালও মেলায় এসে আক্ষেপ করে বলেছেন, আগে বইপ্রেমীরা আমার অটোগ্রাফসহ বই কিনতে আসতো। আর এখন বই না কিনে আমার সঙ্গে তারা সেলফি তুলতে চায়। অনেকেই বলছেন, বিজ্ঞান প্রযুক্তির যত উন্নতি হচ্ছে দেশে বিজ্ঞান চর্চা আর বিজ্ঞানপ্রেম ততই কমছে। সমাজ দিন দিন বিজ্ঞানবিমুখ হয়ে পড়ছে।

তবে এতকিছুর পরও এবারের অমর একুশে বইমেলায় শিশু-কিশোরদের কাছে বিজ্ঞানবিষয়ক বইয়ের চাহিদা বেশিই ছিল বলা যায়। শিশু থেকে তরুণদের অনেকের হাতেই দেখা গেছে বিজ্ঞানের বই। তারা নতুন আসা বিভিন্ন বিজ্ঞানের বই খুঁজে খুঁজে কেনার চেষ্টা করেছে। বিজ্ঞানের জনপ্রিয় বইগুলোর পাশাপাশি নতুন লেখকদের বইও তারা পছন্দ করেছে, কিনেছে। প্রকাশকরাও বলেছেন, বিজ্ঞানের বইয়ের চাহিদা ভালো। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের কাছে বিজ্ঞানবিষয়ক বইয়ের চাহিদা আগের চেয়ে বেশি। আগে সায়েন্স ফিকশনের চাহিদা বেশি ছিল। তবে এখন মৌল বিজ্ঞানসহ নতুন নতুন আবিষ্কারের বইও পড়তে চাচ্ছে শিশুরা।

বুধবার মেলায় পছন্দের বইয়ের লম্বা একটা তালিকা নিয়ে এসেছিল রাজধানীর নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া প্রথমা। সেই তালিকার বেশিরভাগ বই-ই ছিল বিজ্ঞানের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমা বলে, পাঠ্য বইয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখা খুবই সীমিত পরিসরে। অথচ প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার উদ্ভাবন ঘটছে। সেসব নিয়ে কৌতুহল থেকেই পাঠ্যবইয়ের বাইরে বিজ্ঞানের বই পড়ি। সারা বছরের জন্য পছন্দের বইগুলো মেলা থেকেই কিনে নিই। এবারও বাবার সঙ্গে এসেছি বই কিনতে। বিজ্ঞানের বই এন্টিম্যাটার, প্যারালাল ওয়ার্ল্ড, পদার্থবিদ্যার মজার কথা, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, জিএম মানুষ ও মানবজাতির ভবিষ্যৎ, মহাকর্ষের আদি উৎস ও গ্রহ নক্ষত্রের ঘূর্ণন, দ্য ম্যান হু কাউন্টেডসহ বেশ কিছু বই কিনেছি। আরও কিনতে চাই।

প্রথমার বন্ধু সারাহ্ও বিজ্ঞানের বইয়ের পোকা। সেও পছন্দের বইয়ের তালিকা নিয়ে এসেছে। যার মধ্যে প্রায় সবগুলোই বিজ্ঞানের। বিশেষ করে সারাহ্র পছন্দের বিষয় জীব বিজ্ঞান। বিশ্বে যে কোটি কোটি প্রাণ আছে সেসব সম্পর্কেই তার দারুণ কৌতুহল। সে জিন প্রকৌশল বিষয়ক দুটি বই কিনেছে। এসব কঠিন বিষয়ের বই সম্পর্কে জানতে চাইলে সারাহ্ বলে, আসলে সহজ করে লেখা বিজ্ঞানের বই পড়তেই বেশি ভালো লাগে। ভবিষ্যতে জিন প্রকৌশল নিয়ে পড়ালেখা করতে চাই। তাই মনে হয় আগেভাগেই কিছু জেনে রাখা ভালো।

রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে মেলায় আসা বিজ্ঞানপ্রেমী স্কুলছাত্র প্রবীর ঘোষও কিনেছে কয়েকটি বিজ্ঞানবিষয়ক বই। জানতে চাইলে সে বলে, মহাকাশ নিয়ে আমি অনেক কিছু জানতে চাই। অনেকেই সেগুলোর উত্তর দিতে পারে না। এমনকি মা-বাবা সেসব প্রশ্নের উত্তর জানে না। তাই এই বিষয়ে বই কেনার ইচ্ছে নিয়েই এসেছি। অনেকগুলো স্টল ঘুরে ঘুরে মহাকাশ বিষয়ক বই কিনেছি।

তবে সে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে অনেক বেশি কৌতুহলী। তাই এ বিষয়ে শিশুদের উপযোগী করে লেখা বই খুঁজছে।

প্রবীর আরও বললো, ক্লাসের বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞানের বইগুলো পড়ি। তার কয়েকজন বন্ধুও বিজ্ঞানের বই পড়তে চায়।

কয়েকজন প্রকাশক জানালেন, বিজ্ঞানের বই সহজ করে লিখলে সেসব বইয়ের চাহিদা বেশি থাকে। কঠিন বিষয় যারা সহজ করে লিখতে পারেন, সেরকম জনপ্রিয় লেখকের সংখ্যা কম বলেই বেশি বই প্রকাশের সুযোগ থাকে না। তবে ইদানিং তরুণরাও বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে লিখছেন। তাদের লেখা বই জনপ্রিয়ও হচ্ছে। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি আর আধুনিক বিজ্ঞানের ওপর লেখাগুলোর চাহিদা তরুণদের মধ্যে বেশি। আর মৌল বিজ্ঞানের বইগুলোর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখকের সংখ্যা বাড়লে বিজ্ঞানের বইয়ের যে মন্দাভাব সেটা কেটে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App