×

সারাদেশ

বাঘা পৌরসভায় হিসেব মিলছে না পৌনে ৩ কোটি টাকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:৪১ পিএম

বাঘা পৌরসভায় হিসেব মিলছে না পৌনে ৩ কোটি টাকার

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার কাঁধে ঋণের বোঝা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। পৌর হাট-বাজারের ইজারার টাকা, ভ্যাট ও আয়কর, ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতন, ভবিষৎ ও আনুতাষিক তহবিল, রাজস্ব তহবিলের এডিপি, কুয়েত ফান্ড ও আইইউ আইডিপি লোন, বিদুৎ বিল, পত্রিকার বিজ্ঞপ্তির বিলসহ বিগত ৫ বছরের হিসেবে ওই ঋণ রয়েছে বলে পৌর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে হিসেব মিলছে না ২ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯১৭ টাকার। নব নির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে মেয়রের চেয়ারে বসেন নির্বাচিত মেয়র আক্কাছ আলী। এর আগে ৫ বছর মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক মেয়র আব্দুর রাজ্জাক। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আব্দুর রাজ্জাক।

জানা যায়, আব্দুর রাজ্জাকের দায়িত্ব পালনকালে পৌরসভার দু’টি হাট বাজার ইজারা দিয়ে আয় হয়েছে ৪ কোটি ৪৬ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭৯৫ টাকা। এর মধ্যে বাঘা হাট বাজার থেকে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৭২ হাজার ৭৩২ টাকা আর চন্ডিপুর হাট থেকে ২ কোটি ৭২ লাখ ৫ হাজার ৬৩ টাকা। পৌর ফান্ডে জমা পড়েছে ২ কোটি ৮৬ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫০৭ টাকা। এ হিসেব অনুযায়ী ১ কোটি ৬০ লক্ষ ৩২ হাজার ২৮৮ টাকাসহ হাট বাজারের ভ্যাট বাবদ-৫৯ লাখ ১৭ হাজার ৩০২ টাকা, আয়কর ২৫লাখ ২৫ হাজার ৩২৭ টাকা বাঁকি রয়েছে। সর্বমোট ২ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯১৭ টাকা জমা পড়েনি।

বকেয়া পাওনা রয়েছে- পৌরসভার ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির ৬মাসের বেতন বাবদ- ৪৮লাখ ১৭ হাজার ৪৬২ টাকা, ২১ মাসের ভবিষৎ তহবিল বাবদ-২০লাখ ৫৪ হাজার ৬৫ টাকা,২২ মাসের আনুতষিক তহবিল ১৯ লাখ ৫২ হাজার ৭৫১ টাকা। রাজস্ব তহবিলে লোন-এডিপি হতে ৭৮লাখ ৫০ হাজার,কুয়েত ফান্ড হতে ২৭লাখ, আইইউ আইডিপি হতে ২৩ লাখ টাকা। বিদুৎ বিল বাঁকি রয়েছে- গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ২লাখ ৩৫ হাজার ৯৯০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিল। বর্তমান মেয়র আক্কাছ আলী বলেন, ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে আগের মেয়রের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। সাবেক মেয়র আব্দুর রাজ্জাক ২ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯১৭ টাকার হিসাব দিতে পারেননি বলে দাবি করেছেন মেয়র আক্কাছ আলী। এর বাইরেও আরো অনেক টাকা রয়েছে এরও হিসাব নেই। এসব টাকা তাকে ফেরত দিতে হবে।

তিনি বলেন, প্রজেক্টের টাকা হতে লোন নেয়ার কোন নিয়ম নাই। প্রজেক্টের টাকা প্রজেক্টেই খরচ করতে হবে। কিন্তু আব্দুর রাজ্জাক নিয়ম লঙ্ঘন করে টাকা তুলেছেন।

দুটি হাটের হিসেব তুলে ধরে আক্কাছ আলী বলেন, সাবেক মেয়রের সময়ে সর্বশেষ মাঘ মাসে বাঘা হাটে ২ লাখ ৫ হাজার, চন্ডিপুরে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়েছে। আমার দায়িত্ব গ্রহণের পর ফালগুন মাসে বাঘা হাট থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার ও চন্ডিপুর হাট থেকে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা খাস আদায়ে ইজারা দিয়েছি। মাঘ থেকে ফালগুন মাসে দুটি হাটে টাকার ব্যবধান ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে সহজেই বোঝা যায় কি হয়েছে আর কি হয়নি।

সাবেক মেয়র আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পৌর সভার নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর কর্মকর্তা কর্মচারিরা নিয়ম মেনে অফিস করেনি। আমিও ঠিকমতো বসতে পারিনি। যার কারণে সবকিছু বুঝিয়ে দিতে পারিনি।

তার দাবি, হাট বাজার ইজারার কিছু টাকা অনাদায়ী রয়েছে। ভ্যাট-আয়করের টাকা জমা দেয়ার দায়িত্ব যারা ইজারা নেয়, তাদের।

এর সত্যতা স্বীকার করে একজন ইজারাদার মামুন হোসেন বলেন, অনেকেরই বাকি আছে। পরে হলেও দিতে হবে।

ইজারা, ভ্যাট-আয়করের টাকা জমা না দেওয়া প্রসঙ্গে পৌরসভার প্রধান হিসাব রক্ষক মো. হাসান আলী বলেন, সাবেক মেয়রের সাথে কথা বলে হয় তো জমা দেয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার এক কর্মকর্তা বলেন, এসব হিসেব নিয়ে সাবেক মেয়রের স্বাক্ষর নিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু করেননি।

উল্লেখ্য, ২৯ ডিসেম্বর-২০২২ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র পদে নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্কাছ আলী। দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১ ফেব্রুয়ারি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App