×

মুক্তচিন্তা

বাংলা ভাষার প্রচলনে উদাসীনতা ইমরান ইমন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৪ এএম

১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার পর বাংলা ভাষাকে বিশ্বায়নের পূর্ণরূপ দেয়ার জন্য জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার এই উদ্যোগের প্রথম বাস্তবায়ন হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। জাতিসংঘের কার্যক্রম পরিচালিত হয় পাঁচটি ভাষায়। সব দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী তথা জাতিসংঘের নিযুক্ত প্রতিনিধিরা ওই পাঁচটি ভাষার যে কোনো একটি ভাষায় ভাষণ দেন। একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৩ মার্চ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলায় ভাষণ দেয়ার ফলে বিশ্ববাসী জানতে পারে বাংলা ভাষার কথা। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ফলে বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষার মর্যাদা ও গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে যায়। ২০০০ সাল থেকে ইউনেস্কো এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। ভাষা হিসেবে বাংলা এবং বাঙালিদের জন্য এটা গৌরবের বিষয়। বর্তমানে বিশ্বের ৩০টি দেশের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু রয়েছে বাংলা বিভাগ, সেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার অবাঙালি বাংলা ভাষাশিক্ষা ও গবেষণার কাজ করছে। বাঙালি এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। তাই বাংলা ভাষার পরিধিও প্রসারিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় এখন বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি লোক কথা বলে। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাভাষীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৩১ কোটি ৬০ লাখ। প্রচলিত ভাষার মধ্যে মাতৃভাষার বিবেচনায় বিশ্বে বাংলার স্থান পঞ্চম। বিশ্বের সেরা ১০-১১টি ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম। বাংলা এখন বিশ্বের তিনটি দেশের দাপ্তরিক ভাষা- বাংলাদেশ, ভারত ও সিয়েরালিয়ন। বহির্বিশ্বে বাংলা ভাষার এত কদর থাকলেও দেশে মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার গুরুত্ব কতটুকু রয়েছে- সে প্রশ্ন স্বভাবতই সামনে চলে আসে। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি অর্জনের ৭১ বছর অতিবাহিত হলেও সর্বস্তরে এখনো বাংলা ভাষার প্রচলন নিশ্চিত হয়নি। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উচ্চ আদালত, প্রশাসন, ব্যাংক-বিমাসহ সব জায়গায়ই ইংরেজির একচ্ছত্র দাপট। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও তা তোয়াক্কা করছেন না কেউই। ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এক আদেশে দেশের সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বর প্লেট, সরকারি দপ্তরের নামফলক এবং গণমাধ্যমে ইংরেজি বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন সরকারকে। আদালতের ওই আদেশের ৩ মাস পর ২০১৪ সালের ১৪ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলোকে আদেশটি কার্যকর করতে বলে। কিন্তু তা না হওয়ায় ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট আদালত কড়া ভাষায় বলেন, বাংলা ব্যবহারে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি নেই। পরে ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এক চিঠির মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বর প্লেটে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার অনুরোধ জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার ইংরেজির স্থলে বাংলায় প্রতিস্থাপিত হয়েছে বলে দেখা যায় না। এটা বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, হাইকোর্টের রুল ও আদেশের পরিপন্থি বলে মনে করেন আইনবিদরা। এরপর সরকার একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠানের (দূতাবাস, বিদেশি সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র ব্যতীত) নামফলক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার ইত্যাদি এখনো বাংলায় লেখা হয়নি, তা নিজ উদ্যোগে অপসারণ করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাংলায় লিখে প্রতিস্থাপন করতে হবে। না হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু আজো তা বাস্তবায়ন হয়নি। এর পেছনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারের উদাসীনতার প্রশ্ন না উঠে পারে না। ইমরান ইমন : গবেষক ও লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App