×

সারাদেশ

বাউফলে তিন শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:১১ পিএম

বাউফলে তিন শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর বাউফলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাউফল সরকারি কলেজসহ প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় একুশের চেতণা, মূল্যবোধ এবং তাৎপর্য জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। ডিজিটাল বাংলাদেশে মাতৃভাষার জন্য রক্তদানকারী শহীদদের সম্পর্কে জানতে এবং জানাতে না পাড়া নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরও দায়সারা উত্তর দিয়ে এরিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, ১৯৬৬ সালে বাউফল সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮ সালে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০১৯ সালে নতুন ভবন নির্মাণকালে সেই শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হলে আর নির্মাণ করা হয়নি। প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পার হলেও বাউফল সদরের ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজে শহীদ মিনার এখনো নির্মাণ করা হয়নি।

সম্প্রতি কেশবপুর কলেজে শহীদ মিনারের জায়গায় নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করায় শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও শহীদ মিনার নেই। এছাড়াও কেশবপুর এন.এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চন্দ্রদ্বীপ আ.স.ম ফিরোজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালাইয়া আলী আকবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ শৌলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভরিপাশা মুন্সি হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড় ডালিমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

বাউফল উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, উপজেলায় ১১টি কলেজ, ৫৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৭ টি মাদ্রাসা ও ২৩৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৭টি কলেজে শহীদ মিনার রয়েছে। ৬৭টি মাদ্রাসাসহ ৩২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদৌ কোন শহীদ মিনার নেই। অপরদিকে উপজেলায় শতাধিক বেসরকারি স্কুল-মাদ্রাসা রয়েছে। যার কোনোটিতে শহীদ মিনার নেই।

জানা গেছে, কিছু কিছু বিদ্যালয়ে কলাগাছ, কাঠ ও বেঞ্চে দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে মাদ্রাসায় ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাষা দিবস পালন করা হয়না।

একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জানান, ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তারা ছুটি ভোগ করেন। এরফলে ফলে একুশের চেতণা, মূল্যবোধ এবং তাৎপর্য জানা ও বোঝা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

বাউফল সরকারি কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাকিব আহম্মেদ বলেন, কয়েক বছর ধরেই কলেজে শহীদ মিনার নেই। কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উপজেলা প্রশাসনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেও অনেক শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বশার তালুকদার বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে শহীদ মিনারের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন প্রতি উত্তর পাওয়া যায়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ করার চিন্তা রয়েছে।

বাউফল সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সামনুন কবির নেছাদ বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। যার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি করছি।

বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. নার্গিস আখতার বলেন, জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। কালাইয়া আলী আকবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। প্রতিবছর ২১শ ফেব্রুয়ারিতে কাঠের তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

উপজেলার ২৩৫টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকা নিয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. ওয়ালী উল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরে একাধিক বার চাহিদা পাঠিয়েছি। এছাড়াও স্থানীয় ভাবে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বছর ২টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।

বাউফল উপজেলা মাদ্রাসা জেনারেল টিচার এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর কোনো সরকারই মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি। স্কুল কলেজের মত মাদ্রাসায়ও শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন। যাতে ভাষা দিবস সম্পর্কে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নাজমুল হক বলেন, বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। যেসব বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই তার তালিকা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমেই বাউফল উপজেলার যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App