×

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে একই প্ল্যাটফর্মে চায় আ.লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:২০ এএম

মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে একই প্ল্যাটফর্মে চায় আ.লীগ

ছবি: সংগৃহীত

১৪ দলে আগ্রহ ছোট দলগুলোর অপেক্ষায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, তৃণমূল বিএনপি, ইসলামিক ফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোট

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলে যুক্ত হতে চায় আরো বেশ কিছু ছোট ছোট রাজনৈতিক দল। যুক্ত হতে চাওয়া এসব দলের কোনোটির নিবন্ধন আছে, কোনোটির নেই। এরই মধ্যে কয়েকটি ইসলামী দলও আছে। আওয়ামী লীগ ও জোটের শরিক দলগুলো চায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে বৃহত্তম নির্বাচনী জোটও হতে পারে। অবশ্য জোটের কোনো কোনো শরিক ইসলামী দলগুলোকে এই প্ল্যাটফর্মে নিতে নারাজ। তবে মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী যে কোনো দলকে ১৪ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তাদের আপত্তি থাকবে না। এর বাইরে অন্য যে কোনো দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট হতে পারে। অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে রয়েসয়ে এগোতে চায়। তবে আগ্রহী দলগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতা। বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান আন্দোলনের গতিবিধি দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে- এমনটিই বলছেন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা।

কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত যেসব রাজনৈতিক দল এখন যুগপৎ আন্দোলন করছে, সেসব দলের বেশির ভাগই খণ্ডিত। তাদের একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে থাকলেও অপর অংশটি ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। আওয়ামী লীগও তাদের অপেক্ষায় রেখেছে। এছাড়া যুগপৎ আন্দোলন করছে- এমন কিছু দলের শীর্ষ নেতারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তারাও সিগন্যাল পেলেই চলে আসবেন ১৪ দলের সঙ্গে। তবে সেসব দল কারা, তা এখনই খোলাশা করে বলছেন না ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা রাখে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও রয়েছে। অবস্থা বুঝেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য ভোরের কাগজকে জানান, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে কিছু দল যুগপৎ আন্দোলন করছে। তারা একের পর এক নানা কর্মসূচি দিচ্ছে। কোনোটিতেই তারা সফল হতে পারছে না। সরকারকে শুধু একের পর এক হুমকি দিয়ে তর্জন-গর্জন করে চলেছে। আওয়ামী লীগও মাঠে আছে। ১৪ দলকেও আমরা সক্রিয় করেছি। জোট শরিকরাও মাঠে আছে। বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের আন্দোলনে সরকার মোটেও চিন্তিত নয়। তারা যে কর্মসূচি দিচ্ছে, আমরাও একই দিনে শান্তি সমাবেশ করছি। সুতরাং আওয়ামী লীগ একাই যথেষ্ট বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবিলা করতে। তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমাদের কোনো বাধা নেই। কিন্তু কর্মসূচির নামে যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, সে ক্ষেত্রে তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজ করবে। আর আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের দল। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই তাদের অপচেষ্টা মোকাবিলা করবে।

জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে এই নেতা বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের আদর্শিক জোট ১৪ দল আছে। এই জোট অনেক শক্তিশালী। যে কোনো লড়াই-সংগ্রামে আমরা একসঙ্গে পথ চলছি। এই জোটের সবাই পরীক্ষিত। বিগত দিনের পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজনৈতিকভাবে আমরা সফল। নির্বাচনকেন্দ্রিক আমাদের জোট হয়। এবারো সে রকমই হতে পারে। অনেক রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। তাদের ১৪ দলে নেব, নাকি নির্বাচনী জোটে নেব- সেটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমাদের দলের সভাপতি পরিস্থিতি বুঝে জোটের সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিএনপি যেভাবে হাঁকডাক দিয়ে রাজপথে নামার চেষ্টা করছে। তার চেয়ে তারা ষড়যন্ত্রে বেশি সক্রিয়। সেটা দেশে হোক আর বিদেশে হোক। আমরাও তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছি। বিএনপি নানা জোট নিয়ে যেভাবে লম্ফঝম্প শুরু করেছে- তারা মনে করেছে, সরকার ভয় পেয়ে যাবে। সেটা তাদের ভুল ধারণা। আওয়ামী লীগও প্রস্তুত তাদের শক্তহাতে মোকাবিলা করতে। অনেক রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে আসতে চায়। তাদের সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চাইলে অনেক বড় জোট করতে পারে। সেটা পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করবে। এরই মধ্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে গণভবনে ডেকে আমাদের নেত্রী সে রকম একটা মেসেজ দিয়েছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে এটা বড় একটা বার্তা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এদিকে ১৪ দলীয় জোটকে সক্রিয় করার পাশাপাশি আরো সম্প্রসারণ করতে চান জোটের শীর্ষ নেতারা। এ নিয়ে জোটের বৈঠকেও একাধিকবার আলোচনা করেন তারা। সম্প্রতি দলটির একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ১৪ দলীয় জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে বক্তব্য রাখেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত-তালেবানি শক্তির পুনরুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলের জন্য যে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে, অস্বাভাবিক-অসাংবিধানিক সরকার আনার যে অপচেষ্টা চলছে, তা প্রতিহত করতে হলে অসাম্প্রদায়িক সব প্রগতিশীল শক্তিকে ১৪ দলের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত সক্রিয় ও দৃশ্যমান করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, প্রগতি, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলকে আদর্শের ওপর শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে।

জানা গেছে, এ বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সামনে রেখে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি, ইসলামিক ফ্রন্ট, ইসলামি ঐক্যজোটের একটি অংশসহ কিছু ধর্মভিত্তিক দলও ১৪ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহী। ইসলামিক ফ্রন্ট নামের দলটি অনেক দিন ধরে ১৪ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিভাবে ১৪ দলীয় জোটে এখনো সে রকম আলোচনা হয়নি। জাতীয় নির্বাচন সামনে। হয়তো জোট বাড়ানোর বিষয়গুলো সামনে আসবে। সেগুলো আলোচনা সাপেক্ষেই সিদ্ধান্ত হবে। এর বেশি কিছু এই মুহূর্তে বলতে রাজি হননি জোটের এই শীর্ষ নেতা।

জোটের আরেক শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ভোরের কাগজকে বলেন, ১৪ দল একটা আদর্শিক জোট। জোট বাড়াবে কী বাড়াবে না, সে নিয়ে আমাদের মধ্যে এখনো আলোচনা হয়নি। ১৪ দলে জোটে যারা আসতে চায়, সেটা আমরা বৈঠকে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। তবে নির্বাচন যেহেতু সামনে, অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিয়ে নির্বাচনী জোট হতে পারে- তাতে আমাদের আপত্তি নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App