×

সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা আমলে নিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:২১ এএম

বিশ্বজুড়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা বারবার শীর্ষে উঠে আসছে। দিন দিন ঢাকার বায়ুমানের অবনতি বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগের। রাজধানীতে বসবাসকারীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা একিউআই এয়ারের দেয়া তথ্যমতে, গত শুক্রবার ৩৩৫ স্কোর নিয়ে বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে ওঠে ঢাকা। ঢাকার বায়ুদূষণের পরিমাণ ১০ শতাংশ করে বাড়ছে প্রতি বছর। আর শীতকালে তা ১৬ গুণ বেশি দূষিত হয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্মল বায়ুর মানমাত্রার চেয়ে ৩১৭ দিনই খারাপ থাকে রাজধানীর বাতাস। এই পরিসংখ্যান আমাদের শঙ্কিত করে। দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় কেন বারবার শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা- এই প্রশ্নে প্রতি বছরই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রতিকারের জন্য সুপারিশমালাও প্রণয়ন করা হচ্ছে। পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে, তবে প্রতিকারের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। নির্মাণকাজ, রাস্তার ধুলা ও অন্যান্য উৎস থেকে দূষিত কণার ব্যাপক নিঃসরণের কারণে ঢাকা শহরের বাতাসের গুণমান দ্রুত খারাপ হচ্ছে। যানবাহনে ব্যবহƒত জ¦ালানি থেকে নির্গত কার্বন দূষণের অন্যতম কারণ। এছাড়া বর্জ্য পোড়ানোর কারণে দূষিত হচ্ছে বাতাস। শিল্প কারখানার ধোঁয়া এবং রাজধানীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম নতুন কিছু নয়। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণের কারণে দেশে বছরে মারা যাচ্ছেন প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। গবেষকদের মতে, দূষণের মাত্রা কমানো গেলে বাংলাদেশের মানুষ আরো ৫ দশমিক ৪ বছর বেশি বাঁচতেন। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার কারণে শুধু ঢাকাবাসীর গড় আয়ু কমেছে ৭ দশমিক ৭ বছর। দূষিত বায়ুর কারণে এখানকার জনগোষ্ঠী মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কেবল স্বাস্থ্য নয়, জিডিপির ক্ষতিও হচ্ছে ৩.৯-৪.৪ শতাংশ। শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ ও বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ছে মানুষের। এ অবস্থায় একিউআই ইনডেক্সের ভয়াবহ মাত্রা ও গবেষকদের পর্যবেক্ষণ আমলে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। জনস্বার্থে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করি। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণ সমস্যায় জর্জরিত। বায়ুদূষণ রোধে ২০২০ সালে ৯ দফা নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত। ৯ দফার মধ্যে ঢাকা শহরে মাটি/বালু/বর্জ্য পরিবহন করা ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা; নির্মাণাধীন এলাকায় নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা; সিটি করপোরেশন রাস্তায় পানি ছিটানো; রাস্তা/কালভার্ট/কার্পেটিং/খোঁড়াখুঁড়ির কাজে দরপত্রের শর্ত পালন নিশ্চিত করা; সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধ করা; পরিবেশগত সনদ ছাড়া চলমান টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা; দোকানের প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগে ভরে রাখা এবং বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করার বিষয়গুলো রয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি দূষণ রোধে ওই ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। যদিও বাস্তবে দেখা যায়, ওই নির্দেশনার দু-একটি ছাড়া বেশির ভাগই মানা হয় না। আমরা এই সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কার্যক্রম প্রত্যাশা করি। পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সংশ্লিষ্টদের আদালতের নির্দেশনা আমলে নিয়ে বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে অবিলম্বে। সুস্থ থাকতে ও বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে হলে বায়ুদূষণ কমানোর বিকল্প নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App