×

জাতীয়

ক্যাসিনোর হোতারা ফের সক্রিয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩২ এএম

ক্যাসিনোর হোতারা ফের সক্রিয়

ফাইল ছবি

পাচার হওয়া টাকার কী হবে?

বিদেশে চিঠি দিয়েও উত্তর মেলেনি : সিআইডি

ক্যাসিনোকাণ্ডের হোতারা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন। ঢাকায় সামাজিক অনুষ্ঠান এবং সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন এদের অনেকে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের নামে শুদ্ধি অভিযান ব্যাপক দেশ-বিদেশে সাড়া জাগালেও প্রায় চার বছর পর এর হোতারা ফিরছেন আগের রূপে। ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতরা আদালতের মাধ্যমে কারামুক্ত হচ্ছেন। পলাতকরা ফিরতে শুরু করেছেন স্বরূপে। কুশীলবরা অনেকে ব্যস্ত অনলাইন ক্যাসিনোতে। ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো শুরু না হলেও অভিজাত হোটেল ও ফ্ল্যাটে গোপনে চলছে ক্যাসিনো। এর মধ্যে ঢাকার মতিঝিলের একটি তারকা হোটেলে ক্যাসিনো চলার খবর পাওয়া গেছে। ক্যাসিনোর হোতাদের মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড ও দুবাইয়ে পাচার করা টাকা ফেরাতে সরকারের নেয়া উদ্যোগ ব্যর্থ হতে যাচ্ছে।

তদন্ত সংস্থার দেয়া চিঠিতে সাড়া মিলছে না বিদেশ থেকে। ফলে তথ্য থাকলেও টাকা পাচারের অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় মামলার তদন্ত শেষ হচ্ছে না। সম্রাটের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ১৯৫ কোটি টাকা পাচারের তথ্য রয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করা টাকার বড় অংশ তিনি ক্যাসিনোতে খরচ করেন।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কী কারণে বিদেশ থেকে জবাব পাওয়া যাচ্ছে না তা চিহ্নিত করে জবাব পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যেসব দেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে সেসব দেশ থেকে তথ্য পাওয়া কঠিন হওয়ার কথা নয়।

সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর আমরা ধারণা করেছিলাম, শুদ্ধি অভিযান চলমান থাকবে। কিন্তু সেটি আর থাকেনি। উল্টো ক্যাসিনোকাণ্ডের হোতারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামনের জাতীয় নির্বাচনে তারা ভূমিকা রাখবে এমন

রাজনৈতিক কারণে তাদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এখন আমরা খবর পাচ্ছি, তারা জামিনে মুক্ত বা প্রকাশ্যে আসার পর বিভিন্ন স্থানে ক্যাসিনো কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যা আবারো সমাজের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিনষ্ট করছে।

তিনি বলেন, তারা কি কারণে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বা কী কারণে ছাড়া পেলেন তা স্পষ্ট নয়। স্বাভাবিকভাবে মনে হচ্ছে, একটি মহল তাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছিল। তারাই ক্ষমতা ব্যবহার করে আবারো এদের প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। তাদের ফিরে আসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মানিলন্ডারিং মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির ইকোনমিক স্কোয়াডের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির ভোরের কাগজকে বলেন, দুটি মামলায় সংশ্লিষ্ট তিন ব্যক্তির পাচার করা টাকার ব্যাপারে জানতে মিউচুয়াল লিগ্যাল এচিভমেন্ট রিকুয়েষ্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় স¤্রাট ও আরমান এবং আরেকটি মামলায় খালেদের পাঠানো অর্থের ব্যাপারে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। সম্রাটের পাচার করা অর্থের বিষয়ে তথ্য চেয়ে গত বছরের অক্টোবরে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সেই চিঠির জবাব না পাওয়ায় তারা মামলার অভিযোগপত্র জমা দিতে পারছেন না।

তিনি বলেন, খালেদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ওই সব দেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তথ্য চেয়ে চিঠি চালাচালি করলেও কোনো উত্তর মিলেনি। তাই খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হলেও অভিযোগপত্র দেয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার মোট ১৩ জনের মধ্যে যুবলীগের নেতা সম্রাট, খালেদ মাহমুদ, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সাবেক সভাপতি কাজী শফিকুল আলম, মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া জামিনে মুক্ত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান এত বছর পলাতক থাকলেও গোপনে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। তার ঘনিষ্ঠরা ফিরছেন ক্লাবপাড়ায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় পালিয়ে সিঙ্গাপুর চলে যান। চলতি বছর ৩০ জানুয়ারি দেশে ফিরলেও ১৪ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁওয়ে এক সভায় প্রকাশ্যে দেখা যায় তাকে। সূত্র বলছে, এশিয়ান যুব হকি চ্যাম্পিয়নশিপের আগে যুব হকি দলের ক্যাম্পের জন্য ৫০ লাখ টাকার স্পন্সর জোগাড় করেছেন সাইদ। ফলে তিনি এশিয়ান যুব হকি চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের প্রতিনিধিত্বও করবেন।

ক্যাসিনোকাণ্ডের ঘটনায় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ গ্রেপ্তার ১৩ জনের বিরুদ্ধে মোট ৫৭টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫২টি মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। তবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সম্রাট ও খালেদের বিরুদ্ধে একটি করে দুটি ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হক ওরফে এনু, রুপন ভূঁইয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা তিন মামলাসহ মোট পাঁচ মামলার তদন্ত চার বছরেও শেষ হয়নি।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সম্রাট, একই সংগঠনের সহসভাপতি এনামুল হক ওরফে আরমান, ওই সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র?্যাব। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ, র?্যাব ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মোট ৫৭টি মামলা করে। এর মধ্যে অস্ত্র, মাদক, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ ক্ষমতা ও মানিলন্ডারিং আইনে ৩৪টি মামলা করে পুলিশ ও র?্যাব। এছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১২ জনের বিরুদ্ধে মোট ২৩টি মামলা করে দুদক। সিআইডি, দুদক, র?্যাব ও ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্ত শেষে ৫২ মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এর মধ্যে দুদকের ২৩টি মামলার মধ্যে ২০টির অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। এনু, রুপনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা বাকি তিন মামলার তদন্ত শেষ হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি খালেদ মাহমুদকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ঢাকায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা অভিযানে সম্রাট, আরমান, খালেদ মাহমুদ, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজ, যুবলীগের নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে (গোলাম কিবরিয়া) শামীম ছাড়াও অনলাইন ক্যাসিনো কারবারি সেলিম প্রধানসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা দুই ভাই এনামুল হক ওরফে এনু ও রুপন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App