মা, মাটি ও মাতৃভাষাকে ভালোবাসার আহ্বানে শেষ হলো জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যেদের সন্তানদের নিয়ে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী আবৃত্তি শিক্ষার কর্মশালা।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের কবিতা আবৃত্তি করে শোনায় কর্মশালায় অংশ নেয়া শিশুরা। তাদের দলীয় কন্ঠে উঠে আসে স্বাধীনতা হও তুমি, একাত্তরের মার্চে, একাত্তরের ফুল, মুক্তি বাহিনী, স্বাধীনতার গানের মতো কবিতা। তেমনি কেউ কেউ রপ্ত করেন নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার তেজ। প্রমিত উচ্চারণ ও কবিতা আবৃত্তি শেখানোর মধ্য দিয়ে ‘আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ’ শিশুদের মনে গেঁথে দেয় মা, মাটি ও মাতৃভাষাকে ভালোবাসার বীজ। শিশুদের কোমল হৃদয়ে ভাষার প্রতি ভালোবাসা জাগানোর মহৎ দায়িত্ব নিয়েছিলেন ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

এ কর্মশালায় অংশ নেয়া শিশুদের আগ্রহ ও উচ্ছ্বাসে অভিভাবকরাও মুগ্ধ। সঞ্চিতা দত্ত বলে, শিশুদের আবৃত্তি আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। আমার বাচ্চা যখন কর্মশালাতে অংশ নিচ্ছে তখন আমি হতাশ ছিলাম। কর্মশালা শেষে তিনি আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ ও আবৃত্তি করেন। এটা দেখে আমি খুবই আনন্দিত।

[caption id="attachment_407813" align="aligncenter" width="1200"] শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী আবৃত্তি শিক্ষার কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে মেয়ে পূর্না সুনন্দা দত্তের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

এ ধরনের কর্মশালা শিশুদের মুক্ত মনের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে বলে মনে করেন অভিভাবক ইব্রাহিম খলিল জুয়েল। তিনি বলেন, বিদ্যায়তনিক (একাডেমিক) পড়াশোনা শিশুদের মুক্ত মনের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না। শিশুদের বিকশিত করতে এই ধরণের কর্মশালা খুবই প্রয়োজন।

বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ বলেন, তিনদিনের এই কর্মশালায় শিশুরা অনেক বেশি আনন্দ খুঁজে পেয়েছে। শিশুরা স্বতঃস্ফূর্ত, জড়তামুক্ত। এ আয়োজন অব্যাহত থাকলে তারা (শিশুরা) আরো বিকশিত হবে। মা, মাটি ও মাতৃভাষাকে ভালোবাসতে হবে। সুন্দর করে কথা বলার জন্য ভাষাটাকে ভালোবাসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সংস্কৃতিহীন রাজনীতিকে আপরাজনীতি বলে মনে করে ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ভালো রাজনীতি হলো সংস্কৃতিক রাজনীতি। বর্তমানে রাজনীতির মধ্যে সংস্কৃতি নেই।

শিশুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শুধু বিদ্যায়তনিক (একাডেমিক) পড়া দিয়ে হবে না। তোমাদের বই পড়তে হবে, কবিতা, নাচ শিখতে হবে, ছবি আঁকতে হবে। শিশুদের জন্য এই প্রেসক্লাবে গানের ও নাচের ক্লাস হবে, সিনেমা দেখানো হবে।

শিশুদের মাতৃভাষা দিবসের গৌরবময় ইতিহাস শুনান জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা বলেছিল রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। বাঙালিরা প্রতিবাদ করেছিল। তারা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা দাবি করেছিল। রক্তের বিনিময়ে এই ভাষা পেয়েছি। তাই মাকে যেমন করে ভালোবাসি তেমনি মাটি (দেশ) ও মাতৃভাষাকেও ভালোবাসতে হবে।

এ কর্মশালা পরিচালনা করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের শিশু বিষয়ক সাব-কমিটির আহ্বায়ক শাহানাজ শারমীন সোমা।এসময় আরো ছিলেন প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক আজহারুল ইসলাম আজাদ ও অভিভাবকরাসহ প্রমূখ। অনুষ্ঠান শেষে অংশ নেয়া শিশুদের সার্টিফিকেট দেয়া হয়।