×

সারাদেশ

সোনাগাজীতে ‘মায়ের স্বর্গ’ উপহার দিলেন সেই শিক্ষক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:১১ পিএম

সোনাগাজীতে ‘মায়ের স্বর্গ’ উপহার দিলেন সেই শিক্ষক

ছবি: ভোরের কাগজ

মাকে বাড়ি উপহার দিয়েছেন সোনাগাজীর সেই শিক্ষক শিপন রায় ও তার ভাই রতন রায়। এর আগে শিক্ষকতা শুরুর পরই মা গীরু বালা রায়কে বিমানে চড়িয়ে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন শিক্ষক শিপন। এবার ভালোবাসা দিবসে দুই ভাই মাকে উপহার দিলেন স্বপ্নে বাড়ি ‘মায়ের স্বর্গ’।

শিপন রায় রাজধানীর টিকাটুলী কামরুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক। ২০২০ সালে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য বিসিএসের সুপারিশ পেয়েছিলেন তিনি। এরপরই মায়ের স্বপ্ন পূরণে তিনি তাকে বিমানে চড়ান।

শিপন জানান, ফেনীর চরচান্দিয়া গ্রামের মেয়ে তার মা গীরু বালা রায়। জরাজীর্ণ ঘরে বহু কষ্টের জীবন ছিলো তার। বর্ষায় টিনের ফুটো গলে ঘরে পানি পড়ত। আর শীতে হু হু করে ঢুকত হিমেল বাতাস। ছেলেমেয়ে নিয়ে অনেক সময় না ঘুমিয়েই রাত পার করতে হতো। ৬২ বছর বয়সী মাকে তাই বাড়ি উপহার দিয়েছেন দুই ভাই। বাড়ির নাম দিয়েছেন ‘মায়ের স্বর্গ’। নতুন বাড়িতে উঠেছেন তার মা।

তিনি বলেন, আমার বাবা স্বপন রায় ও মাকে সারাজীবন ভাঙা টিনের ঘরে জীবন কাটাতে দেখেছি। এমনও রাত কাটাতে দেখেছি যখন আমরা ঘুমায় তখন মা সারারাত জেগে বড় বাটি নিয়ে ভাঙা টিনের ছাদ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ার সময় সে পানিগুলো মা ধরার চেষ্টা করেছেন যাতে আমরা ভিজে না যাই। শীতের সময়ে মা মাটির পাতিলে গরম ছাঁইয়ের তাপ দেয়ার চেষ্টা করতেন। ভাঙা ঘর হওয়ায় প্রচুর ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করতো। এসব স্মৃতি আমাকে অনেক অনেক কষ্ট দেয়।

এছাড়া আমার মায়ের বয়স হয়েছে বলে বাকিটা জীবন যেন আরাম আয়াসে কাটাতে পারে সে জন্য করা। মূল উদ্দেশে হচ্ছে বর্তমান সময়ে যেভাবে বাবা-মায়ের ঠাঁই বৃদ্ধাশ্রমে হচ্ছে তা থেকে বের হয়ে বাবা-মায়ের সুখের জন্য এটুকু চেষ্টা করা।

তিনি জানান, বাড়িটা তিনতলা ফাউন্ডেশনের একতলা বাড়ি। এটি মূলত একটা ডোবার সীমিত জায়গা ভরাট করে বাবা-চাচাদের রেখে যাওয়া ভিটেমাটিতে করা। আমার চাচাদের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা করে এককভাবে বাড়িটা করেছি। চাচাদেরকে অন্য অংশে ততটুকু জায়গা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। জায়গা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। সাত ফুট পর্যন্ত মাঠি ভরাট করে বাড়িটা করা হয়েছে।

শিক্ষক শিপন রায় বলেন, মায়ের জন্য বাড়িটা করতে গিয়ে গত দুই বছর ধরে পড়াশোনা করিনি। চাইলে আমি আরো তিনটি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতাম। কিন্তু নিলাম না। কারণ আমার মায়ের জন্য কিছু একটা করার স্বপ্ন জেগে বসে। বড় কোনো পদে চাকরি করতে পারবো না এটা জানি কিন্তু আমার মায়ের কাছে, পৃথিবীর সব মায়ের কাছে ভালো সন্তান হিসেবে থাকতে হয়তো পারবো। তরুণ প্রজন্মকে প্রেরণা দিতেই এ কাজটি করেছি।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন শিপন রায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App