×

জাতীয়

‘ভাষা ও আবাস হারাচ্ছে সুইপাররা’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:০৮ পিএম

আমাদের বৈশিষ্ঠ্যগুলো হারাচ্ছি, ভাষাগুলো হারাচ্ছি। কথা বলার সাহস পাচ্ছি না। আমাদের মাথা গুজার ঠাঁই নেই। আমার নিজের কাছে প্রশ্ন আমরা এই দেশের নাগরিক কিনা!

কথাগুলো বলেছিলেন রাজধানীর আউটফল তেলেগু কলোনির উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দা ইয়ারামসেটিং ভেংকাটেশ ভিক্কি রাজ।

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন উচ্ছেদ হওয়া তেলুগু সম্প্রদায়। ওই এলাকার বাসিন্দা রামনাম্মা অভিযোগ করেন, যাত্রাবাড়ী থানার কর্মকর্তা এলাকার মাতব্বরদের ডেকে নিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশন যে নির্দেশনা দেবে তা তাদের অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। এ বিরুদ্ধে কোন ধরনের প্রতিবাদ, মানববন্ধন চলবে না বা কাউকে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। কিন্তু এই আউটফল ছিল একটি ডোবা। মরা লাশ পড়ে থাকতো। আমরা সেটাকে সোনার বাংলা বানিয়েছি। এখন সেটার উপর নজর পড়েছে।

বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, আউটফল তেলেগু কলোনির উচ্ছেদের অপপ্রয়াস শুরু হয়েছে। এটি সংবিধান পরিপন্থি। সমস্যাটি শুধু তেলেগু সম্প্রদায়ের নয়। তাই এ বিষয়ে নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নজিরকে উপেক্ষা করে নোটিশ ছাড়া, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়া মেয়র ফজলে নুর তাপস তাদেরকে উচ্ছেদের কথা বললেন। ক্ষমতায় না থাকলে তারা বলে, প্রভু নয় সেবক, কিন্তু ক্ষমতায় গেলে সেবক থেকে প্রভু ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এএলআরডির প্রোগ্রাম ম্যানজার অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ সিরাজী। তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের মধ্যে রাজধানীর আউটফল তেলেগু কলোনি খালি করা নির্দেশ দেয়। স্থানীয় কাউন্সিলর ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একই নির্দেশ দেন। ১০ ফেব্রুয়ারি কলোনি ভাঙার কাজ শুরু করে ১৩০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। এখানে একটি প্রাচীন মন্দির, দুটি চার্চ ও উপসানালয় এবং একটি স্কুল রয়েছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তেলেগু শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে। তাদের শিক্ষা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। যদিও বস্তি উচ্ছেদ মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে পুনর্বাসন ছাড়া কোনো বস্তি বা কলোনি উচ্ছেদ করা যাবে না। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট অভিমত দিয়েছে বাসসস্থানের অধিকার তার জীবন ধারনের অধিকারের সামিল যা মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। তাই এখানে বৈধভাবে বসবাসরত পরিচ্ছন্ন কর্মীদের উচ্ছেদ করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।

লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, সুইপার কলোনির বাসিন্দা পুনর্বাসন ব্যতিত উচ্ছেদ করা যাবে না। পুনর্বাসন স্থায়ীভাবে হতে হবে। জমির মালিকানার বৈধ কাগজপত্র তাদের নিকট হস্তান্তর করতে হবে। তাদের দুটি গির্জা ও একটি শিব মন্দিরের যথাযথ সুরক্ষা দিতে হবে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে এ সংক্রান্ত চাকরিতে তাদের সব সময় অগ্রাধিকার দিতে হবে। কাউকে চাকরিনেই বলে উচ্ছেদ বা বাস্তুচ্যুত করা যাবে না।

এএলআরডির শামসুল হুদার পরিচালনায় এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমূখ। সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিলেন, নিজেরা করি, বেলা, ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App