×

সাহিত্য

অমর একুশে বইমেলা: মুখরতা থেকে শূন্যতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:১৩ পিএম

বসন্তের হাওয়ায় একদিন আগেও বাসন্তী রঙের ঢেউ জেগেছিল অমর একুশে বইমেলায়। প্রাণের জোয়ারে উপচে পড়ছিল গোটা মেলা চত্বর। পাঠক আর বইপ্রেমীই শুধু নয়, প্রেম আর ভালোবাসার অনুরাগীদের পদচারণাতেও ছিল মুখর। অথচ একদিন পরেই একেবারে ভাটার টানে প্রাণের সব উচ্ছ্বাস যেন থেমে গেল। মেলাভর্তি আনন্দের জোয়ার, ভাটায় পরিণত হলো। বুধবার মেলার ১৫তম দিনে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। মেলা চত্বর ছিল অনেকটাই ফাঁকা, অনেকের চোখেই শূন্য শূন্য। মেলার স্টলে স্টলে ভিড়ও তেমনটা ছিল না, যতটা আশা পুষে রেখেছেন বিক্রেতারা।

মৌমিতা মোহনা নামের এক বিক্রয়কর্মী জানালেন, বসন্তের দিনে স্টলে দাঁড়িয়ে দম ফেলার সময়ই ছিল না। ক্রেতাদের চাওয়া আর পাওয়ার মেলবন্ধন ঘটাতেই প্রাণপ্রাণ অবস্থা। অথচ এখন দেখি শূন্য। প্রত্যাশার বিপরীতে বলা যায় অনেকটা খাঁ খাঁ অবস্থা। স্টল খোলার পর থেকেই অনেকটা ঢিমেতাল যেন। দু’একজন আসছেন, বইও দেখছেন, তবে কেনায় যেন ঢিলেমি।

উৎস প্রকাশনীর কর্নধার মোস্তফা সেলিম জানালেন, এবারের মেলা চলছে অনেকটা জোয়ারভাটার সূত্র ধরে। অনেকটা ইভেন্টভিত্তিক। ছুটির দিন আর বিশেষ দিন ছাড়া অন্য সব শূন্য দিন বলা যায়। মেলা ভরা মানুষে। অথচ স্টলে এসে ভেড়ার তাগাদা একেবারেই কম। দূরে দূরে, লেকের পাড়ে, কিংবা সেলফি তুলেই সময় পার করছেন। কখনও আবার ফুডকর্নারেও বেশ চাপ।

মুক্ত চিন্তা প্রকাশনের কর্নধার শিহাব বাহাদুর জানালেন, মেলা প্রথম সপ্তাহ ছিল অনেকটা অপেক্ষার। আর দ্বিতীয় সপ্তাহ ধরতে পারেন প্রত্যাশার। আর পহেলা ফালগুনের দিনটি ছিল আবেগের। আবেগে সাড়া পেয়েছি আমরা। উচ্ছ্বল পদচারণার পাশাপাশি বই সংগ্রহের প্রবণতাও ছিল। তবে রোমান্টিক গল্প, কবিতা কিংবা উপন্যাসের দিকেই তরুণ-তরুণীদের নজর ছিল বেশি। নন ফিকশন অন্য বইগুলোর জন্য ভাগ্য সহায়।

মেলায় আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুনায়েদ, সাজিদ, রাজন জানালেন, ক্যাম্পাসের কাছেই যখন বইমেলা তখন কি আর ছাড়া যায়। আসা হয় বিকেলে প্রতিদিনই প্রায়। বই কেনা হোক না হোক, পাশাপাশি বসা, আড্ডা দেয়া কিংবা নিতান্তই নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেয়া, মন্দ নয়। বসন্তের ডাকেও সাড়া দিয়েছিলাম, আড্ডাও দিয়েছি বন্ধুরা মিলে। সে ছিল অন্যরকম আসা। আজও এসেছি মেলা চত্বরে। স্টলে স্টলেও গেছি। মেলায় আসা বিশিষ্ট কবি শিহাব সরকার বলেন, বই যেন আর বই নেই। যেন উৎসবের অনুসঙ্গ। অথচ বই-ই এখন বেশি দরকার। হয়তো পুঁজিবাদের কুফল। একটা বইয়ের একটা স্টলের চেয়ে ফুডকর্নারই তা বেশি টানছে। একটা কবিতার চেয়ে হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ার এক পোস্টই বেশি নজর কাড়ছে। বইয়ের পাতা ছেড়ে চোখ ছুটছে ভার্চুয়াল জগতের টানে। সভ্যতার এ এক অসুস্থতা। এই অসুস্থতার চিকিৎসাই কিন্তু বই। কীভাবে ফেরা হবে জানেন না অনেকে। কিন্তু প্রত্যাশা আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App