×

জাতীয়

ভালোবাসায় রঙিন বইমেলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:১২ পিএম

https://www.youtube.com/watch?v=dFWoOPbJukc

করোনা মহামারির ঘরবন্দি বৈরীকাল পেরিয়ে অবশেষে ফালগুনের আবেগ উচ্ছ্বাস আর ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে উঠলো অমর একুশে বইমেলা। পয়লা ফালগুনের আগুন হাওয়ায় দুলে উঠলো মেলা প্রাঙ্গণ। বসন্তের অপরূপ সাজে নিজেদের সাজিয়ে বইপ্রেমী আর পাঠকদের যেন ঢল নামলো মেলা চত্বরে।

মঙ্গলবার অমর একুশে বইমেলার বিকেলটি ছিল রঙ ছড়ানো, প্রেম জাগানো, লাল গোলাপে রঙিন। বৃক্ষের শাখায় শাখায় কোকিলও মনের সুরে ডেকে গেছে। শুধু কি তাই! অব্যক্ত কথা যেন ডালপালা মেলে ছড়িয়ে পড়েছিল বসন্তের মধুর হাওয়ায়। বইপ্রেমী যুগলদের হৃদয় থেকে উচ্চারিত হয়েছে ‘ভালোবাসি’ শব্দটি।

শীতের আড়মোড়া ভাঙা সোনাঝরা দুপুর পেরোতেই পাঠক-বইপ্রেমীরা ছুটে এসেছিলেন অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। টিএসসি থেকে বইমেলা যেন উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে উঠে। শুধু তরুণ-তরুণীই নয়, নানা বয়েসিরাও সেজেগুজে এসেছিলেন বইমেলার বিস্তীর্ণ আঙিনায়। ছোট-বড় সব মেয়ের মাথায় ছিল লাল গোলাপ আর গাদায় রাঙা টায়রা। প্রিয়মানুষকে বই উপহার দেয়ার জন্য ভিড় জমেছিল স্টলগুলোতে।

[caption id="attachment_407102" align="alignnone" width="1156"] ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

প্রিয়জনের সঙ্গে মেলায় আসা তরুণী তানহা তাবাসসুম বললেন, বই পড়তে ভালোবাসি ঠিকই, সঙ্গে তো ভালোবাসাবাসিও থাকতে পারে। ব্যক্তিগত প্রেম থেকে বিশ্বপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম সবই তো পাই বই থেকে। তাই আজকের বইমেলা অন্যরকম। প্রকৃতি আর বই যেন মিলেমিশে একাকার।

সঙ্গী সায়ন্ত বললেন, এদিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করি। পরস্পরকে পছন্দের বই উপহার দিই। বইয়ের সঙ্গেও আমাদের প্রেম। পছন্দের বই নিয়ে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতে পারি।

ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে এবারের মেলায় প্রথমবারের মতো এসেছিলেন গণমাধ্যম কর্মী আশেকুল ইসলাম। বললেন, বইমেলা তো সর্বজনীন প্রাণের উৎসব। শুধু কি বই কেনা, ভাষার মাস আর ভাষা শহিদদের স্মরণও তো করি এর মধ্য দিয়ে। ভাষার জন্য বিশ্বের আর কোনো দেশে কখনও প্রাণ দিতে হয়নি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন বাংলা ভাষা, সাহিত্য সংস্কৃতি সগৌরবে বুকে ধারণ করতে পারে সেজন্যই মেয়েকে নিয়ে মেলায় আসা আজ।

বইমেলায় জীবনসঙ্গী প্রফেসর মো. যোবদুল হকের শিক্ষাবিষয়ক বই ‘শিক্ষকতায় সাড়ে তিন দশক: আমার চ্যালেঞ্জ’ আর শিক্ষক মেয়ের কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে এসেছিলেন বেগম আরজুমান্দ হক। বললেন, শিক্ষাই তো জাতির মেরুদণ্ড। আর বই সেই শিক্ষাকে বহন করে। তাই বইমেলা উন্মুক্ত পাঠশালার মতোই। ভালো বই প্রকাশ করতে হবে। যা সামাজিক অবক্ষয় ঠেকাতে পারবে। মেলায় এসে খুব ভালো লাগলো।

ফাল্গুনের প্রথমদিনে মেলা চত্বরে ছিল অনেকটা উপচে পড়া ভিড়। সেই ভিড়ের ঢেউ গিয়ে মিশেছে স্টলে স্টলেও। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রেমের গল্প, কবিতা, উপন্যাস বেশি কিনেছেন পাঠকরা। বিশেষ করে নতুন লেখকদের বইও বিক্রি হয়েছে। তবে জনপ্রিয় লেখকদের কবিতা আর উপন্যাসও সংগ্রহ করেছে অনেকে।

ইত্যাদি গ্ৰন্থপ্রকাশ এর বিক্রয় প্রতিনিধি মিথুন বলেন, ভালোবাসা দিবসে মেলায় তরুণরা বেশি এসেছেন মেলায়। তাদের চাহিদার শীর্ষে ছিল রোমান্টিক গল্প-উপন্যাস।

অন্বেষার তুহিন জানালেন, এদিন ক্রেতাদের চাপ বেশি ছিল। বই বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। তবে ক্রেতাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। কবিতা আর উপন্যাসের চাহিদা বেশি ছিল। প্রকাশকরা জানালেন, পাঠক, বইপ্রেমী আর দর্শনার্থীদের সমাগম যেমনটা ছিল, বেচাবিক্রিও হয়েছে বেশ। মূলত, ভালোবাসা দিবসে প্রেমের কবিতা, গল্প ও উপন্যাসই বেশি বিক্রি হয়েছে।

তবে উল্টো কথাও বললেন কয়েকজন প্রকাশক। তাদের ভাষ্য, যতটা বিক্রির আশা করা হয়েছিল ততটা হয়নি। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বইয়ের দাম আগের চেয়ে একটু বেড়েছে। তাই তরুণদের ইচ্ছে থাকলেও অনেক বই কিনতে পারেননি। তবে বেচাবিক্রি যে একেবারেই খারাপ সেটাও বলা যাবে না।

বইমেলায় বাবা ও মেয়ের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

আশির দশকের স্বনামধন্য শিক্ষক প্রফেসর মো. যোবদুল হকের ‘শিক্ষকতায় সাড়ে তিন দশক: আমার চ্যালেঞ্জ’ ও তার মেয়ে কৃষিবিদ সৈয়দা বদরুন নেসার ‘ইচ্ছেগুলো উড়ে যায়’ বই দুটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ উন্মোচন মঞ্চে বই দুটি উন্মুক্ত করা হয়েছে।

মোড়ক উন্মোচন করেন প্রফেসর যোবদুল হকের সহধর্মিণী ও কবি সৈয়দা বদরুন নেসার মা বেগম আরজুমান্দ হক ও লেখকের প্রাক্তন ছাত্র বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।

উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের এইচএসসি-১৯৯১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কবি বদরুন নেসার কৃষিবিদ বন্ধু ও সহপাঠীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App