×

জাতীয়

বিকাশে প্রতারণা করে আলিশান বাড়ি গড়েছে সংঘবদ্ধ চক্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:৪৩ পিএম

বিকাশে প্রতারণা করে আলিশান বাড়ি গড়েছে সংঘবদ্ধ চক্র

ছবি: ভোরের কাগজ

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্রটি। এজেন্ট নম্বরে ভুয়া সেন্ড মানির মেসেজ পাঠিয়ে কৌশলে তারা তাদের পার্সোনাল নম্বরে টাকা ক্যাশ ইন করিয়ে নেয়। পরে এজেন্টরা চেক করে দেখেন কোনো টাকাই তাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেনি। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

প্রতারণার এসব টাকা দিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা আলিশান বাড়ি তৈরি করে আয়েশি জীবন যাপন করছে। ব্যাংক হিসাবে জমা করেছে বড় অংকের টাকা। তবে রেহাই মিলেনি। এক এজেন্টের অভিযোগের ভিত্তিতে এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলো- হাবিবুর রহমান ওরফে রাসেল (৩২), মো. নাসির বিশ্বাস (২৭) ও মো. পারভেজ শেখ (২৬)। রবিবার গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনাল টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ক্যান্টনমেন্ট থানার প্রতারণা মামলায় মোহাম্মদপুর থানা ও ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানাধীন ডুমাইন গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ১১টি মোবাইল, ৪৯টি সিম, ১টি মোটরসাইকেল ও নগদ ৩৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী রুহুল্লাহ সিদ্দিক (৩৩) ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদী বাজারের সীমান্ত মার্কেটের বিসমিল্লাহ টেলিকমের মালিক। তিনি ৪ বছর ধরে ওই দোকানে বিকাশ, নগদ ও রকেটের এজেন্ট ব্যবসা করেন। গত ১২ জানুয়ারি তিনি জরুরি কাজে উত্তরা এলাকায় অবস্থান করছিলেন। দুপুর ২টার দিকে তার বিকাশ ও নগদের এজেন্ট নম্বরে একজন প্রতারক ফোন করলে তার বাবা ফোনটি রিসিভি করেন। প্রতারক তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করে পার্সোনাল বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাইলে ক্যাশ টাকা দেয়া যাবে কিনা। রুহুল্লাহ’র বাবা তাকে বলেন বিকাশে লেনদেনের বিষয়টি তিনি দেখেন না। পরে প্রতারক ব্যক্তি রুহুল্লার মোবাইলে ফোন দিয়ে বলে তার বাবার কাছ থেকে নম্বরটি পেয়েছে।

পার্সোনাল বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালে ক্যাশ দেওয়া যাবে কি না। সম্মতি পেয়ে ওই প্রতারক ৯ হাজার ১৮০ টাকা সেন্ড মানির একটি মেসেজ পাঠিয়ে রুহুল্লাহকে ফোন দিয়ে বলে ভুল করে বেশি টাকা চলে গেছে। একটি নগদ অ্যাকাউন্ট নম্বর দিচ্ছে সেটিতে ৪ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। রুহুল্লাহ তখন শুধু মেসেজ এসেছে সেটি দেখে তার দোকানের এক কর্মচারীর মাধ্যমে প্রতারকের দেয়া নগদ নম্বরে ৪ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরে প্রতারক আবার রুহুল্লাহকে ফোন দিয়ে বলে এভাবে আরও টাকা বিকাশে পাঠালে নগদে অ্যাকাউন্টে পাঠাতে পারবে কিনা। রাজি হওয়াতে ৪টি নম্বর থেকে প্রতারক ওই ব্যবসায়ীর বিকাশ নম্বরে ৮৯ হাজার টাকার মেসেজে পাঠায়। রুহুল্লাহ মেসেজ দেখে প্রতারকের নগদ নম্বরে ৮৯ হাজার টাকা ক্যাশ ইন করে দেন। বিকালে রুহুল্লাহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তার বিকাশ নম্বর চেক করে দেখেন কোনো টাকা তার অ্যাকাউন্টে ঢুকেনি।

রুহুল্লাহ বলেন, আমি মোটরসাইকেলে থাকা অবস্থায় প্রতারক আমাকে ফোন দেয়। যতগুলো মেসেজ পাঠিয়েছে তার একটিও বিকাশ নম্বর থেকে আসেনি। বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে এসেছে। মোটরসাইকেল থামিয়ে থামিয়ে আমি এক নজর মেসেজ দেখে তার দেয়া মোবাইল নম্বরে ৯৩ হাজার টাকা ক্যাশ ইন করে দিয়েছি।

পল্লবী জোনাল টিমের টিম লিডার ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. রাশেদ হাসান বলেন, প্রতারক চক্রটি মানুষকে ভূয়া মেসেজ পাঠিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে রকেট, বিকাশ, নগদের পার্সোনাল ও এজেন্ট একাউন্ট হোল্ডারদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাত করে। কৌশল হিসাবে প্রথমে ফোন করে পার্সোনাল না এজেন্ট নম্বরে টাকা পাঠাবে সেটি কনফার্ম হয়। পরে ভুয়া মেসেজ পাঠিয়ে আবার ফোন করে নিশ্চিত করে টাকা পাঠিয়েছে। ব্যবসায়ীরাও তখন কিছু বুঝে উঠার আগে এবং ভালোভাবে মেসেজ চেক না করে টাকা পাঠিয়ে দেন।

তিনি আরো বলেন, তারা একেকজনের সঙ্গে একেকভাবে প্রতারণা করে। প্রতারণার জন্য ফোন করা, টাকা রিসিভ ও ক্যাশ আউটের জন্য আলাদা আলাদা লোক থাকে। প্রতারণার কাজ করার জন্য তাদের কাছে বিভিন্ন কোম্পানির একাধিক সিমও থাকে। ১টি সিম দিয়ে প্রতারণা করে আবার নতুন সিম ব্যবহার করে। সিম বন্ধ থাকার কারণে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে। প্রতারণার টাকা দিয়ে তারা আলিশান বাড়ি তৈরি করে আয়েশি জীবন যাপন করছিল। ব্যাংকেও তাদের অনেক টাকা জমা আছে। একই অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে। তারা প্রতারণা চক্রের সক্রিয় সদস্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App