×

সাহিত্য

কুপমণ্ডূকতার মহৌষধ বই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৬ এএম

কুপমণ্ডূকতার মহৌষধ বই

কবি মিনার মনসুর

কুপমণ্ডূকতার মহৌষধ বই

করোনা মুক্ত পরিবেশে আবার আমরা শঙ্কামুক্তভাবে বইমেলায় আসতে পারবো এটা তো কিছুদিন আগেও অকল্পনীয় ছিল। মুক্তির এ আনন্দ এবারের বইমেলায় আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট নিশ্চিতভাবে কিছুটা দুশ্চিন্তার ছায়া ফেলেছে সবকিছুর ওপর। বইমেলাও তার বাইরে নয়। এর মধ্যেও বইমেলা ক্রমশ বড় হচ্ছে। বাড়ছে নতুন বইয়ের প্রকাশনা ও বিক্রি। বাড়ছে লোকসমাগমও। তবে, আমাদের এখন বইমেলার টেকসই ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। ভবিষ্যতে মেলার অধিকতর ব্যাপ্তি ও সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলার কথা ভাবতে হবে এখনই। সর্বোপরি, আপসহীনভাবে মনোযোগ দিতে হবে প্রকাশনার মান ও পেশাদারিত্বের দিকে। এখানে স্বেচ্ছাচারিতার কোনো সুযোগ নেই।

বই পড়া এবং বইমেলা প্রসঙ্গে ভোরের কাগজের এক প্রশ্নের জবাবে কবি ও জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

বই পড়ার মধ্য দিয়ে সমাজের অসঙ্গতি, অনাচার, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ দূর হবে বলে মনে করেন কি না জানতে চাইলে এই কবি ও গবেষক আরো বলেন, মানবসমাজে যত ধরনের অন্ধকার ও কুপমণ্ডূকতা আছে তার একমাত্র মহৌষধ হচ্ছে বই। শত শত বছর ধরে অন্ধকারের বিরুদ্ধে মানবসমগ্রের যে-সংগ্রাম সেখানে বই-ই সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তলোয়ার পরাস্ত হয়েছে, কিন্তু বই বেঁচে আছে। কেননা বই হলো এমন এক ধরনের নিভৃত আলো যা সহস্র সূর্যের চেয়েও শক্তিশালী। মানুষ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে নিয়ে যায় এ আলোর মশাল।

প্রথম মেলার দেখা পেলেন কবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম বইমেলা আমি চট্টগ্রামে যেমন দেখেছি, তেমনি দেখেছি (অংশও নিয়েছি) ঢাকায়ও। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে আশির দশকের শেষাবধি এসব বইমেলা ছিল বাঙালির সত্যিকারের প্রাণের মেলা। এখানে লেখক-পাঠক ও প্রকাশকের এমন এক রসায়ন তৈরি হতো যা আজ আর কল্পনাও করা যায় না। পুরো আবহটাই থাকতো সংস্কৃতিময়। বস্তুত বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির যে-সংগ্রাম সেটাই এখানে ইঞ্জিনের কাজ করতো। আমরা সর্বক্ষণ তার সঞ্জীবনী ঘ্রাণ পেতাম।

তরুণরা ফেসবুকে টুইটারে যতটা সময় ব্যয় করছে বই পড়ায় নয়, এ ব্যাপারে কোন পরামর্শ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শুধু এটুকু বলি, এ-জন্যে তরুণরা দায়ী নয়। দায়ী আমরা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে প্রথমত দায়ী হলো আমাদের পরিবার; দ্বিতীয়ত শিক্ষা ব্যবস্থা; এবং তৃতীয়ত আমাদের সমাজ। পরিবার যদি তার সন্তানকে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ না করে কেবল ভালো রেজাল্ট ও ভালো চাকরির পেছনে দৌড়াতে বলে; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি তাদের কল্পনা ও সৃজনীশক্তিতে বিকশিত না করে কোচিংনির্ভর করে তোলে আর সমাজ যদি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে তাহলে যা হওয়ার এখন ঠিক তাই হচ্ছে।

ডিজিটাল মিডিয়ার একছত্র আধিপত্যে ছাপা মিডিয়া থাকবে কি? উত্তরে এই কবি আরো বলেন, আমার ধারণা প্রিন্ট মিডিয়া ইতোমধ্যে লাইফসাপোর্টে চলে গেছে। বলতে গেলে ডিজিটাল মিডিয়ার সমুদ্রে আমরা ডুবে আছি। এখন এ চ্যালেঞ্জকে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করবো সেটাই হলো এ সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

এবারের মেলায় কথাপ্রকাশ থেকে কবি মিনার মনসুরের তিনটি বই এসেছে। এর মধ্যে কবিতার বই ‘ব্রাসেলসের সন্ধ্যাটি ছিল মনোরম’, দ্বিতীয়টি ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব: স্বপ্ন ও স্বরূপ’। তৃতীয়টি ‘কী ছিল বঙ্গবন্ধুর মনে’ কিছুটা গবেষণাধর্মী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App