×

সারাদেশ

৩০ বছর পর পৌরসভার পেনশন বঞ্চিত কর্মচারীদের চেক প্রদান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৫ পিএম

৩০ বছর পর পৌরসভার পেনশন বঞ্চিত কর্মচারীদের চেক প্রদান

ছবি: ভোরের কাগজ

৩০ বছর পর আনুতোষিক (গ্রাচুয়েটি) পেলেন পটুয়াখালী পৌরসভার অবসরপ্রাপ্ত ১৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পটুয়াখালী পৌরসভার কনফারেন্স রুমে মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ এক কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার টাকার চেক প্রদান করেন।

চাকুরি থেকে অবসরে যাবার ৩০ বছর পর অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা এ টাকা পেয়ে আনন্দ অশ্রুতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অনেক পরিবারের সদস্যরা।

২০০১ সালের পহেলা জানুয়ারি পৌরসভার ডুপ্লেকেটিং অপারেটর আ. মজিদ প্যাদা চাকরি থেকে অবসরে যান। এতদিনে তার পরিবার আনুতোষিক টাকা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। কিন্তু আজকে আনুতোষিকের ১০লাখ টাকার চেক পেয়ে মজিদ প্যাদার ছেলে মো. জহিরুল ইসলাম আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘এত বছর সংসার চালাতে হিমশিম খেয়েছি। আজকে টাকা পেয়ে দারুন ভাল লাগছে। আশা করি এ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করবো’।

২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি পৌরসভার কঞ্জারভেন্সী শাখার এইচ এম নজরুল ইসলাম মারা যান। তার আনুতোষিকের ১৫ লক্ষ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয় স্ত্রী হামিদা বেগমের কাছে। চেক পেয়ে হামিদা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, ‘টাকার অভাবে ঠিকভাবে স্বামীর চিকিৎসা সঠিকভাবে করতে পারিনি। আজকে টাকা পেলাম অথচ স্বামী নাই। স্বামী থাকলে হয় তো এই টাকা দিয়ে পবিত্র হজ পালন করতে পারতো। আবার চিকিৎসাও করাতে পারতো’।

তিনি আরো বলেন, ‘তখন বর্তমান মেয়র স্যারে অনেক সহযোগিতা করেছেন আর্থিকভাবে যার ঋণ শোধ করার মত নয়। যাই হোক এই টাকা দিয়ে এখন সন্তানকে চাকরি বা ব্যবসায় বসিয়ে দিব’।

হামিদা বেগম জানান, ‘এই পৌরসভায় গত ত্রিশ বছরেও কারো আনুতোষিক টাকা প্রদান করা হয়নি। এই প্রথমবার হয়েছে’।

চেক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ জানান, বর্তমানে পটুয়াখালী পৌরসভায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। এক নতুন পটুয়াখালী বিনির্মান হচ্ছে। আগের পটুয়াখালী শহরের সাথে বর্তমানের কোন মিল নাই। আলোকিত হচ্ছে ফোরলেনের রাস্তাসহ একাধিক লেক। কিন্তু এতসব উন্নয়নের মাঝেও এই পৌরসভার সাবেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভাল থাকবে না, তাদের বকেয়া পরিশোধ না করতে পারলে এই উন্নয়নের কোন মূল্য থাকবে না। সেদিক থেকে নিজের বিবেককে কাজে লাগিয়ে পৌরসভার ফান্ড থেকেই সাবেক কর্মকর্তা কর্মচারীদের আনুতোষিক টাকার চেক হস্তান্তর করা হলো। বাবি যারা আছেন অথবা আজকে যারা চেক পেয়েছেন তাদের আরো যে পরিমান বকেয়া আছে আগামী কোরবানীর আগে সেই বকেয়া সব পরিশোধ করা হবে ইনশাআল্লা।

তিনি আরো বলেন, পৌরসভার নিজস্ব যে ফান্ড আছে সেখান থেকেই এই আনুতোষিক টাকা প্রদান করা যায়। কিন্তু এত বছরে আগের মেয়র সাহেবরা কেন তাদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেনি তা আমার বোধগম্য নয়। পৌরসভার ফান্ডের টাকা দিয়ে পৌরসভার সাবেক কর্মকর্তা কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধ করা যদি না হয় তাহলে এর চেয়ে মন্দ কাজ আর কিইবা হতে পারে।

মেয়র বলেন, আগে এই পৌরসভায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা পর্যন্ত মাসের পর মাস বন্ধ থাকতো। কিন্তু গত চার বছরে একদিনের জন্যও কিন্তু কারও কোন বেতন বন্ধ থাকেনি। এগুলো আমি কিন্তু নিজের পকেটের টাকা দিয়ে পরিশোধ করিনি পৌরসভার ফান্ড থেকেই পরিশোধ করিছি।

পৌরসভার কাউন্সিলর ও পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট কাজল বরণ দাসের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হৃদয়, প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর মো. ফারুক হোসেন, প্রেসক্লাবের সদস্য জালাল আহমেদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে পৌরসভার সকল কাউন্সিলর ও চেক পাওয়া পৌরসভার সাবেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App