×

সাহিত্য

বই মেলায় বসন্তের রঙ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:০২ পিএম

বই মেলায় বসন্তের রঙ

ফাইল ছবি

শীতের বিদায় আর বসন্তের আগমনে প্রাণের এই মেলা হয়ে ওঠে ফাগুন ছোঁয়া। শুধু মেলায় এসে বই কেনায় নয় অনুষঙ্গ হিসেবে থাকে একটা উৎসবমুখতা। বসন্তকাল বাঙালির জীবনে অন্যরকম এক আবেগ নিয়ে আসে। রাঙিয়ে দিয়ে যায় প্রাণ মন। পহেলা ফাগুন ঘিরে তাই অমর একুশে বইমেলা সেজে ওঠে অন্যরকম সাজে। সোমবার বসন্তের আগের দিনে মেলা চত্বরে দেখা গেছে তার রঙ আর সুর। দুপুর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর বাংলা একাডেমির গাছে গাছে কোকিলের কুহূ ডাক মেলায় আগতদের জানান দিলো বসন্ত এসে গেছে। আর মাঘের শেষবেলায় ঝিরঝিরে পাতা ঝরার শব্দের মতো গতকাল দলে দলে বই প্রেমীরা ভিড় জমিয়েছেন বাসন্তী সাজে।

তরুণীদের পরনে বাসন্তী শাড়ি মাথায় টায়রা। মেলার প্রবেশপথে ঢুকতেই টায়রা হাতে দাঁড়িয়ে আছে অনেকেই। কিশোর তরুণদের অনেকেই সেগুলো কিনে নিয়ে মাথায় পরছে। তরুণদের অনেকেই হাতে ফুল জড়িয়েছে। আর তরুণদের রঙিন শার্ট। গোটা মেলা চত্বরই এমন সাজে এসেছেন বইপ্রেমী পাঠকরা। ফাল্গুনের আগের দিনেই যেন অন্যরকম এক দৃশ্য।

মুজিব পিডিয়া প্যাভিলিয়নের সামনে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী ইমিতা, শর্মী, বর্ষা, মৌ, তাসফিয়া, পাখি ও মিলিদের দল বাসন্তী শাড়ি পরে ছবির পোজ দিচ্ছিলেন। তারা বললেন, বইমেলা তো আমাদের প্রাণেরই মেলা। ভাষার মাসে এই মেলা মানে একটা আবেগ। যে ভাষায় আজ আমরা কথা বলছি বই পড়ছি বই লিখছি সেই ভাষা তো এসেছে রক্তের বিনিময়ে। তাই ভাষার মাস আমাদের যেমন আবেগের তেমনি মাতৃভাষা রক্ষার দিনও। এই মাসে আবার পয়লা ফাগুন। অর্থাৎ বসন্তের প্রথম দিন। আবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। সব মিলে এই দিনটির জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করে থাকি। এই দিনে প্রাণে প্রাণে যেমন আবেগ ছড়িয়ে যায় তেমনি ভালোবাসায় আমরা বই কিনি। একটা অন্যরকম অনুভূতি আমাদের ভিতরে কাজ করে।

তরুণ লেখক শামস নূর বলেন, পাঠক আর বইপ্রেমীরা মনে হয় পহেলা ফাগুন থেকেই বই কেনার একটা সময় ধরে রাখে। এই দিনে প্রাণের মেলায় এসে যেমন তারা উচ্ছ্বাসে ভাসে তেমনি আবার পছন্দের বইও কেনে। লেখকরা ওই দিনটিকে বেছে নেয় পাঠকের সঙ্গে মিলনের আনন্দে।

বিভিন্ন স্টলের বই বিক্রেতারা বললেন, পহেলা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালবাসা দিবসে মেলার চেহারা বদলে যায়। দলবেঁেধ আনন্দ করতে দেখা যায়। তবে শুধু প্রাণের উচ্ছ্বাসে মিলনের আনন্দই থাকে না পাশাপাশি বয় ওকে না কাটা হয়। অনেকেই প্রিয়জনদের বই উপহার দেন। প্রিয় বই উপহার দিতে তারা এই দিনটিকে বেছে নেন। তাই পহেলা ফাগুন স্টলে স্টলেও রাঙিয়ে দিয়ে যায়।

রুম্মান নামে এক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, তিনি বিভিন্ন স্টলে দশ বছর ধরে বইমেলায় কাজ করছেন। প্রতি বছরই বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসে বই বিক্রি ও সমাগম অনেক বেশি হয়ে থাকে। এবারো প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাবে। পর পর দুই বছর করোনার কারণে অনেকে সতস্ফূর্তভাবে মেলায় আসতে পারেনি। তারা এবার মেলায় আসবে।

জানতে চাইলে সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ বলেন, বইমেলা জমে উঠেছে। বিশেষ করে শুক্রবার ছুটির দিন থেকেই। এটা আশার কথা। মেলার চিরাচরিত রূরে ফিরে আসতে শুরু করেছে। বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসে মেলা পুরোপুরি চেনা অবয়বে ফিরে আসবে।

মূলমঞ্চের আয়োজন: বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: আবদুল গাফফার চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হারিসুল হক এবং অপূর্ব শর্মা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আবেদ খান।

প্রাবন্ধিক বলেন, আবদুল গাফফার চৌধুরী দীর্ঘজীবী কর্মবীর ব্যক্তিত্ব। তার প্রধান পরিচয় সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে। উভয় ক্ষেত্রে তার হাতে ছিল কলম যা অপূর্ব আলোর ঝলকানিতে জ্বলে উঠেছিল বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের পর। আবেগ ও উপলব্ধির মিশেল ঘটিয়ে তিনি এমন এক কবিতা লিখেছিলেন যা ছুঁয়ে গিয়েছিল জাতির অন্তর, আলতাফ মাহমুদের সুরে একুশের প্রভাতফেরিতে গীত হয়ে যুগিয়েছিল জাগরণের বাণীমন্ত্র। সেই থেকে তার কলম নানা সন্ধিক্ষণে সমাজের চিন্তাস্রোতকে প্রভাবিত করেছে, মানুষকে আলোড়িত করেছে, বাঙালিকে করেছে জাতিচেতনায় সংহত।

আলোচকরা বলেন, বাঙালির ভাষা আন্দোলন নিয়ে বহু গান রচিত হলেও সাংবাদিক, কবি, কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি সকল বাঙালির মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। পেশাগত জীবনে সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রাণের আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন লেখালেখিতে। আজীবন তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেছেন ও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছে।

সভাপতির বক্তব্যে আবেদ খান বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জীবন ও কর্ম অনেক বিস্তৃত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের মহীরূহদের একজন। যে আদর্শ ও সৃজনশীলতা নিয়ে আবদুল গাফফার চৌধুরী সাংবাদিকতা করেছেন তা আমাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।

আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শাহনাজ মুন্নী, তসিকুল ইসলাম, দন্ত্যস রওশন ও মামুন রশীদ।

আলোচনা শেষে কবিতা পাঠ করেন শাহনাজ মুন্নী, ওবায়েদ আকাশ, সাকিরা পারভীন, হানিফ খান ও জিললুর রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নাসিমা খান বকুল ও জয়ন্ত রায়। সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল ঝর্ণা আলমগীরের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’, সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘জলতরঙ্গ ডান্স কোম্পানী’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন মো. খালেদ মাহমুদ মুন্না, অনন্যা আচার্য্য, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, মো. রেজওয়ানুল হক, ফারহানা শিরিন, শরণ বড়ুয়া ও নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App